সুখ-সম্মৃদ্ধ জীবনের পথে:৯

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ০২:০৮:৫৩ রাত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

দান/অনুগ্রহ করে খোঁটা দেয়া হারাম

কাউকে কিছু দান করে বা কোনো প্রকার উপকার করে তা লোকদের মাঝে প্রচার ও প্রকাশ করা খুবই গর্হিত কাজ। এতে যাকে উপকার করা হলো তার মনে কষ্ট দেয়া হয়, পরস্পরে বিভেদ ও দূরত্ব সৃষ্টি হয়। সর্বোপরি 'দান বা সাহায্য' করার এই নেক আ'মলটা লোক দেখানো হয়, আর লোক দেখানো আমল আল্লাহর কাছে গ্রহনীয় নয়।

আল্লাহ বলেন-

'যারা আল্লাহর পথে আপন ধন ব্যয় করে অতঃপর যা ব্যয় করে, তার কথা বলে বেড়ায় না [এবং ঐ দানের বদলে কাউকে] কষ্টও দেয় না, তাদের পুরস্কার রয়েছে তাদের প্রতিপালকের নিকট, বস্তুতঃ তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না'। (সূরা ২ বাকারাহ:২৬২ )



পুনশ্চ: আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় বা দান করার উল্লিখিত ফযীলত কেবল সেই ব্যক্তিই লাভ করবে, যে স্বীয় সম্পদ দান করে অনুগ্রহ প্রকাশ করবে না এবং সে মুখ দিয়ে এমন কোন তুচ্ছ বাক্যও বের করবে না, যা কোন গরীব-অভাবীর সম্মানে আঘাত হানে এবং সে তাতে ব্যথা অনুভব করে। পরের আয়াতে আল্লাহ বলেন-

'যে দানের পশ্চাতে (যাচ্ঞাকারীকে) কষ্ট দেওয়া হয়, তার চেয়ে (তাকে) মিষ্টি কথা বলা এবং ক্ষমা করা উত্তম। আর আল্লাহ অভাবমুক্ত, পরম সহনশীল। (সূরা ২ বাকারাহ: ২৬৩)

পুনশ্চ:

সাহায্যপ্রার্থী বা ভিক্ষুকের সাথে নম্রভাবে ও দয়ামাখা স্বরে কথা বলা অথবা দু’আ-বাক্য (আল্লাহ তাআ’লা তোমাকে ও আমাকে তাঁর অনুগ্রহ ও করুণা দানে ধন্য করুন! ইত্যাদি) দ্বারা তাকে উত্তর দেওয়াই হল ‘মিষ্টি বা উত্তম কথা’। আর ‘ক্ষমা করা’র অর্থ হল- ভিক্ষুকের অভাব-অনটন ও তার প্রয়োজনের কথা মানুষের সামনে প্রকাশ না করে তা গোপন করা। অনুরূপ ভিক্ষুকের মুখ দিয়ে যদি কোন অনুচিত কথা বেরিয়ে যায়, তা ক্ষমা করে দেওয়াও এর আওতাভুক্ত।

আল্লাহ আরো বলেন-

'হে ঈমানদারগণ! দানের কথা প্রচার করে এবং কষ্ট দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে নষ্ট করে দিও না।' (সূরা ২ বাকারাহ: ২৬৪)



সাদাকা-খয়রাত করে অনুগ্রহ প্রকাশ করা (বা বলে বেড়ানো) এবং (খোঁটা মেরে) কষ্টদায়ক বাক্যালাপ ঈমানদারদের অভ্যাস নয়, বরং তা হল মুনাফেক ও তাদের অভ্যাস, যারা লোক প্রদর্শনের জন্য ব্যয় করে।

আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘‘কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। আর তাদের জন্য হবে মর্মন্তুদ শাস্তি।’’ বর্ণনাকারী বলেন, এরূপ তিনি তিনবার বললেন। তখন আবূ যার্র বললেন, ‘ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হোক, তারা কারা হে আল্লাহর রাসূল?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

‘‘যে পায়ের গোড়ালির নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরে, দান করে যে প্রচার করে বেড়ায় এবং মিথ্যা কসম খেয়ে নিজের পণ্যদ্রব্য বিক্রি করে।’’ (মুসলিম:১০৬, তিরমিযী: ১২১১, আবূ দাউদ: ৪০৮৭, নাসাঈ: ২৫৬৫-৬৬, ইবনে মাজাহ: ২২০৮)

সালিম-এর পিতা আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিন বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাকবেন না (রহমতের দৃষ্টিতে দেখবেন না।) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, পুরুষের বেশধারী নারী এবং দায়ুছ (নিজ স্ত্রীর পাপাচারে যে ঘূণাবোধ করে না।) আর তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।--পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, মাদকাসক্ত ব্যক্তি (যে মদ্যপ তাওবা ছাড়া মৃত্যুবরণ করে) এবং দানকৃত বস্তুর খোঁটা দানকারী ব্যক্তি (দান করার পর যে দানের উল্লেখ করে গঞ্জনা দেয়।) (সুনানে নাসাঈ: ২৫৬৪)

আত্ম-অহঙ্কার, সীমালঙ্ঘন ও বিদ্রোহাচরণ করা নিষেধ



নিজের দৈহিক, আর্থিক ও পারিপার্শ্বিক এবং কর্ম অবস্থার উন্নতিতে নিজেকে বড় বলে মনে করা, বাড়াবাড়ি করা, সীমালঙ্ঘন করা ইসলামে অবৈধ।

আল্লাহ বলেন-

'তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না। তিনিই সম্যক জানেন আল্লাহ-ভীরু কে'। (সূরা ৫৩ নজম: ৩২)



কেবল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের ওপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অহেতুক বিদ্রোহাচরণ করে বেড়ায়। তাদের জন্যই রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। (সূরা ৪২ শূরা: ৪২)



ইয়ায ইবনে হিমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মহান আল্লাহ আমাকে প্রত্যাদেশ করেছেন যে, তোমরা পরস্পরের প্রতি নম্রতা ও বিনয় ভাব প্রদর্শন কর। যাতে কেউ যেন অন্যের প্রতি অত্যাচার না করতে পারে এবং কেউ কারো সামনে গর্ব প্রকাশ না করে।’’ (মুসলিম: ২৮৬৫, আবূ দাউদ: ৪৮৯৫)

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি [গর্বভরে] বলে, লোকেরা সব ধ্বংস হয়ে গেল, সে তাদের মধ্যে সর্বাধিক বেশি ধ্বংসোন্মুখ।’’ (মুসলিম:২৬২৩)

ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, মালিক (রহঃ) বলেছেন, সে যদি ধর্মীয় বিষয়ে মানুষের অবনতি লক্ষ্য করে দুঃখে একথা বলে তাহলে আমার মতে তা দূষণীয় নয়। কিন্তু সে আত্মগর্বী হয়ে এবং লোকজনকে তুচ্ছজ্ঞান করে একথা বললে তা হবে জঘন্য আচরণ, যা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। (দ্রষ্টব্য: সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৮৩)

অর্থ্যাৎ, যে গর্বভরে সকলকে অবজ্ঞা করে ও নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ ভেবে ঐ কথা (লোকেরা ধ্বংস হয়ে গেছে) বলে- এটাই হল হারাম। কিন্তু কোন ব্যক্তি যদি লোকদের মধ্যে দ্বীনদারীর অভাব প্রত্যক্ষ করে দ্বীনী আবেগের বশীভূত হয়ে দুঃখ প্রকাশ করার মানসে ঐ কথা মুখ থেকে বের করে, তাহলে তাতে কোন ক্ষতি নেই।

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কোন মুসলিমের জন্য এ কাজ বৈধ নয় যে, তার কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে তিন দিনের ঊর্ধ্বে কথাবার্তা বন্ধ রাখবে। সুতরাং যে ব্যক্তি তিন দিনের ঊর্ধ্বে কথাবার্তা বন্ধ রাখবে এবং সেই অবস্থায় মারা যাবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’’ (আবূ দাঊদ: ৪৯১৪)

আবূ খিরাশ আস-সুলামী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ যে তার ভাইয়ের সঙ্গে এক বছর সম্পর্ক ছিন্ন রাখলো সে যেন তাকে হত্যা করলো। (আবু দাউদ: ৪৯১৫)

তৃতীয়জনের উপস্থিতিতে দুজনের কানাকানি নিষেধ

কোনো স্থানে একত্রে তিনজন থাকলে, একজনকে ছেড়ে তার অনুমতি না নিয়ে দু’জনে কানাকানি করা [বা প্রথম ব্যক্তিকে গোপন করে কোন কথা বলাবলি করা] নিষেধ।

ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন [কোন স্থানে] একত্রে তিনজন থাকবে, তৃতীয়-জনকে ছেড়ে যেন দু’জনে কানাকানি না করে।’’ (বুখারী: ৫৯৩০ ও মুসলিম: ২১৮৩)

হাদীসটি আবু দাউদে এসেছে-

আব্দুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’ ব্যক্তি যেন তাদের অপর (তৃতীয়) সঙ্গীকে (একা) রেখে চুপি চুপি কথা না বলে। কারণ তা তাকে দুঃশ্চিন্তায় ফেলতে পারে। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৮৫১)

আবূ সালিহ (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু উমার (রাঃ)-কে বললাম, চার ব্যক্তি হবে? তিনি বললেন, তবে তোমার কোনো ক্ষতি নেই। (আবু দাউদ: ৪৮৫২)

ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন [একত্রে] তিনজন থাকবে, তখন লোকদের সঙ্গে মিলিত না হওয়া অবধি একজনকে ছেড়ে দু’জনে যেন কানাকানি না করে। কারণ, এতে [ত্যক্ত ব্যক্তিকে] মনঃকষ্টে ফেলা হবে।’’ (বুখারী: ৫৯৩২, মুসলিম: ২১৮৪)

আবদুল্লাহ ইবন দীনার (রহঃ) বলেন, আমি ও আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) খালিদ ইবন উকবা (রাঃ)-এর সেই ঘরের নিকটে ছিলাম যাহা বাজারে অবস্থিত ছিল। ইত্যবসরে এক ব্যক্তি আসিয়া তাহার সহিত কানে কানে কিছু কথা বলিতে ইচ্ছা করিল। আবদুল্লাহ (ইবনে উমর)-এর সঙ্গে আমি ও সেই ব্যক্তি ব্যতীত, যে তাহার সহিত কানে কানে কথা বলিতে চাহিয়াছিল, আর কেহ ছিল না। অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) অপর এক ব্যক্তিকে ডাকিয়া লইলেন। এখন আমরা চারিজন হইলাম এবং তিনি আমাকে ও সেই ব্যক্তিকে একটু সরিয়া যাইতে বললেন, যাহাকে ডাকিয়া লইয়াছিলেন এবং বলিলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নিকট শ্রবণ করিয়াছি, তিনি বলিয়াছেন, দুইজন একজনকে একা ছাড়িয়া কানে কানে কথা বলিবে না। ইহাতে তৃতীয় ব্যক্তি দুঃখিত হয়। (দ্রষ্টব্য: মুওয়াত্তা মালিক: ১৮৫৪)

বিনা কারণে আপন দাস/ চাকর বা সন্তানদের মারা নিষেধ



আবূ মাসঊদ বাদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা আমার একটি গোলামকে চাবুক মারছিলাম। ইত্যবসরে পিছন থেকে এই শব্দ শুনতে পেলাম ‘জেনে রেখো, হে আবূ মাসঊদ!’ কিন্তু ক্রোধান্বিত অবস্থায় শব্দটা বুঝতে পারলাম না। যখন সেই [শব্দকারী] আমার নিকটবর্তী হল, তখন সহসা দেখলাম যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি বলছিলেন, ‘জেনে রেখো আবূ মাসঊদ! ওর উপর তোমার যতটা ক্ষমতা আছে, তোমার উপর আল্লাহ তা‘আলা আরও বেশি ক্ষমতাবান।’ তখন আমি বললাম, ‘এরপর থেকে আমি আর কখনো কোন গোলামকে মারধর করব না।’

এক বর্ণনায় আছে, তাঁর ভয়ে আমার হাত থেকে চাবুকটি পড়ে গেল। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ওকে স্বাধীন করে দিলাম।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘শোন! তুমি যদি তা না করতে, তাহলে জাহান্নামের আগুন তোমাকে অবশ্যই দগ্ধ অথবা স্পর্শ করত।’’ (মুসলিম: ১৬৫৯, তিরমিযী: ১৯৪৮, আবূ দাউদ: ৫১৫৯)

ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি নিজ গোলামকে এমন অপরাধের সাজা দেয়, যা সে করেনি অথবা তাকে চড় মারে, তাহলে তার প্রায়শ্চিত্ত হল, সে তাকে মুক্ত করে দেবে।’’ (মুসলিম:১৬৫৭, আবূ দাউদ: ৬১৬৮, আহমাদ: ৪৭৬৯)

