পরিপূর্ণ পর্দা না করার পেছনে অধুনা মুসলিম নারীদের ১০টি অজুহাত

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১০ অক্টোবর, ২০১৩, ০৩:৪৮:৩৮ দুপুর



কেন পর্দা করেন না? প্রশ্নটি করা হয়েছিল সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার নারীদের কাছে। যেসব কারণ তারা দেখিয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দশটি কারণ আমরা চিহ্নিত করেছি। চেষ্টা করেছি এগুলোর উত্তর খোঁজার। কারণগুলো নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করে আমরা খুঁজে পেয়েছি এসব অজুহাতগুলোর দুর্বলতা।

প্রিয় মুসলিম বোন, আমাদের এই গবেষণা-পুস্তিকায় আমরা গুরুত্ব অনুসারে সেসব কারণ এবং সংক্ষেপে এই কারণগুলোর ব্যাপারে আমাদের আলোচনা উপস্থাপন করেছি। যারা পরিপূর্ণ পর্দার ব্যাপারে আগ্রহী নন, কিংবা পর্দার গুরুত্ব বোঝা সত্ত্বেও বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে পর্দা শুরু করতে পারছেন না আশা করি সবার জন্যই এই লেখাটি কাজে দেবে।

এক নজরে দশটি কারণ:

১. হিজাবের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমি এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নই।

২. ইসলামিক পোশাকের ব্যাপারে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে আমার বাবা-মা আমাকে হিজাব পড়তে বারণ করেন। বাবা-মা’র নিষেধাজ্ঞা না মানলে আমি কি জাহান্নামে যাব না?

৩. আসলে আমি যাদের সাথে যে সমাজে চলাফেরা করি, সেখানে আমার বর্তমান ড্রেসআপ বাদ দিয়ে ইসলামিক পোশাক মেনে চলা সম্ভব না।

৪. এত গরম আমাদের দেশে, একদমই সহ্য করতে পারি না। এত গরমে কীভাবে হিজাব করব?

৫. আমার ভয় হয়, আমি হয়তো আজকে হিজাব করে কাল আবার ছেড়ে দেব। কারণ, আমি অনেককেই দেখেছি হিজাব করে আবার ছেড়ে দিতে!

৬. হিজাব করলে কেউ আমাকে বিয়ে করবে না। তাই, বিয়ে করার আগ পর্যন্ত আমি হিজাব করব না।

৭. সুন্দর রেশমি চুল আর আকর্ষণীয় যে সৌন্দর্য দিয়ে আল্লাহ আমাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছেন আমি সেটা কীভাবে আবৃত রাখি?

৮. আমি জানি পরিপূর্ণ পর্দা বা হিজাব করা নারীদের জন্য ফরজ, তবে আল্লাহ যখন আমাকে হেদায়েত করবে আমি তখনই হিজাব করব।

বা বয়স হলে হজ করার পর পর্দা করব।

১০. হিজাব বা পরিপূর্ণ পর্দা করলে লোকজন আমার গায়ে বিভিন্ন ইসলামিক দলের তকমা লাগিয়ে দেবে। আর আমি এসব দলাদলি মোটেও পছন্দ করি না।

সংক্ষেপে যুক্তি খন্ডনঃ

১।আমাদের এই বোন যদি প্রকৃত অর্থেই ইসলামের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখেন, দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে আদর্শ মানেন, তাহলে তিনি কীভবে ইসলামের বিধিবিধানের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছেন না?

২। মা-বাবাকে উপযুক্ত সম্মান করবেন, তাদের সাথে ভালো আচরণ করবেন; কিন্তু তাই বলে এমন কোনো কাজে তাদের বাধ্য হওয়া যাবে না, যে কাজে আল্লাহর অবাধ্যতা করতে হয়।

৩।আল্লাহর বিধিনিষেধ অমান্য করে, তাঁর ক্রোধ অর্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব না। সম্ভব না জান্নাতে পৌঁছা। পৃথিবীতে কে আপনাকে সম্মান দিল, আর কে দিল না, কোন পোশাকে লোকে আপনাকে সুন্দর বলল, আর কে বলল না, এগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। হিজাব বা পরিপূর্ণ পর্দা করুন কেবল আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য, আল্লাহর কাছে সম্মানিত হওয়ার জন্য।

৪। জান্নাতের চারপাশ ঘিরে আছে কষ্ট, সংগ্রাম আর কঠোর পরিশ্রম, অন্যদিকে জাহান্নামের চারপাশে ছড়ানো আছে কামনা-বাসনার প্রলোভন। সবচেয়ে মহামূল্যবান পুরস্কার পেতে একটু ঘাম না ঝরালে কি হয়?

