ম্যান ইজ মরটেল

লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ২৮ মার্চ, ২০১৮, ০৫:০৪:৪৫ সকাল

ম্যান ইজ মরটেল, মানুষ মাত্রই ভুুল। ফরিদ সাহেবকে বলেছিলাম। কী ভীষণ ক্ষ্যাপা, কেমনে বুঝায় এটা এখন চলছে। ফরিদ সাহেব আজ আর নেই, হঠাৎ মৃত্যুতে শুনেছিলাম ওবায়েদ সাহেব ঝামেলায় পড়েছিলেন, কেননা অপিষে ওবেয়েদ সাহেবের সাথে কী একটা কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন এবং বাসায় গিয়ে হঠাৎ মৃত্যু। ফরিদ সাহেব এর কন্যার ধারনা ওবায়েদ সাহেব কোন কারনে ওনাকে ক্ষেপিয়ে দিয়ে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলেন এবং সেটা নিয়ে ট্যানশন করে ওনি মৃত্যুর কোলে ঝড়ে পড়েছেন।

ফরিদ সাহেব চাকরী করতেন মধ্যপ্রাচ্যে। শেষের দিকে দেশে চলে গেছেন এবং সময় কাটানোর জন্য জব এ জয়েন্ট করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের কথা ওঠলে বলতেন সেখান দুই ব্যান্ড হতে হয়, এক ব্যান্ড হলে চলেনা।

তখনো আমি জানতামনা আমারও গন্তব্য হতে চলেছে মধ্যপ্রাচ্যে। এই মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে একটা মাছ পাওয়া যায়, ঠোটটা অনেক লম্বা। আমাদের দেশেও আছে মাছটা তবে ছোট আকারের হয় এবং আমরা খাইনা। খালে জোয়ার আসলে মাছটা দেখা যেত। আমরা সেটাকে বলতাম ঠুুইট্টা মাছ। ঠোট লম্বা তায় এই নামটা।

তখন ছিলাম কাতারে। একদিন শখ করে মাছটা কিনলাম। হায়রে গন্ধ। খেতে পারিনি, ফেলে দিতে হয়েছিল। ম্যান ইজ মরটেল, মানুষ মাত্রই ভুল!

এখন আমি সওদি আরবে। এখন রাত একটা আটচল্লিশ। একটা নাটক দেখছি এবং এই লেখাটা লিখছি। বিকেলে উমামার আম্মু বলেছিল আজকে টিউশনিতে যাবার আগে খোঁজ নিয়ে যেতে, কেননা ছাত্র ওমরাতে যাবার সম্ভবনা আছে। আমার ছাত্র তার চাচাত ভাই, সেই সুবাদে সে জানতো। বললাম, তাহলে চাচা ফোন করবে, সন্ধ্যে সাতটা হলে ফোন করবে।

অপিষ শেষে বাসায় যখন ফিরি প্রচন্ড মাথা ব্যাথা। গোসল করে একটু ঘুুম দিলাম আর অপেক্ষায় ছিলাম একটা ফোন কল আসবে, আজকে যেতে হবেনা। চা খাওয়া যায় কিন্তু যে মগটাতে করে চা বানাতাম সেটা আগের বাসায় ফেলে এসেছি, বাসা চেন্জ করলাম এই মাসের শুরুতে।

ফোন করেছে, আজকে যেতে হবেনা। অনেকদিন পরে আজকে যেন শুক্রবারের ছুটির আমেজ। অপিষ করে এসে টিউশনিতে যেতে হবেনা। আবার ঘুম দিলাম। ওঠলাম রাত সাড়ে নয়টায়। গেলাম বাজারে, দুইটা ছোট পাত্র (ডেকসি) কিনলাম, একটাতে চা হবে, অন্যটাতে ফ্রিজ থেকে কোন তরকারী বের করে অল্প পরিমাণ গরম করা যায় এমন সাইজ। পাত্র দুটোর সাইজ দেখলে মনে হবে আমার দুই মেয়ের জন্য কেনা হল, তারা সেগুলো দিয়ে পুতুল খেলার রান্নাবান্না করবে।

ডেকসিতো কিনলাম সাথে মৃগেল মাছ কিনলাম আড়াই কেজি ওজনের। ছিলে সাইজ করে কেটে দিয়েছে। হঠাৎ চোখে পড়ল বাংলাদেশী মাছের মতো একটা মাছ। আমরা চট্টগ্রাম এর লোকাল ভাষায় যাকে বলতাম ওন্দারা মাছ। শুদ্ধ ভাসায় কী বলে মনে পড়ছেনা বা জানিনা। ওটার মতো দেখতে মাছগুলো চকচক করছিল। ভাবলাম অল্প করে কিনে দেখি। হাফ কিলো কিনলাম। খিদাও লেগেছে খুব। এসেই কেটেকুটে রান্নায় চড়িয়ে দিলাম। কাটাকুটার সময় ঘ্রাণটা যখন নাকে এসে বিধল তখনই সন্দেহ করেছিলাম আগের ভুলটা আবার করতে যাচ্ছি। সেই ঠুইট্টা মাছ এর কাহিনী। পুরো ঘর গন্ধ হয়ে গেল। মুখে দিতেই সে কী গন্ধ। আরব সাগরের সমুদ্রের পানির কারনে এমনটা আমি নিশ্চিত। এই মাছটা আমাদের সাগরের হলে এমনটা হতোনা। একটু ভাবলাম, যারা কিনে নিয়ে যায় তারা কী করে এই মাছটা দিয়ে!!

ভাত ও মাছ দুটোই ফেলে দিলাম। এটা রেখে মায়া বাড়িয়ে কাজ হবেনা, এই মাত্র রান্না করা মাছ আমি ফেলে দিলাম, নতুন করে ভাত নিযে ফ্রিজে মুরগীর মাংস রান্না ছিল, সেটা গরম করে আবার চালিয়ে দিলাম। মধ্যপ্রাচ্যে যেন এটা আমার দ্বিতীয় ভুল, কারন ম্যান ইজ মরটেল।

বিষয়: বিবিধ

৭৪৪ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385020
২৮ মার্চ ২০১৮ দুপুর ০১:১৭
আবু সুফিয়ান লিখেছেন : As-Salamu Alaikum Dear Brother,
How Are You And Your Family?
Good To Know Now You Are Living KSA With Family.
I'm Travelling KSA Next Friday For 1 Week
Could You Please Share Your Contact Number And Location In Ksa. I Will Try To Meet You In My Trip
২৮ মার্চ ২০১৮ দুপুর ০২:২৫
317503
বাকপ্রবাস লিখেছেন : ওয়াইলাইকুম আসসালাম। ধন্যবাদ ভাইযান, আমি একা থাকি, পরিবার আনার সৌভাগ্য হয়নি। আমার নাম্বার ০০৯৬৬ ৫৭৮৫৬৯৬২০, জেদ্দা কিলো আরবাতাস, রোহিঙ্গা মার্কেট
385022
২৮ মার্চ ২০১৮ দুপুর ০২:২৪
বাকপ্রবাস লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাইযান, আমি একা থাকি, পরিবার আনার সৌভাগ্য হয়নি। আমার নাম্বার ০০৯৬৬ ৫৭৮৫৬৯৬২০, জেদ্দা কিলো আরবাতাস, রোহিঙ্গা মার্কেট
২৮ মার্চ ২০১৮ দুপুর ০২:৩৭
317504
আবু সুফিয়ান লিখেছেন : I make my comments based on “বিকেলে উমামার আম্মু বলেছিল আজকে টিউশনিতে যাবার আগে খোঁজ নিয়ে যেতে” and I mean they are now with you.
২৯ মার্চ ২০১৮ রাত ১২:৫০
317507
বাকপ্রবাস লিখেছেন : হা হা, শ্বশুর, চাচা শ্বশুর, মামা শ্বশুর মূলত সবই সওদি আরব থাকে, তায় তাদের মাঝে নিত্য যোগাযোগ থাকে, কে কী করছে, খাচ্ছে ইত্যাদি আলাপ হয়, ফুফু শ্বাশুড়ি আসছে উমরাহ করতে, তাকে নিয়ে সবাই উমরাতে গেছে, সেই খবরটা আমি না পেলেও দেশে চলে গেছে।
385027
২৮ মার্চ ২০১৮ রাত ১১:২০
নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা লিখেছেন : আহারে আপনার মাছের অবস্থা জেনে তো খারাপই লাগছে। আপনি যেটাকে রোহিঙ্গা মার্কেট বলছেন সেটা কি বার্মিজদের মার্কেটটি। আমরা ওখানে ২/৩ বার গিয়েছিলাম ফ্রেশ উট আর গরুর গোশের জন্য।দেখতে একদম চট্রগ্রামের কর্ণফুলী বা কাজির দেউড়ি বাজারের মতই লেগেছে।
২৯ মার্চ ২০১৮ রাত ১২:৫৩
317508
বাকপ্রবাস লিখেছেন : হুম সেটাই, রেয়াজুদ্দিন বাজার আরকি হা হা হা এখন দিনে চৌদ্দবার পুুলিশি হাঙ্গামা চলে, দোকানের বাইরের ব্যাবসাগুলোতে অভিযান চালায়, তায় একটু পরিষ্কার থাকে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File