সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কারণ ও পরিণতি ! আবু জাফর মুহাম্মাদ ইকবাল ।
লিখেছেন লিখেছেন স্বপন২ ০৫ নভেম্বর, ২০১৬, ০৩:৪২:০৯ রাত
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহই সার্বভৌম ক্ষমতার একমাত্র মালিক এবং মৃত্যু পরবর্তী আখিরাতের জীবনে সকলকেই তার নিজ নিজ কর্মফল অনুযায়ী চির সুখের স্থান জান্নাত অথবা চির আজাব ভোগ করার স্থান জাহান্নামে থাকতে হবে এই দুইটি বিষয় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও বিশ্বাসের অভাবেই অধিকাংশ মানুষই মানব রচিত ব্যবস্থা ‘গণতন্ত্র’ ত্যাগ করে ‘ইসলাম’ গ্রহণ করছে না। আল্লাহর ভয় এবং আখিরাতে জাহান্নামের কঠিন শাস্তির ভয় ও পরকাল সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও বিশ্বাস না থাকাই সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় মানব রচিত ব্যবস্থা ‘গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার এবং সমাজে সংঘটিত সকল প্রকার অন্যায় ও অপরাধ হবার মূল কারণ। আল্লাহ ও আখিরাতের জীবন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও বিশ্বাস অর্জিত হলে প্রতিটি মানুষ নিজ জীবনকে এবং দুনিয়ার সকল বস্তু সামগ্রী ও ভোগ-বিলাসকে তুচ্ছ জ্ঞান করে গণতন্ত্রসহ সকল মানব রচিত ব্যবস্থাকে পরিত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহর ভয়ে ভীত এবং আখিরাতের জীবনে জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে রক্ষা পাবার ও চির সুখের স্থান জান্নাতে স্থান লাভের আশায় সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনাসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা ‘ইসলাম’কেই গ্রহণ করতো এবং সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, আল্লাহর আইন-বিধান, আল্লাহর কর্তৃত্বের ভিত্তিতে ‘ইসলাম’ প্রতিষ্ঠা করে সমাজ ও রাষ্ট্রসহ সমগ্র জীবনে, মানুষের নয়! আল্লাহর আইন-বিধানের আনুগত্য করার মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহরই দাসত্ব করতো। আল্লাহ ও পরকাল সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও বিশ্বাস অর্জন না করার কারণে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশসহ বর্তমান বিশ্বের মুসলমান পরিচয় দানকারী এবং দাবীদার অধিকাংশ মুসলমানরাই সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক, আইনদাতা-বিধানদাতা ও নিরংকুশ কর্তা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর পরিবর্তে মানুষকে গ্রহণ করে আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা ‘ইসলাম’কে পরিত্যাগ করে মানব রচিত ব্যবস্থা ‘গণতন্ত্র’ গ্রহণ করে মানুষের মনগড়া আইন-বিধানের আনুগত্য স্বীকারের মাধ্যমে মানুষের দাসত্ব করে চলছে। সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় আল্লাহ প্রদত্ত ব্যবস্থা ইসলামকে পরিত্যাগ করে মানব রচিত ব্যবস্থা গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র ইত্যাদি গ্রহণের মাধ্যমে মানুষকে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক, আইন-বিধানদাতা ও কর্তৃত্বের মালিক স্বীকার করার কারণে এক্ষেত্রে মানুষকেই ‘রব’ গ্রহণ করে মানুষকে আল্লাহর সমকক্ষ গণ্য করা হচ্ছে, আল্লাহর সাথে শির্ক করা হচ্ছে এবং মানুষের মনগড়া আইন-বিধানের আনুগত্যের মাধ্যমে মানুষের দাসত্ব করে মানুষকেই ‘ইলাহ’ গ্রহণ করে আল্লাহর সাথে বিদ্রোহ, আল্লাহর চরম অবাধ্যতা করা হচ্ছে। যার পরিণতিতে দুনিয়ার জীবনে হচ্ছে অশান্তি, অকল্যাণ এবং পরকালের স্থায়ী জীবনে হবে জাহান্নামের আগুনেই স্থায়ী বাসস্থান। পরকালের স্থায়ী জীবন সম্পর্কে মানব জাতির সকল মানুষের মনে স্বচ্ছ বা অস্বচ্ছ যতটুকু জ্ঞান যা আছে তাতে জাহান্নামের আগুনে জ্বলার ইচ্ছা আছে বা জাহান্নামে যেতে চায় এমন একজন মানুষ গোটা মানব জাতির মধ্য থেকে খুজে পাওয়া যাবেনা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশসহ বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই তাদের সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও কর্তৃত্বের মালিক সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর পরিবর্তে মানুষকে গ্রহণ করে, আল্লাহ প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা ‘ইসলাম’ পরিত্যাগ করে, আল্লাহর দাসত্ব না করে গণতন্ত্র, রাজতন্ত্রসহ বিভিন্ন নামে মানব রচিত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে মানুষের মনগড়া আইন-বিধানের আনুগত্য স্বীকার করে মানুষের দাসত্ব করে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে শির্ক ও কুফুরীতে লিপ্ত থেকে জাহান্নামের আগুনে নিজেদের স্থায়ী আবাস গড়ার কাজ করছে! সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ আল কুরআনে বিভিন্ন সুরায় স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন- আল্লাহর সাথে শির্ক করার অপরাধ আল্লাহ ক্ষমা করবেন না, যারা শির্ক করবে তাদের সকল আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তারা ক্ষতিগ্রস্তদের অর্ন্তভূক্ত হবে, যারা আল্লাহর সাথে শির্ক করবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন এবং তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নামে আগুনে। (দ্রষ্টব্য: দেখুনÑ সুরা নিসা: ৪৮, ১১৬, সুরা যুমার: ৬৫, সুরা মায়েদা: ৭২)। ইসলামের নামে বাংলাদেশে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামের নামে অনেক দল সমাজ ও রাষ্ট্রে ‘ইসলাম’ প্রতিষ্ঠার কথা বলে গঠিত হয়েছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই মানুষের সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও কর্তৃত্বের ভিত্তিতে গঠিত মানব রচিত ব্যবস্থা গণতন্ত্রের অধীনে নির্বাচন করে। তারা কখনো সরকার গঠন করার মতো সংসদীয় আসন পেলে কুরআনের আইন চালু করে দিবে আর তখন ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে বলে জাতির মানুষদেরেকে বুঝাচ্ছে। এমন কথা বলে তারা যুগের পর যুগ গণতন্ত্রের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে যাচ্ছে এবং জাতির মানুষদেরকে তাদের সমর্থন করার আহ্বান জানাচ্ছে, দলের সদস্য বৃদ্ধির চেষ্টা করে যাচ্ছে। অথচ, আল্লাহর সাথে শির্ক ও কুফর না করে গণতন্ত্রের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা যায়না। কাজেই গণতন্ত্রের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ‘ইসলাম’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা আল্লাহর নির্দেশিত এবং আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ) প্রদর্শিত ইসলাম প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি নয়। অন্যদিকে আবার ইসলামের নামে গঠিত কিছু দল সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছে। তারা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে মানুষ হত্যা করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার চেষ্টা করছে, তারা এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ক্ষমতা দখল করতে পারলে কুরআনের আইন-বিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে ভাবছে। অথচ, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও কর্তৃত্বের ভিত্তিতে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবার পূর্বে নয়, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবার পরেই প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে ইসলামের শত্রুদের আক্রমন প্রতিহত ও দমন করার জন্য আল্লাহর নির্দেশেই আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ) যুদ্ধ করেছিলেন, যুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবার পূর্বে তিনি কোন সশস্ত্র সংগ্রাম বা কারো সাথে কোনো যুদ্ধ করেন নি বরং আল্লাহর নির্দেশে তিনি এবং ঈমানদারগণ সকল প্রকার অত্যাচার, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার দায়িত্ব আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়ে নিজেদের হাত সংযত রেখে ধৈর্য ও ক্ষমার নীতি অবলম্বন করে ঈমানের উপর দৃঢ় থেকে জাতির লোকদের নিকট অব্যাহত ঈমান ও ইসলামের দাওয়াতী কাজ করেছেন কিন্তু কখনো কারো সাথে কোনো সংঘর্ষে লিপ্ত হননি, একতরফা মাজলুম হয়েছিলেন। কাজেই, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবার পূর্বে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র সংগ্রম করা, মানুষ হত্যা করা, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করা আল্লাহর নির্দেশিত এবং আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ) প্রদর্শিত পদ্ধতি নয়। এটা কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী ও মানবতা বিরোধী অপতৎপরতা এবং সশস্ত্র সন্ত্রাস। এটাও শির্ক ও কুফর। আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে বিশ্বের সকল মানুষের সার্বিক কল্যাণে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে তাঁরই আইন-বিধান ও কর্তৃত্বের প্রতিনিধিত্বকারী নেতা হিসাবে ইসলামী সমাজের আমীর সৈয়দ হুমায়ূন কবীরের নেতৃত্বে ইসলামী সমাজের সকল সদস্য নিজ অর্থ সম্পদ ও সময় কুরবানী করে আল্লাহর নির্দেশিত এবং আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ) প্রদর্শিত শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে সমাজ ও রাষ্ট্রে ‘ইসলাম’ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ প্রত্যাশী জাতির সকল মানুষদেরকে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ) প্রদর্শিত শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে ‘ইসলাম’ প্রতিষ্ঠার এই মহতী কাজে শামিল হয়ে দুনিয়াতে শান্তি ও কল্যাণ এবং আখিরাতে আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত লাভের পথে চলার জন্য আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছে। নিজে বাঁচতে এবং বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করতে পারেন ‘ইসলামী সমাজ’, ৪নং দক্ষিণ বাসাবো (কাজী অফিসের উত্তর পাশে), ঢাকা-১২১৪; মোবাইল: ০১৯২৭-৩৮৬৫১৫, ০১৭১৬-৪৪২১৩৬, ০১৯১৯-৮৪৪২১০, ০১৮১১-৬৫০৬২৮;
সকলের সার্বিক কল্যাণ প্রত্যাশী
আবু জাফর মুহাম্মাদ ইকবাল
ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেবষক ও লেখক
বিষয়: বিবিধ
১১২৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহর সার্বভৌমত্বের ব্যাপারটা সবার আগে বুঝেছেন।
ইকবাল ভাই, আপনার ইমেইলের উত্তর দিয়েছে কিনা, জানি না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন