বিপ্লবী কর্নেল তাহের
লিখেছেন লিখেছেন ইব্রাহীম খলিল ২২ জুলাই, ২০১৪, ০৮:৪৪:১৫ রাত
কর্নেল তাহের এর রাজনৈতিক দর্শন এর সাথে অনেকের সংগত কারণে দ্বিমত থাকতেই পারে।কিন্তু তার কাছ থেকে শেখার সবচেয়ে বড় জিনিসটি হল তার দেশপ্রেম!! অমন করে দেশকে ভালবাসতে পারে কত জন?
১৯৩৮ সালে জন্ম নেওয়া এই লোকটি ১৯৫৯ সালে সিলেটের এমসি কলেজ থেকে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করেন। তারপর ১৯৬১ সালে পাকিস্তান আর্মিতে অফিসার হিসাবে যোগদান করেন এবং ১৯৬২ সালে কমিশন প্রাপ্তি হন। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে কাশ্মীর আর শিয়ালকোট সেক্টরে যুদ্ধ করেন তিনি৷ সে যুদ্ধে তিনি আহতও হন৷ একমাত্র বাঙালি অফিসার হিসাবে তাঁকে 'মেরুন প্যারাস্যুট উইং' নামক সম্মাননা প্রদান করা হয়।
পাকিস্তান আর্মিতে থাকাকালে তাহেরের অসাধারন সাহসিকতার কথা ছড়িয়ে পড়ে।তাকে আসতে দেখলে অফিসার রা ফিসফিসিয়ে বলত "লুক জেন্টলম্যান, দিস ইজ তাহের, আ লিজেন্ট ইন দ্য হিস্ট্রি অভ কামান্ডো ট্রেনিং। ...আ ম্যান ক্যান নট বী আ তাহের। হী ইজ আ সুপার, এক্সেপশনাল'।" "তাঁর সার্টিফিকেটে লেখা ছিল, তিনি পৃথিবীর যে কোন দেশের, যে কোন সেনাবাহিনীর সঙ্গে, যে কোন অবস্থায়, অনায়াসে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম।" যুদ্ধের সময় অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২০ জুলাই কর্নেল তাহের পাকিস্তান সেনা বাহিনী থেকে পালিয়ে আসেন। যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে । তার সব ভাইবোন মুক্তিযুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে ১১ নং সেক্টরে যৌথভাবে যুদ্ধ করেছেন।
পাক অফিসার রা তাদের সৈনিকদের তাহের সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলত, "'ইয়াংম্যান,বী আ্যওয়ার অভ তাহের। হী ইজ আ ভলকানো, আ হানড্রেড পার্সেন্ট এক্সাম্পল, প্রফেশনাল। সো সেভ ইয়্যুর স্কীন'।"
মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বে ১৪ নভেম্বর তারিখে ঢাকার প্রবেশদ্বার বলে খ্যাত কামালপুর শত্রুঘাটি দখলের সম্মুখ যুদ্ধে মারাত্মকভাবে আহত হন তাহের। বা পায়ে গুলি লাগে তাহেরের
রক্ত ঝরছিল বিরামহীন। চেষ্টা করেও থামানো যাচ্ছে না। তাঁকে উদ্ধার করতে ভারতীয়
বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত হেলিকপ্টার নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছল।উদ্ধারকারি মিত্র বাহিনীর অফিসারকে তাহের হা হা করে হাসতে হাসতে বললেন: 'এরা কী যুদ্ধ করবে, এরা আমার মাথায়ই গুলি লাগাতে পারেনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই, এরা আটকাতে পারবে না, এদের এই
ক্ষমতাই নাই'।"
কর্নেল তাহের কে হত্যা করা হয়। কাজটি করেন মেজর জিয়া।যিনি স্বার্থের জন্য একজন বীর উত্তম কে হত্যা করেছেন।অথচ এই তাহেরই তাকে খালেদ মোশাররফ এর বন্দীশালা থেকে মুক্ত করে জীবন বাচিয়েছিলেন।কর্নেল তাহের মনে করতেন জিয়াও তার মতাদর্শের।৭ নভেম্বর জিয়া যে বিপ্লব ও সংহতি দিবসের নাটক করেন সেই সেই সিপাহী বিপ্লবের প্রকৃত নায়ক ও এই তাহের।তার কমান্ডেই সৈন্যরা ঐ দিন বিপ্লব ঘটায় এবং জিয়াকে মুক্ত করে।
"তাঁকে যেভাবে ফাঁসি দেয়া হয় প্রকারন্তরে এ খুনেরই নামান্তর। তাঁর ডেথ ওয়ারেন্ট ইস্যু করার মাত্র ৩ দিনের মাথায় ফাঁসি কার্যকর করা হয়। অথচ জেল কোড অনুযায়ী ডেথ ওয়ারেন্ট ইস্যুর ২১ দিন আগে বা ২৮ দিন পরে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার বিধান নাই।একজন কথিত জল্লাদ জনাব মোঃ সিরাজউদ্দিনের সাক্ষৎকার নেয়া হয়েছিল,
মিনার মাহমুদের বিচিন্তা পত্রিকায়:
"প্রশ্ন: ফাঁসির মঞ্চের কোনও ব্যক্তির আচরণ কি আপনার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে? যদি যায়, তবে সেই
ব্যক্তিটি কে?
জল্লাদ সিরাজউদ্দিন: কর্ণেল তাহের। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়াইয়া তিনি সহজভাবে কথা বলেছেন।
একটা বিপ্লবী কবিতা পইড়া শোনাইছেন (জন্মেছি মৃত্যুকে পরাজিত করব বলে...)। আশ্চর্য!
তিনি নিজের হাতে যমটুপি পরছেন। নিজেই ফাঁসির
দড়ি নিজের গলায় লাগাইছেন। আমার মনে হয় ফাঁসির মঞ্চে এমন সাহস
দুনিয়ার আর কেউ।
বাংলাদেশ যতদিন বেচে থাকবে। কর্নেল তাহের ও ততদিন বাংলাদেশের সাথেই বেচে থাকবে।
বিষয়: বিবিধ
১৮৩৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"তাঁর সার্টিফিকেটে লেখা ছিল, তিনি পৃথিবীর যে কোন দেশের, যে কোন সেনাবাহিনীর সঙ্গে, যে কোন অবস্থায়, অনায়াসে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম।"
''পাক অফিসার রা তাদের সৈনিকদের তাহের সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলত, "'ইয়াংম্যান,বী আ্যওয়ার অভ তাহের। হী ইজ আ ভলকানো, আ হানড্রেড পার্সেন্ট এক্সাম্পল, প্রফেশনাল। সো সেভ ইয়্যুর স্কীন'।"
০ এই সব কি লিখছেন ? নিজে নিজে বানাইছেন মনে হয় ।
আর এই তাহের বন্দনা এখন কেন ? এটাতো ৭ই নভেম্বরের আশে পাশে দিলে পাবলিক খেত ভাল ।
উনি মুক্তিযোদ্ধা করেছিলেন জানি , তবে এত যে কাহিনী আজগুবি গুন গান করলেন তাকে নিয়ে তা বেশী বেশীই করেছেন ।
মনে হয় একটা মজার আয়োজন করতে চাচ্ছেন তাহের কার্ড ব্যবহার করে ।
'' সৈনিক জনতা ভাই ভাই , অফিসারের কল্লা চাই''
সে মেজর জিয়ার মাথায় লবণ রেখে খেতে চেয়েছিল, কিন্তু জিয়াউর রহমানের বিচক্ষণতার কারনে সম্ভব হয়নি।
কর্ণেল তাহের কেমন লোক ছিল তা তার ভাই পিশাচ আনোয়ারকে দেখলেই বঝো যায়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন