ভুল_সংশোধনের_পদ্ধতি

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:২৬:৪১ রাত

#মানুষকে_ভুল_সংশোধনের_পদ্ধতি

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا بَلَغَهُ عَنِ الرَّجُلِ الشَّيْءُ لَمْ يَقُلْ: مَا بَالُ فُلَانٍ يَقُولُ؟ وَلَكِنْ يَقُولُ: مَا بَالُ أَقْوَامٍ يَقُولُونَ كَذَا وَكَذَا؟

#বাংলা: আয়িশাহ (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কোনো ব্যক্তি কোনো বিষয়ে জানানো হলে তিনি এভাবে বলতেন নাঃ তার কী হলো যে, সে একথা বলে? বরং তিনি বলতেনঃ লোকজনের কী হলো যে, তারা এই এই বলে! (সুনানে আবু দাউদ:৪৭৮৮)

#আলোচনা: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন উম্মাতের শিক্ষক ও অভিভাবক। মানুষের অনুভূতি ও অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। কারো থেকে কোনো ভুল বা অপরাধ সংগঠিত হলে তিনি সরাসরি তাকে বাক্যবাণে আক্রমণ বা ব্যক্তিগত সংশোধনের কথা না বলে সামগ্রিকভাবে বিষয়টি তুলে ধরে ভুল সংশোধন ও সঠিক বিষয় উপস্থাপন করতেন। আল্লাহ বলেন-

"ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন করো, সত্য-সঠিক কাজের আদেশ দাও আর জাহিলদেরকে এড়িয়ে চলো" (সূরা আরাফ, ৭:১৯৯)

আলোচ্য হাদীসের মাধ্যমে বুঝতে পারি, ভুলকারীর নাম না উল্লেখ করে তিনি বলতেন, লোকেরা কেন এটা করলো? লোকদের কী হলো? তিনি ব্যক্তিগত ভাবে কাউকে লজ্জিত করতেন না বা অবমাননা স্বরূপ কিছু বলতেন না।

এটা রাসূলুল্লাহর সুমহান আদর্শ! তিনি তার উম্মাতকে এই শিক্ষাই দিতেন, অপরের ভুল কী ভাবে ধরতে হয় এবং কিভাবে সংশোধন করতে হয়।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতিপয় সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণীদের নিকট তার গোপন ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তাদের মধ্যে কেউ বললেন, আমি কখনও বিয়ে করব না, কেউ বললেন, আমি কখনও গোশত খাব না, কেউ বললেন, আমি কখনও বিছানায় ঘুমাব না। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করলেন এবং বললেনঃ “লোকদের কী হলো যে, তারা এরূপ এরূপ বলছে? অথচ আমি তো সালাতও আদায় করি আবার নিদ্ৰাও যাই, সাওম পালন করি এবং ইফতারও করি এবং বিয়েও করেছি। অতএব যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে আমার কেউ নয়।" (মুসলিম:১৪০১)

আয়িশাহ (রা.) থেকে বর্ণিত অপর হাদীস- তিনি বলেন, লোকজন তাদের বাড়ি-ঘর থেকে এবং মাদীনার উপকণ্ঠ থেকে জুমুআর সালাত আদায় করতে আসত। তারা আবা (এক প্রকার ঢিলা পোশাক) পরিধান করে আসত এবং তাতে ময়লা লেগে যেত। এতে তাদের দেহ নিৰ্গত ঘাম থেকে দুর্গন্ধ ছড়াত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ "তোমরা যদি তোমাদের দিনটিতে অধিক পবিত্রতা অর্জন করতে" (মুসলিম:৮৪৭)

#ভুল_সংশোধনের_পদ্ধতি

১. ভুলকারীর নয় ভুলের সমালোচনা:

ব্যক্তির ভুল না ধরে, নির্দিষ্ট কারো নাম না নিয়ে ভুলটির ব্যাপারে আলোচনা করা। মানুষের কাছে ভুলকে উপস্থাপন করা দলীল ও যুক্তিভিত্তিক। ভুলকে পরিহার করে সঠিকটি গ্রহণ করার জন্য মানুষকে উপদেশ দেয়া।

আনাস ইবনু মালিক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লোকদের কী হলো যে, তারা সালাতে আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকায়? এ ব্যাপারে তিনি কঠোর বক্তব্য রাখলেন; এমনকি তিনি বললেনঃ যেন তারা অবশ্যই এ হতে বিরত থাকে, অন্যথায় অবশ্যই তাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেয়া হবে। (বুখারী:৭৫০)

২. প্রজ্ঞার সাথে সুন্দর উপস্থাপনা: কারো নাম না নিয়েও ভুলকারীকে কঠিন, রূঢ় ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। ইসলামে গালিগালাজ ও অভিসম্পাত করা নিষিদ্ধ। মার্জিত শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে ভুলকারীর ভুলকে তুলে ধরতে হবে। আল্লাহ বলেন-

