ইউরোপীয় রেনেসাঁ ও ইসলাম
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ১৬ জুন, ২০১৭, ০৯:৫৮:১৪ রাত
ইউরোপীয় রেনেসাঁ ও ইসলাম
অতীত ----------
যে যুগে সারাবিশ্ব বিশেষত ইউরোপের মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানের দরজাকে বন্ধ করে অজ্ঞতা, মূর্খতা, বর্বরতা, অসভ্যতা ও নিষ্ঠুরতায় নিমজ্জিত ছিল সে যুগটি ছিল মধ্যযুগ। আরবরা এর নাম দেয়। “আইয়্যামে জাহেলিয়াত' বা মূর্খতার যুগ। ওদিকে ইউরোপের প্রাজ্ঞ পণ্ডিতবর্গ এর নামকরণ করে ‘Dark Ages) বা অন্ধকার যুগ।
@আর এইচ. সি. ডেভিসের (R.H.C. Davis) কথায়
The first period of the middle ages from the fourth century to the ninth was a time of despaire the Dark Ages- which witnessed the disintegration of the Mediterranean world and the collapse of its political, cultural and economic unity.
ইউরোপে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বন্ধ্যান্ত্বের জন্য মূলত দায়ী খ্রিস্টান পোপ-পাদ্রিদের গোড়ামি, ক্ষমতা লিন্সা, বিজ্ঞানের বিরোধিতা, নির্মম অত্যাচার ও লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ।
@কোপারনিক্যাসের তত্ত্বের সমর্থনকারী জিওদার্নে ব্রুনোকে পাদ্রিরা পুড়িয়ে মারে।
@বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ গ্যালিলিওকে নয় বছর দুঃখ-কষ্টে, অভাব-অনটনে গৃহবন্দি করে রাখে এবং বন্দি অবস্থায়ই তাঁর মৃত্যু ঘটে।
শুধু তাই নয়, হাজার হাজার মানুষকে ধর্মত্যাগী, নরকবাসী বলে হত্যা করতে পাদ্রিরা কুষ্ঠিত হতো না। এমনি মূর্খতা, বর্বরতা ও ঘটে বিশ্ব শান্তির দূত ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলো প্রজ্জ্বলনকারী মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)। তার স্নিগ্ধ সাহচর্য ও শিক্ষায় বিনির্মিত হলো লক্ষ লক্ষ আলোকিত মানুষ। এই দর্শন ও সাহিত্য-কলা। এরই মজবুত ভিতে জন্ম ও পরিপুষ্ট হয় ইউরোপীয় রেনেসা। বস্তুত আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতা ইউরোপীয় রেনেসাঁর অমোঘ ফলশ্রুতি।
@এ প্রসঙ্গে চেম্বার্স এনসাইক্লেপেডিয়া বলে
“It was the prophet (Muhammad) who laid the foundation stone of that vast edifice of enlightment and civilization which has adorned the world since of his time. The muslims were commanded by the Quran to say, O God increase my knowledge and Muhammed tell them knowledge is the birth right of the faithful, take it whenever you find it, such were the seeds which grew into trees whose harmless spread to Bagdad, Sicily, Egypt and Spain and whose fruits are enjoyed to this day by Modern Europe ... Broadly speaking, the Mohammedans may be said to have been the enlightened teachers of the barbarous Europe from the ninth to the thirteen century.”
অর্থাৎ বিশ্বনবি। হযরত মুহাম্মদ (স.) এর সময় থেকে যে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতা পৃথিবীকে আলোকিত করে আসছে, সে সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করেন নবি মুহাম্মদ (স.)।
আল কুরআন মুসলমানদের এ প্রার্থনা করতে বলে, “হে রব, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করো।” হযরত মুহাম্মদ (স.) মুসলমানদের বলেছেন, “জ্ঞান বিশ্বাসীদের জন্মগত অধিকার।’ যেখানে পাও, সেখান থেকেই গ্ৰহণ করো। এ শিক্ষার বীজ থেকে অনেক মহীরুহ তৈরি হয় যার শাখা-প্ৰশাখা বাগদাদ, সিসিলি, মিশর ও স্পেনে প্রসারিত হয় এবং এসব মহীরুহের ফল আজকের ইউরোপ ভোগ করছে। স্থুলভাবে নবম শতাব্দী থেকে ত্রইয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত মুসলমানদের অসভ্য ইউরোপের প্রাজ্ঞ শিক্ষাগুরু বলা যায়।
অপ্ৰিয় হলেও সত্যি যে, সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত বিদ্বেষের কারণে পাশ্চাত্যের অনেক কোনো ক্ষেত্রে চেপে রেখেছেন, আবার কোনো কোনো ব্যাপারে খাটো করে দেখেছেন।
@এ দৃষ্টিকোণে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক জন ড্রেপার বলেন (John William Draper )-- A History of the Intellectual Development of Europe SCS aliciFi
সাময়িকভাবে সত্য হয়তো আচ্ছন্ন থাকতে পারে কিন্তু স্থায়ীভাবে সত্যকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। রাখা যায় না। এক সময় কোনো না কোনোভাবে তা উদ্ভাসিত হবেই। আরবীয় মুসলমানদের অবদানের বেলায় তা-ই হয়েছে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের কতিপয় ঐতিহাসিক দার্শনিক ও বিজ্ঞানী মুসলমানদের অবদানকে নিমোঁহ ও নিরপেক্ষভাবে দেখেছেন এবং সশ্ৰদ্ধচিত্তে স্বীকার করে প্রচারও করেছেন। তাদের মধ্যে টি. ডব্লিউ. আরনল্ড, আরনল্ড টয়েনবি, ড্রেপার, জর্জ সার্টন, ব্ৰিফল্ট, পি. কে. হিট্টি, গিবন, গীব, মুরিস বুকাইলি, হামবোল্ড, নিকলসন, ফার্ম,নেহরু, এম.এন রায় বসওয়ার্থ স্মিথ,
আঁলফ্ৰেড গুইলুমের নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।
**জর্জ সার্টন বলেন---
The main task of mankind was accomplished by Muslims; Muslims were then in the van of mankind.