৫।সঠিক পথ ও সত্যের উপর অবিচল থাকার জন্য অন্যতম প্রধান যে দুটো উপায় আছে, আপনি যদি সে দুটো উপায় অবলম্বন করেন, তাহলেই আপনি পাবেন ঈমানের সুমিষ্ট স্বাদ। এরপর আপনার মনে আর কখনোই একে ছাড়ার ইচ্ছা জাগবে না।

৬। যে বিয়ের ভিত্তি গড়ে উঠেছে পাপ ও মন্দ কাজের উপর তাতে আল্লাহর কোনো বারাকাহ থাকবে না। কাজেই এই অজুহাতে পরিপূর্ণ পর্দা থেকে বিরত থাকা মোটেও বুদ্ধিমতী নারীর কাজ নয়।

৭।আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের উপর সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ বা নেয়ামত হচ্ছে ঈমান (বিশ্বাস) ও হিদায়াহ (সঠিক পথের নির্দেশ)। এই ঈমান ও হিদায়াতের একটি বহিপ্রকাশ হচ্ছে হিজাব। এত বড় একটি নি‘আমাহর কল্যাণ ও আশীর্বাদ কেন আপনার মধ্যে ফুটিয়ে তুলবেন না? কেন আপনি এমন নিরাপত্তা মুফতে গ্রহণ করবেন না?

৮। হিদায়াহ লাভের ব্যাপারে আমাদের এই বোনটি যদি সত্যিই আন্তরিক হন, তাহলে তিনি নিজেই সচেষ্ট হবেন, কী করলে তিনি সঠিক পথনির্দেশ পাবেন।

৯। ভবিষ্যতে করবেন এমন আশা ছেড়ে দিন। কেয়া পাতা কাল হো না হো? এক মুহূর্ত বেঁচে থাকার নিশ্চয়তাই বা কে দিচ্ছে আপনাকে?

১০।আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, তাঁর দয়া ও জান্নাতের প্রত্যাশায় মেনে চলুন আল্লাহর বিধান। মানুষ ও জিনদের মধ্যে মন্দদের অপবাদে কুছ পরোয়া নেহি। এদের কটূক্তিকে দেওয়ালে ছুঁড়ে ফেলে অনুসরণ করুন পূর্বসূরি সংগ্রামী ও জ্ঞানী নারী সাহাবাদের (তাঁদের সবার উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হোক) দৃষ্টান্ত।

শেষ কথা:

শয়তান নারীদেহকে পুরুষের চোখে আকর্ষণীয় মোহনীয়ভাবে তুলে ধরে। আপনার চুলের স্টাইল, আঁটসাঁট পোশাক আপনার অবয়বকে স্পষ্ট করে মেলে ধরে। ছোট ছোট পোশাক, মাত্রাতিরিক্ত সৌন্দর্যের বহিপ্রকাশ শয়তানকে তুষ্ট করে, অন্যদিকে আল্লাহর ক্রোধের উদ্রেক করে।

এভাবে দিনকেদিন আপনি দূরে সরে যান আল্লাহর কাছ থেকে। আর ক্রমান্বয়ে সন্ধি পাতেন অভিশপ্ত শয়তানের সাথে। যতদিন না অনুশোচনা করছেন, প্রতিটা দিন আপনি ভাগীদার হচ্ছেন আল্লাহর অভিশাপ আর ক্রোধের। প্রতিমুহূর্তে আপনি কবরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। মৃত্যুদূত আপনার আত্মাকে হরণ করার জন্য সদাপ্রস্তুত।

“প্রত্যেক মানুষই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর কেবল পুনরুত্থানের দিনেই তোমাদের কৃতকাজের পূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে। আর সেদিন যাকে জাহান্নামের আগুন থেকে সরিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই প্রকৃত সফলকাম। এই পার্থিব জীবন কেবলই ছলনার সামগ্রী।” [সূরাহ ‘আলি-ইমরান, ৩:১৮৫]

স্টেশন ছেড়ে ট্রেন চলে যাওয়ার আগেই উঠে পড়ুন তাওবার বগিতে। অনুশোচনা করে ফিরে আসুন আল্লাহর কাছে।

বোন আমার, একটু গভীরভাবে ভেবে দেখুন। সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত নিন।

আজ থেকেই তবে শুরু হোক আল্লাহর সন্তুষ্টির সাথে পথচলা।

বিষয়: বিবিধ

১০৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File