বেতন হয়নি ৬৭ শতাংশ পোশাক কারখানায়

লিখেছেন লিখেছেন নুর হুসাইন ১৫ জুন, ২০১৮, ০৩:৩৭:১০ দুপুর



প্রথম পাতা, খবর

শিল্প অধ্যুষিত অঞ্চল

বেতন হয়নি ৬৭ শতাংশ পোশাক কারখানায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

| ০২:৩০:০০ মিনিট, জুন ১৩, ২০১৮

1300 Shares

ঈদ সামনে রেখে ১০ জুনের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পোশাকসহ সব শিল্প খাতের কারখানা মালিকরা। কিন্তু বরাবরের মতো এবারো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি তারা। শিল্প অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোর অধিকাংশ কারখানাই প্রতিশ্রুত সময়ে বেতন পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। ১১ জুন পর্যন্ত পোশাক খাতের ৬৭ শতাংশ কারখানায় বেতন হয়নি বলে শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ফলে দু-তিনদিন ধরে অস্থিরতা বিরাজ করছে শিল্প অধ্যুষিত এলাকায়।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বেরাইদেরচালা গ্রামের ওয়েস্টারিয়া টেক্সটাইল কারখানার প্রায় ৪০০ শ্রমিক ও স্টাফ বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত মহাসড়কে অবস্থান নেন তারা। এ সময় অন্তত ১০টি বাস ভাংচুর করা হয়। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।

এর আগে গত রোববার বকেয়া বেতনের দাবিতে রাস্তায় নামেন বোর্ডবাজারের ইস্ট-ওয়েস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা। এছাড়া শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোর আরো বেশকিছু কারখানায় বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে গত পাঁচদিনে। এর মধ্যে গাজীপুরের ইয়ায়মান টেক্সটাইল কারখানার দুই হাজার শ্রমিক বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

শিল্প পুলিশ গাজীপুরের পরিচালক মো. সিদ্দিকুর রহমান গতকাল বণিক বার্তাকে বলেন, গাজীপুরে পোশাক খাতের ৩৭ শতাংশ কারখানায় বেতন পরিশোধ হয়েছে। তবে গত পাঁচদিনে বেতন হয়নি এমন কিছু কারখানায় শ্রম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বেতন-বোনাসের দাবিতে গতকালও শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করেছেন। আমরা তাদের সরিয়ে দিতে গেলে এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। কিছু রাবার বুলেটও ছুড়তে হয়েছে।

দেশের শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে— আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনা। শিল্প পুলিশের হিসাবমতে, এসব অঞ্চলে শিল্প-কারখানা রয়েছে মোট ৭ হাজার ৭৮টি। এর মধ্যে পোশাক খাতের কারখানার সংখ্যা ৩ হাজার ২৮৮ ও অন্যান্য খাতের কারখানা ৩ হাজার ৭৯০। পোশাক কারখানাগুলোর মধ্যে ১ হাজার ৯৭টি গত ১১ জুন পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করেছে। আর বোনাস পরিশোধ করেছে ৮২৬টি কারখানা।

জানা গেছে, বিজিএমইএর সদস্যপদ আছে এমন ৫২০টি কারখানা এখন পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করেছে। আর বোনাস পরিশোধ করেছে ৩৫১টি সদস্য কারখানা। পোশাক শিল্প মালিকদের আরেক সংগঠন বিকেএমইএ সদস্য কারখানাগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করেছে ৩৩৫টি কারখানা। আর বস্ত্র খাতের শিল্প মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সদস্য কারখানাগুলোর মধ্যে বেতন পরিশোধ করেছে ১৮টি এবং বোনাস পরিশোধ করেছে ১৪টি।

পোশাক কারখানায় বেতন পরিশোধের হার কম কেন জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ১৪ জুন সব কারখানা বন্ধ হবে। সেদিনই সব বেতন দেয়া হবে।

৬৭ শতাংশ কারখানা বেতন পরিশোধ করেনি এমন তথ্যের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এটা অসম্ভব। আমাদের কমপ্লায়েন্ট কারখানা ৭০ শতাংশ। এ ৭০ শতাংশ কারখানায় যেকোনোভাবেই বেতন পরিশোধ করতে হবে যথাসময়ে। ব্যাংকিং বা কোনো ধরনের সমস্যা এখন পর্যন্ত নেই। অনেক কারখানায় শ্রমিকরাই বেতন নিতে চাচ্ছেন না, তারা যেদিন বন্ধ হবে সেদিন বেতন নেবেন বলে আগে নিচ্ছেন না। ছোটখাটো টুকটাক সমস্যা হয়, সেগুলো সমাধানও হয়ে যায়।