‌ঋণ আদায়ে টালবাহনা করা অবৈধ

পাওনাদারের পাওনা আদায়ে ধনী ব্যক্তির (যার সামর্থ্য হয়েছে) টাল-বাহানা করা ইসলামে হারাম।

আল্লাহ বলেন-

'যদি তোমরা পরস্পর পরস্পরকে বিশ্বাস কর, তাহলে যাকে বিশ্বাস করা হয় [যার কাছে আমানত রাখা হয়] সে যেন [বিশ্বাস বজায় রেখে] আমানত প্রত্যর্পণ করে এবং তার প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করে'। (সূরা ২ বাকারাহ: ২৮৩)



আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, আমানত তার মালিককে প্রত্যর্পণ করবে। (সূরা নিসা: ৫৮)



আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, ‘‘ধনী ব্যক্তির [ঋণ আদায়ের ব্যাপারে] টাল-বাহানা করা অন্যায়। আর তোমাদের কাউকে যখন কোন ধনী ব্যক্তির হাওয়ালা করে দেওয়া হবে, তখন তার উচিত, তার অনুসরণ করা।’’ [অর্থাৎ তার কাছে ঋণ তলব করা।] (বুখারী: ২১৬৬ ,মুসলিম: ১৫৬৪)

জাবির (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মারা গেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে তার জানাযা পড়তেন না। একদা তাঁর নিকট একটি লাশ আনা হলে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তার উপর কোনো ঋণ আছে কি? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ, দু’ দীনার ঋণ আছে। তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জানাযা আদায় করো। তখন আবূ কাতাদাহ আল-আনসারী (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ঋণ পরিশোধের যিম্মা আমি নিলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযা পড়লেন। পরবর্তীতে আল্লাহ যখন তাঁর রাসূলকে বিভিন্ন যুদ্ধে বিজয়ী করলেন, তখন তিনি বললেনঃ আমি প্রত্যেক মু‘মিনের তার নিজের সত্তার চেয়ে অধিক প্রিয়। সুতরাং কেউ ঋণ রেখে মারা গেলে তা পরিশোধের দায়িত্ব আমার। আর কেউ সম্পদ রেখে মারা গেলে তা তার উত্তরাধিকারদের প্রাপ্য। (আবু দাউদ: ৩৩৪৩)

এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন-

"মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে উত্তমরূপে দেনা পরিশোধ করে।" ( দ্রষ্টব্য: আবু দাউদ: ৩৩৪৬, তিরমিযী: ১৩১৮, ইবনে মাজাহ: ২২৮৫)

দ্রষ্টব্য: তবে অভাবী ঋণগ্রস্তকে সময় দেওয়া এবং তার সাথে ভদ্র আচরণ করা ইসলামের সুন্নাত।



আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক অভাবী ঋণগ্রস্তকে সুযোগ প্রদান করে অথবা ঋণ মাফ করে দেয়, কিয়ামাতের দিবসে আল্লাহ্‌ তায়ালা তাকে নিজ আরশের ছায়ায় আশ্রয় প্রদান করবেন, যেদিন তার আরশের ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না। (তিরমিযী: ১৩০৬)

আবূ মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির মধ্যে কোন এক লোকের হিসাব নেওয়া হলে তার কোন ভাল কাজ পাওয়া গেল না। সে ছিল ধনীলোক। সে যখন লোকদের সাথে লেন-দেন করত তখন নিজ গোলামদের হুকুম প্রদান করতঃ অভাবী ঋণগ্রস্তদের সাথে সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ কর। এতে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ আমি ক্ষমা ও সহানুভূতির ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি উপযোগী। অতএব, (হে ফেরেশতাগণ!) তাকে মুক্তি প্রদান কর। (তিরমিযী: ১৩০৭)

চলবে-

সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম

পূর্বতন পর্বের লিঙ্ক-

সুখ-সম্মৃদ্ধ জীবনের পথে-৮

http://www.newsatbd.net/blog/blogdetail/detail/10320/kobitabilash/85211#.XE4DePlKjIU

সুখ-সম্মৃদ্ধ জীবনের পথে-৭

http://www.newsatbd.net/blog/blogdetail/detail/10320/kobitabilash/85204#.XE4EKflKjIU

বিষয়: বিবিধ

৫২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File