সুখ-সম্মৃদ্ধ জীবনের পথে-৮

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১১:৩১:৩৬ রাত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার অপরাধ



পরস্পরের সাথে চুক্তিবদ্ধ বা ওয়াদাবদ্ধ হলে সেই চুক্তি বা প্রতিশ্রুতি পূরণ মুসলমানদের উপর ফরয। চুক্তি বা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা বড় ধরণের গোনাহ। মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক সুসংহত ও শান্তি বজায় রাখতে চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

আল্লাহ বলেন-

“আর প্রতিশ্রুতি পালন করো; নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে”। (সূরা ১৭ ইসরা: ৩৪)

প্রতিশ্রুতি’ বা অঙ্গীকার বলতে সেই অঙ্গীকার যা আল্লাহ ও বান্দাদের মধ্যে রয়েছে এবং সেই অঙ্গীকারও যা বান্দাগণ আপোসে একে অপরের সাথে করে থাকে। উভয় অঙ্গীকার পূরণ করা জরুরী। পক্ষান্তরে প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করলে কাল কিয়ামতে জিজ্ঞাসিত হতে হবে এবং সে ব্যাপারে কৈফিয়ত দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন-

হে ঈমানদারগণ! তোমরা চুক্তিসমূহ পূর্ণ কর। (সূরা ৫ মায়েদাহ: ১)



অন্য আয়াতে বলেন-

“তোমরা যখন পরস্পর অঙ্গীকার কর, তখন আল্লাহর অঙ্গীকার পূরণ করো— ( সূরা ১৬ নাহল: ৯১)



ওয়াদা ভঙ্গ করা মুনাফিকের লক্ষণ



আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন: ‘‘চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে সে খাঁটি মুনাফিক গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তির মাঝে তার মধ্য হতে একটি স্বভাব থাকবে, তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকদের একটি স্বভাব থেকে যাবে। [সে স্বভাবগুলি হল]- ১। তার কাছে আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে। ২। কথা বললে মিথ্যা বলে। ৩। ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং ৪। ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীল ভাষা বলে।’’ (বুখারী:৩৪ ও মুসলিম:৫৮)

বিশ্বাসঘাতকতার পতাকা:



ইবনে মাসঊদ, ইবনে উমার ও আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তাঁরা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিনে প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য একটি করে [বিশেষ] পতাকা নির্দিষ্ট হবে। বলা হবে যে, এটা অমুক ব্যক্তির [বিশ্বাসঘাতকতার] প্রতীক।’’ (বুখারী: ৩০১৬ , মুসলিম: ১৭৩৬-৩৭)

আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিনে প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের পাছায় একটা পতাকা থাকবে, যাকে তার বিশ্বাসঘাতকতা অনুপাতে উঁচু করা হবে। জেনে রেখো!শাসকের চেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতক আর অন্য কেউ হতে পারে না।’’ (মুসলিম:১৭৩৮)

পুনশ্চ: আমীর/ শাসকরা জনগণের দায়িত্বপ্রাপ্ত। তাদের দায়িত্ব ব্যাপক। সবার মাঝে ন্যায়বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে। জনগণের অধিকার আদায় না করা এবং তাদের উপর অসহনশীল আচরণ করাই তাদের ধোঁকাবাজী তথা বিশ্বাসঘাতকতা।



আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: মহান আল্লাহ বলেছেন-

‘‘তিন প্রকার লোক এমন আছে, কিয়ামতের দিন যাদের প্রতিবাদী স্বয়ং আমি; [১] সে ব্যক্তি, যে আমার নামে অঙ্গীকারাবদ্ধ হল, পরে তা ভঙ্গ করল। [২] সে ব্যক্তি, যে স্বাধীন মানুষকে [প্রতারণা দিয়ে] বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করল। [৩] সে ব্যক্তি, যে কোন মজুরকে খাটিয়ে তার নিকট থেকে পুরাপুরি কাজ নিল, কিন্তু তার মজুরী দিল না।’’ (বুখারী: ২১১৪)