"মন্দকে প্রতিহত করো তা দ্বারা যা উৎকৃষ্টতর, ফলে তোমার ও যার মধ্যে শত্রুতা রয়েছে সে যেন হয়ে যাবে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু।" (সূরা ফুসসিলাত, ৪১:৩৪)

৩. তর্ক বা কলহ পরিহার: কখনোই ভুল নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না, মানুষকে সুন্দর ভাবে বিষয়টি বুঝাতে হবে, তারপর গ্রহণ-পরিহারের ব্যপার নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না। উম্মাতকে ঐক্যবদ্ধের দাওয়াত দিতে হবে। আল্লাহ বলেন-

"তুমি মানুষকে তোমার রবের পথে আহবান কর হিকমাত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে বিতর্ক করো সুন্দরভাবে। তোমার রাব্ব ভাল করেই জানেন কে তাঁর পথ ছেড়ে বিপথগামী এবং কে সৎ পথে আছে। (সূরা নাহাল, ১৬:১২৫)

৪.পরমত_সহিষ্ণুতা: একজন মুমিন সব সময় পরমত সহিষ্ণু হবেন বিশেষ করে যারা দাওয়াতি কাজ করেন ও জনগণের নেতৃত্ব দেন তাদের জন্য এটা জরূরী।

৫. রাসূলুল্লাহর ভাষা ব্যবহার: রাসূল যেটাকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন সেভাবেই বিষয়টি তুলে ধরতে হবে। যেখানে অনির্দিষ্টজ্ঞাপক শব্দ ব্যবহার আমরাও সেখানে অনির্দিষ্টজ্ঞাপক শব্দ ব্যবহার করবো। যেমন- কেউ ফরয সালাত ত্যাগ করলে, বা রোযা না রাখলে তাকে সরাসরি বলবো না, তুমি কুফুরি করেছো। বলবো- "যারা ইচ্ছাকৃত সালাত ত্যাগ করে তারা কুফুরি করে" (সহীহ আত তারগীব: ৫৭৫)

তেমনি ভাবে যে সুদ গ্রহণ করে বা সুদ দেয়, উল্কি আঁকায় কিংবা প্রাণীর চিত্রাঙ্কণ করে তাদের বলবো না, তোমার উপর লা'নত, রাসূলের লানত, বরং বলবো যারা এগুলো করে তাদের উপর রাসূলের লানত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নাত করেছেন উল্কি অঙ্কণকারিণী, উল্কি গ্রহণকারিণী, সুদ গ্রহিতা ও সুদ দাতাকে। তিনি কুকুরের মূল্য ও পতিতার উপার্জন ভোগ করতে নিষেধ করেছেন। চিত্রাঙ্কণকারীদেরকেও তিনি লা‘নাত করেছেন। (বুখারী:৫৩৪৭)

৬. গোপনীয় দোষ বা ভুল সন্ধান না করা: কারো গোপনীয় দোষ অনুসন্ধান করা যাবে না, যেটা প্রকাশিত হয় সেই ব্যাপারেই শুধু সঠিক পদ্ধতিতে সংশোধন করতে হবে। নিয়মতান্ত্রিক ভাবে শাস্তি আরোপিত হবে। (দ্রষ্টব্য: মুসলিম:২৫৬৩, আবু দাউদ:৪৮৮৮, আদাবুল মুফরাদ:৩৩১)

একদিন এক ব্যক্তিকে ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর নিকট এনে বলা হলো, এই সেই লোক যার দাড়ি থেকে মদ টপকে পড়ছে। আব্দুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আমাদের জন্য গোয়েন্দাগিরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু যদি প্রকাশ্যে কোনো অন্যায় আমাদের সামনে ধরা পড়ে তাহলে এর জন্য আমরা তাকে ধরবো। (আবু দাউদ:৪৮৯০)

৭. ব্যক্তিগত ভুলের জন্য নির্জনে ভুলকারীকে সংশোধনের পরামর্শ: মানুষের সামনে কারো ভুল না ধরে বরং ভুলকারীকে একান্তে বিষয়টি বুঝাতে হবে।

#বর্ণনাকারী: উহম্মুল মুমিনীন আয়িশাহ (রা.)

#মান: সহীহ

#গ্রন্থ: সুনানে আবু দাউদ,শিষ্টাচার অধ্যায়, হা:৪৭৮৮, বাইহাকীর শু'আবুল ঈমান:৮০৯৯, আল ওয়াদি'ঈর সহীহুল মুসনাদ:১৬১২, শরহে মুশকিলুল আসার:৫৮৮১, জামিউস সগীর:৬৫৯৫, সহীহ আল জামে':৪৬৯২, সিলসিলাতুস সহীহাহ:২০৬৪

#সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম

#দরসে_হাদীস

বিষয়: বিবিধ

৫২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File