একটু সেক্রিফাইস

লিখেছেন লিখেছেন না বলা কথা ২৩ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৯:২০:৪৩ সকাল



‘‘ভোগে নয় ত্যাগেই প্রকৃত সুখ’’ এই কথাটি আমরা প্রত্যেকেই জানি কিন্তু বাস্তবে আমল করেছি কতজন ? আমরা যদি ত্যাগ করা শুরু করি তবে দেখব সত্যিই কত সুখ।

ঢাকা থেকে বাড়ি যাচ্ছি গাড়িতে করে। গাড়ির প্রায় প্রতিটি সিটে একজন করে পুরুষ বসে আছেন। উত্তরা থেকে এক দম্পতি উঠল। পোশাক দেখেই বুঝা যাচ্ছে নতুন বিয়ে হয়েছে। তাই দুজন দুজনকে কাছে পাওয়ার আকাংখা থাকাটাই স্বাভাবিক। এরপর আবার সুন্দরী বউ হলে পাশে বসাতে না পারলে মনটা চিন চিন করে। গাড়িতে উঠার পর একত্রে বসার মত কোন সিট পেল না । ভদ্র লোকটি অনেককে অনুরোধ করলেন কিন্তু কেউ তার সিট ছেড়ে অন্য সিটে গিয়ে বসতে রাজি হলো না। অনেকে মজা করে না কথা বলে ফেললেন। বাধ্য হয়ে দুজনকে আলাদা সিটে বসতে হলো। কিছুক্ষণ পর পর একজন আরেক জনের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকে। তাদের কষ্টটা বুঝতে পেরে আমি আমার সিট থেকে উঠে তাদের একত্রে বসার ব্যবস্থা করলাম। ভদ্র লোকটি আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে তার সহধর্মীনিকে নিয়ে বসে যে তৃপ্তির হাসিটা হাসলেন তখন অমার খুব ভাল লাগল আর তখই আমি বুঝতে পারলাম ত্যাগের প্রকৃত সুখ। এমনি ভাবে প্রতিদিন কেউ মাকে নিয়ে, কেউ বোনকে নিয়ে,কেউ তার সহধর্মীনককে নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। আমরা যদি একটু সেক্রিফাইস করি তবে আমাদের কোন ক্ষতি হবে না কিন্তু কিছু লোকের মুখে হাসি ফুটবে। আবার অনেক সাহসী পুরুষ (?) আছেন যারা গাড়িতে ওঠে মহিলা সিট দখল করে ব্যাপক যুক্তিতর্ক করেন। আমার কথা হলো যুক্তি তর্কের প্রয়োজন নেই মা বোনদের শারীরিক নিরাপত্তার জন্যই তাদের সিট ছেড়ে দেওয়া উচিত। তাহলে হয়তো আপনার মা বা বোনকে অন্য কেউ সিট ছেড়ে দিয়ে বসতে দিবেন।

বিদ্যুৎ বিল দিতে গিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হয় । আমাদের দেশে অধিকাংশ জায়গায় এখনো মহিলাদের জন্য আলাদা কাউন্টার হয়নি। আমি বিল দিতে দাঁড়িয়েছি লাইনে খানিকপর একজন মহিলা এসে লাইনে না দাড়িয়ে কাউন্টারের কাছে চলে গেল তখন সামনে দাড়িয়ে থাকা লোকজন বলতে শুরু করল পেছনে যান নারী পুরুষ সমান অধিকার। নানা রকম মন্তব্যে তিনি কিছুটা লজ্জাবোধ করলেন। তিনি লাইনের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালেন আমি তার বিলটা আমার কাছে নিয়ে বললাম খালাম্মা আপনি বসুন আমি বিলটা দিয়ে দিচ্ছি। উনার বিলটা দিতে হয়তো আমাকে কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে তাতে আমার তেমন কষ্ট হয়নি কিন্তু এই সামান্য ত্যাগের বিনিময়ে যখন তার মলিন মুখটা হাসিতে ভরে উঠল তখনই আমি প্রকৃত সুখ অনুভব করলাম।

দৈনিক বাংলা মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি বাসের অপেক্ষায় । বিকেলে বৃষ্টি হওয়ার কারণে রাসত্মা অনেক জ্যাম আবার অফিস সময় শেষ হওয়ার ফলে নারী পুরুষ সবাই ব্যসত্ম বাসায় ফেরা নিয়ে। বাস থামা মাত্রই মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে গাড়িতে উঠার জন্য। পুরম্নষের শক্তির কাছে নারীরা একদম অসহায় হয়ে পড়ল। কোন মানুষই কোন নারীকে সম্মানতো দুরের কথা বরং সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকার পরও তাদের ধাক্কা দিয়ে আগে গাড়িতে ওঠে যাচ্ছে। আমি এই দৃশ্য অবলোকন করে সিদ্ধান্ত নিলাম কিছু করার জন্য । আমি গাড়ি আসার সাথে সাথে গাড়ির হাতল ধরে কয়েকজন মহিলাকে উঠার ব্যবস্থা করলাম। তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে গাড়িতে উঠল। আমি একার পক্ষ হতে হয়তো সবাইকে তুলে দেওয়া সম্ভব না আমরা সবাই যদি একটু সহযোগীতা করি তবে আমার খেটে খাওয়া বোন গুলোর বেশ উপকার হতো ।

এমনি ভাবে প্রতিদিন নানা কাজে আমরা একটু ত্যাগ স্বীকার করলে হয়তো আমার তেমন কোন ক্ষতি হবে না কিন্তু কিছু মানুষের উপকার হবে অনেক বেশী। একজন মনীষি বলেছেন, ‘‘চল আমর মোমবাতির মত বাঁচি নিজেকে বিলিয়ে অপরকে আলো দিয়ে’’।

বিষয়: বিবিধ

১২৮১ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

357474
২৩ জানুয়ারি ২০১৬ সকাল ১১:৩২
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৩ জানুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০১:৫৬
296605
না বলা কথা লিখেছেন : Good Luck
357476
২৩ জানুয়ারি ২০১৬ দুপুর ১২:১৫
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..


যথার্থ বলেছেন, সহমত


আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
357478
২৩ জানুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০১:৫৬
না বলা কথা লিখেছেন : স্বাগতম
357500
২৩ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:৩১
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ৷
357504
২৩ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:৪৯
আফরা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়ের ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File