সফলপ্রাপ্ত মুমিনের গুণাবলী বর্ণনা করতে আল্লাহ সূরা মুমিনুনে বলেন-

‘এবং যারা আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।’ ( সূরা ২৩ মুমিনুন: ৮)



এখানে- ‘আমানত রক্ষা করা’ বলতে অর্পিত কর্তব্য পালন করা, গুপ্ত কথা ও মালের আমানতের হিফাযত করা। আর ‘প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা’ বলতে আল্লাহর সঙ্গে কৃত ও মানুষের সঙ্গে কৃত ওয়াদা, অঙ্গীকার ও চুক্তি পূরণ সবই শামিল।

অন্য আয়াতে তিনি বলেন-

“অবশ্যই যে তার অঙ্গীকার পালন করে এবং সংযত হয়ে চলে, নিশ্চয় আল্লাহ সংযমীদেরকে ভালবাসেন।” ( সূরা আলে ইমরান ৩: ৭৬)



প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার কারণে বনী ইসরাইলের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-

“তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের দরুন আমি তাদেরকে অভিসম্পাত করেছি ও তাদের হৃদয় কঠোর করে দিয়েছি”—– ( সূরা ৫ মায়িদা: ১৩)



আমনত রক্ষা করা:



মানুষ যত দ্বীন থেকে দূরে সরে যাবে এবং আমানতের খেয়ানত করবে বিশ্ব সমাজ ব্যবস্থায় তত বেশী অশান্তি ও বিপর্যয় নেমে আসবে। আর এজন্যই ইসলাম আমানতের প্রতি এত গুরুত্ব দিয়েছে। কেবল দুনিয়ায় বিপর্যয় নয়, এর জন্য রয়েছে আখেরাতে মর্মান্তিক শাস্তি। আর আমানত রক্ষার বিনিময়ে রয়েছে সম্মান ও চিরস্থায়ী ঠিকানা জান্নাত।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

‘আর যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, আর যারা তাদের সাক্ষ্য দানে অটল এবং নিজেদের ছালাতে যত্নবান তারা সম্মানিত হবে জান্নাতে’ (সূরা মা‘আরিজ ৭০:৩২-৩৫)।

“আর যে কেউ কিছু আত্মসাৎ করবে, সে তার আত্মসাৎ করা বস্তু নিয়ে কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে।” ( সূরা ৩ আলে ইমরান: ১৬১)



আবু যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাকে কোন দায়িত্বে নিয়োগ করবেন না? তখন তিনি আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন, হে আবু যার! তুমি দুর্বল মানুষ। আর এটা হচ্ছে এক (বিরাট) আমানত। আর এ নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব ক্বিয়ামতের দিন লাঞ্ছনা-গঞ্জনার কারণ হবে। অবশ্য যে হক সহকারে এটাকে গ্রহণ করে এবং এ দায়িত্ব গ্রহণের ফলে তার উপর অর্পিত দায়-দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে তার কথা আলাদা’।(মুসলিম: ১৮২৫; মিশকাত : ৩৬৮২)

বি.দ্র.:

আমানতের খেয়ানত করা কবীরা গোনাহ, যা তওবা ব্যতীত মাফ হবে না। আর সে খেয়ানত যদি আল্লাহ তা‘আলার হক সংশ্লিষ্ট হয়, যেমন ছালাত আদায় না করা, কাফফারা না দেয়া, রামাযানের ছিয়াম পালন না করা, অনুরূপ আরো আল্লাহর হক সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি আদায় করা না হ’লে তাঁর কাছে তওবা করতে হবে অধিক পরিমাণে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। আর আমানতের খেয়ানত যদি বান্দার কোন হক সংশ্লিষ্ট হয় তাহ’লে তা তৎক্ষণাৎ আদায় করা। যেমন গচ্ছিত রাখা কারো সম্পদ খেয়ানত করলে তা ফেরত দেয়া অথবা তার থেকে মাফ করে নেওয়া।

চলবে…

বিষয়: সাহিত্য

৪৫৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386382
২৯ জানুয়ারি ২০১৯ দুপুর ০২:০৩
আবদুল কাদের হেলাল লিখেছেন : জাযাকাল্লাহখায়ে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File