অর্থাৎ মুসলমানদের দ্বারা বিশ্বমানবতার প্রধান কাজ সুসম্পন্ন হয়েছে। মুসলমানরা তখন মানবজাতির পথপ্রদর্শক ছিল।
**বসওয়ার্থ স্মিথের মতে--
During the darkest period of European history, the Arabs for five hundred years held up the torce of learning to humanity.
অর্থাৎ ইউরোপের অন্ধকার যুগে আরবরা পাঁচশ বছর ধরে বিশ্ব মানবতার জ্ঞানের মশাল ধারণ করেছিলেন। **পি. কে. হিট্টির ভাষায়---
After the death of the prophet, sterile Arabia seems to have been converted as if by magic into a nursery of heroes the like whom both in number and quality is hard to find anywhere.
অর্থাৎ নবি (সা.)-এর ওফাতের পর অনুর্বর আরব জাদুর কাঠির স্পর্শের মতো বহু স্বনামধন্য মনীষার সূতিকাগারে পরিণত হয়। এমনটি আর কোথাও পরিদৃষ্ট হয় না।
**এম. এন. রায় এককথায় বলেন---
The revolt of Islam saved humanity.
অর্থাৎ ইসলামি বিপ্লব মানবতাকে রক্ষা করেছে।
খ্রিস্টীয় নবম থেকে তেরোশ শতক পর্যন্ত এ পাঁচশ বছর মুসলমানরা জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রসারে নিবেদিত ছিল। তবে নবম দশম ও একাদশ সাল ছিল মুসলিম বিজ্ঞান-দর্শন-সাহিত্যকর্মের স্বর্ণযুগ।
** জর্জ সাটন তার “ Introduction to the History of science” গ্রন্থে জাবির ইবনে হাইয়ান, আল খাওয়ারিজমি, আল রাজী, আল কিন্দি, আল বিরুনী, ইবনে সিনা, ওমর আল ফারঘানী, আল বাত্তানী প্রমুখ বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের নাম উল্লেখপূর্বক বলেন---- If any one tells you that the Middle Ages were scientifically sterile just quote these men to him, all of whom flourished within a relatively short period between 750 and 1100.
অর্থাৎ কেউ যদি আপনাকে বলে যে, বিজ্ঞানের অঙ্গনে মধ্যযুগ অনুর্বর ছিল, তাহলে তার সামনে উল্লেখিত মনীষীদের নাম পেশ করুন। এসব বিজ্ঞানী মাত্ৰ ৭৫০ থেকে ১১০০ খ্রিস্টীয় সালের মধ্যে সমৃদ্ধি অর্জন করেছিল।
যে আরব জাতি খুন-খারাবি অজ্ঞতা, মূর্খতা, অসভ্যতা, বর্বরতা, নৃশংসতা ইত্যাদির ঘূর্ণাবর্তে নিপতিত ছিল সে জাতি মুসলমানদের শেষ ও শ্রেষ্ঠ নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) এর সুশীল ও প্রাজ্ঞ প্ৰশিক্ষণ এবং সহৃদয় ও স্নিগ্ধ পরশে অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের শ্ৰেষ্ঠ জাতি হিসাবে উন্নীত হয়। এটি নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, তাদের উত্তরাধিকারীরাই এক সময় ‘ইশপ ফেবলসের গল্পের খরগোসের মতো ঘুমিয়ে পড়ল। ওদিকে কচ্ছপ রূপ খ্রিস্টীয় ইউরোপ হাঁটি হাঁটি পা পা করে মুসলিম জ্ঞান-গবেষণাকে আত্মস্থ করে বিজয়ের বেশে বর্তমান আধুনিক ইউরোপের গোড়াপত্তন করে। আর মুসলিমরা তাদের জ্ঞান-গবেষণা, সভ্যতা, ভব্যতা হারিয়ে ইউরোপের সভ্যতার দিকে ফেল ফেল করে তাকিয়ে থাকে। মুসলমানদের এই করুন ও অসহায় অবস্থা কি কম বিস্ময়কর।
**ভারতের সাবেক কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষাবিদ মরহুম হুমায়ুন কবীর এ প্রসঙ্গে বলেন- “ইসলামের বিশ্বব্যাপী প্রসার যেমন বিস্ময়কর, পৃথিবীর এত বড় সামাজিক ও বৌদ্ধিক বিকল্প কয়েক শতাব্দীর মধ্যে প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলল। কেন, সে প্রশ্নও সমান বিস্ময়কর।”
**গ্রেট ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চাৰ্চিলের অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠ উক্তি—
The longer we can look back, the further we can look ahead.
অর্থাৎ আমরা যতই দূর অতীতের দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করব, ততই আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারব। আমাদের একটি হিরন্ময় অতীত বিদ্যমান। আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য স্বর্ণালি-বর্ণালি আভায় প্রোজ্জ্বল।
‘ইউরোপীয় রেনেসাঁ ও ইসলাম--- মু, আবুল কাসেম ভূইয়া
---------------------------
বিষয়: বিবিধ
১০০৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন