নির্বাচন পরবর্তী তিনমাস এবং বিএনপির রাজনীতি

লিখেছেন লিখেছেন মানসুর ১২ এপ্রিল, ২০১৪, ০৫:৫১:২৭ বিকাল

৯০ দিন একটি উল্লেখযোগ্য সময়, কালের বিচারে তা কোয়ার্টার বছর। বাংলাদেশের গত জাতীয় নির্বাচনের পর এরকম উল্লেখযোগ্য একটি কাল অতিবাহিত হয়ে গেছে। বলা হচ্ছিল, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন বিএনপি বর্জন করায় এই সংসদ তথা সরকারের গ্রহনযোগ্যতা দেশে-বিদেশে থাকবেনা। বিএনপি আশা করেছিলো যে, বহির্বিশ্বের মোড়লরা তাদের হয়ে সরকারের সংগে দর কষাকষি করে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে নতুন নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করবে। এছাড়া নির্বাচনের পর পর এই সরকার কতদিন থাকবে, সে নিয়ে আলোচনা ছিলো।

নির্বাচনের পরে তিন মাস পেড়িয়ে গেছে, নতুন নির্বাচিত সরকারের বয়সও তিন মাস হতে চললো। এর মধ্যে সরকার উপজেলা নির্বাচনের মতোন বড় যজ্ঞ সম্পন্ন করেছে। বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছে। এখন এই তিন মাস পরে নতুন সরকারকে নিয়ে কোথাও কোন সংশয়, আলোচনা কিংবা মোড়লদের চাপ দৃশ্যমান নয়। বাংলাদেশের নির্বাচনোত্তর সংস্কৃতিটা এমন যে, নির্বাচন হলো, সরকার হলো, সংসদ হলো। এরপর সরকার সংসদে এবং বিরোধীদল রাস্তায় এবং সংবাদ সম্মেলনে নিজ নিজ অবস্থান গ্রহন করলো। সেই হিসাবে জনগন সংসদে বিরোধীদলের আসন বরাবরই ফাঁকা দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছে এবং সংসদে বিএনপির অনুপস্থিতি কারোই চোখে পড়ছেনা, কেননা তারা রাজপথে না হোক সংবাদ সম্মেলনে ঠিকই টিকে আছেন।

নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে বিএনপি আন্দোলনে ছিলো, সেই আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা তো দূরের কথা কর্মী-সম্পৃক্ততাও ছিলোনা। তারা সন্ত্রাসী ও বোমাবাজদের ভাড়া করে মানুষ পুড়িয়েছেন। ঐ সময়টাতে আন্দোলনের ফলাফলে মানুষের চাহিদাটা সরকারের বিদায়, ত্বত্তাবধায়ক সরকার বা অন্য যে কিছুর চেয়ে আন্দোলনের নামে ঐ অন্যায্য সন্ত্রাস বন্ধের প্রতি বেশী মনোযোগী ছিলো। তাইতো নির্বাচনের পর ওই ধরনের সন্ত্রাস কমে যাওয়ার পরে মানুষ স্বস্তিতে হাঁফ ছেড়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সাধারন মানুষকে যতোটা সংক্ষুব্ধ করেছে তার চেয়ে ঢের বেশী স্বস্তি দিয়েছে। এটাকে রাজনৈতিক চোখে দেখে বিতর্কে টেবিল কাঁপানো গেলেও সরল সত্যি কিন্তু তা-ই। বাংলাদেশের একটি প্রধানতম রাজনৈতিক শক্তি নির্বাচনকে বর্জন করেছে এবং নির্বাচনের পর দেশ সেই নির্বাচনকে মেনে নিয়েছে। এটা বাস্তবতা, এখন বিএনপি আন্দোলন করে গিনেজ বুকে নাম লেখানোর কথা বলছে, কিন্তু কথা হলো; লোহা গরম থাকতেই পেটাতে হয়। আজ তিনমাস পরে, সরকারের অধীনে একটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে তারপরে আন্দোলনের হুমকী সেই 'দেখিনা কি করে' কে মনে করিয়ে দেয়।

বর্তমান সময়ে সরকারকে বেশ নির্ভার বলে মনে হচ্ছে, মনে হয়না এই সরকারের ঠিক ঠিক পাঁচ বছরের আগে ক্ষমতা ছাড়ার বা মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য করার মতো কোন আন্দোলন বিএনপি করতে পারবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে না আসা বিএনপির একটি ঐতিহাসিক ভুল, এবং এই ভুলের মাশুল দিতে দলটি তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে দ্রুতই লিপ্ত হবে। নিকট অতীতে দলটি উপর্যুপরি ব্যর্থ হয়েছে।

বর্তমান সময়ে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক সমীকরনে যে নিয়ামকগুলি গুরুত্বপূর্ণ

১) নির্বাচনের আগে জনসম্পৃক্ত ও কর্মী-সমর্থক নির্ভর আন্দোলন সংগঠিত করতে পারেনি। নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে তারা জনগনের আস্থা হারিয়েছে।

২) নির্বাচন বর্জন করলেও নির্বাচনকে অগ্রহনযোগ্য প্রতীয়মান করতে পারেনি। কাজেই তাদের এই বর্জন ভুল।

৩) উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহন না করলে দল রক্ষা হবেনা, এবং অংশগ্রহন করলে ওই সময়ে আন্দোলনে না গিয়ে নির্বাচনে কর্মীরা ব্যস্ত হয়ে যাবেন। আওয়ামীলীগের এই রাজনৈতিক ছকে দলটি নির্বাচনে গিয়ে রাজনৈতিক চালে পরাজিত হয়েছে। আওয়ামীলীগ এই রাজনীতিতে চরম সফল হয়েছে। উপজেলা নির্বাচন হওয়ার পর এখন আন্দোলনে সাড়া পাবেনা বিএনপি। বরং তাদের আন্দোলনে যৌক্তিকতাই থাকবেনা।

৪) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রহনযোগ্যতা এখন যেকোন সময়ের চেয়ে বেশী, অন্যদিকে প্রথম রাষ্ট্রপতি বিতর্কে খালেদা ও বিএনপি হাস্যরসের খোরাকে পরিনত হয়েছেন। তারা ভাবছেন এই ইতিহাস বিকৃ্তির চেষ্টা কেবল আওয়ামীলীগকে বিক্ষুব্ধ করবে। আসলে যেকোন বোধ সম্পন্ন মানুষ এই প্রচেষ্টায় বিরক্ত হবেন এবং হচ্ছেন, কিন্তু সেটা তারা বুঝতে পারছেন না।

৫) এই গ্রীস্মকাল সরকারের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ, বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখতে পারলে বিএনপি কোন আন্দোলন জমাতে পারবে না। আর বৈশাখ মাস গেলেই রাস্তায় আন্দোলন করার জন্য মানুষতো দূরের কথা, কাক-পক্ষীও পাওয়া যাবেনা।

৬) সামনের জুনে বাজেট নিয়ে কিছু মিছিল করবে বিএনপি, কিন্তু তা কেবল বাজেট নিয়েই। মধ্যবর্তী নির্বাচন বা ফের নির্বাচন নিয়ে কোন কথাই তারা বলতে পারবেনা সে সময়। আর এই সরকার বাজেট দিয়ে দেওয়ার পর, সরকারের বয়স আধা বছর হয়ে যাবে।

৭) এরমধ্যে মাঝে মধ্যে যুদ্ধাপরাধের রায় ও রায় কার্যকর হবে, জামায়াত বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাস করবে আর বিএনপি না পারবে কিছু বলতে না পারবে সইতে।

কাজেই নিশ্চিন্ত থাকা যায় যে, এই সরকার তার প্রথম এক বছর ঝামেলাহীনভাবে কাটাবে। আসলে এই সরকার যদি মনে করে আবার নির্বাচন দেবো, তাহলেই তা কেবল সম্ভব এছাড়া বিএনপির আন্দোলন, মোড়লদের চাপ কোন কিছুই সরকারকে নতুন নির্বাচনের দিকে যেতে বাধ্য করতে পারবেনা। আর সরকার যদি রাষ্ট্র পরিচালনায় সফলই হয়, পাঁচ বছরের আগে নির্বাচনের দরকারও হবেনা ।

বিষয়: রাজনীতি

১০৯৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

206555
১২ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১২
মাটিরলাঠি লিখেছেন : শুনতেছি ৭ বছর (সংসদে বাড়িয়ে নেয়া হবে), তারপর ধুতিপরা দাদারা কমলাপুরে ট্রেন থেকে নামবেন। কত কিছুইতো শোনা যায়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File