এদিকে শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, ঈদ উপলক্ষে অনেক মালিকই বেঁধে দেয়া সাত কর্মদিবসের মধ্যে বেতন পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধের দিন বেতনসহ শ্রমিকদের অন্যান্য প্রাপ্য পরিশোধ করেন। এক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় ঘটলেও মালিক-শ্রমিকের সমঝোতার ভিত্তিতে এটা সম্ভব হচ্ছে। তবে অসন্তোষপ্রবণ কারখানাগুলোর মধ্যেই দু-একটায় এরই মধ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এজন্য শিল্প পুলিশ কঠোর নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।

শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এবার চামড়া ও আবাসনসহ শিল্প খাতের মোট ৪৪২টি কারখানায় বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে অসন্তোষের আশঙ্কা রয়েছে। এসব কারখানার আওতায় শ্রমিক রয়েছেন ৪ লাখ ২৬ হাজার ২৩৮ জন। অসন্তোষপ্রবণ কারখানাগুলোর মধ্যে পোশাক খাতের কারখানার সংখ্যা ২৮৮টি, যেখানে কর্মরত আছেন ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৭৩৯ শ্রমিক। এর মধ্যে ১৬৫টি কারখানা আবার বিজিএমইএর সদস্য। অবশিষ্ট ৮৬টি বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানা। বাকি ১৪টি কারখানা বিটিএমএর সদস্য।

শিল্প পুলিশ-১-এর আওতাধীন আশুলিয়া এলাকায় অসন্তোষপ্রবণ কারখানা রয়েছে ৯৭টি। এর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য ৩১, বিকেএমইএর ১৭, বিটিএমএর সদস্য দুটি কারখানা। এছাড়া অন্যান্য খাতের কারখানা রয়েছে ৪৭টি।

শিল্প পুলিশ-২-এর আওতাধীন গাজীপুরে অসন্তোষপ্রবণ কারখানা রয়েছে ১৩৩টি। এর মধ্যে বিজিএমইএ সদস্য ৬৬টি, বিকেএমইএর সদস্য ১৯টি ও বিটিএমএর সদস্য তিনটি। এছাড়া অন্যান্য খাতের কারখানার সংখ্যা ৪৫টি।

শিল্প পুলিশ-৩-এর আওতাধীন চট্টগ্রামে অসন্তোষপ্রবণ কারখানার সংখ্যা ৯২। এর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য ৪৩টি, বিকেএমইএর সদস্য চারটি ও বিটিএমএর সদস্য সাতটি কারখানা। বেপজার আওতায় ইপিজেডের কারখানা রয়েছে ১৪টি। এছাড়া অন্যান্য খাতের কারখানার সংখ্যা ২৪।

শিল্প পুলিশ-৪-এর আওতাধীন নারায়ণগঞ্জে অসন্তোষপ্রবণ কারখানা ৮৫টি। এর মধ্যে বিজিএমইএ সদস্য ১১টি, বিকেএমইএর সদস্য ৪৬টি, বিটিএমএর সদস্য সাতটি এবং অন্যান্য খাতের কারখানা রয়েছে ২১টি।

শিল্প পুলিশ নারায়ণগঞ্জের পরিচালক ইলতুতমিশ বণিক বার্তাকে বলেন, নারায়ণগঞ্জে প্রায় ৫০ শতাংশ পোশাক কারখানায় বেতন পরিশোধ হয়েছে। আর সব মিলিয়ে গড়ে ৫৮ শতাংশ কারখানায় বেতন পরিশোধ হয়েছে। গত চার-পাঁচ দিনে এখানে শ্রমিকদের রাস্তায় নামার মতো ঘটনা ঘটেনি। তবে ছোটখাটো বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে, যেমন— কাজ বন্ধ করে বসে থাকা, ফটকের সামনে জড়ো হওয়া।

শিল্প পুলিশ-৫-এর আওতাধীন ময়মনসিংহে অসন্তোষপ্রবণ কারখানা রয়েছে ২৪টি। এর মধ্যে বিজিএমইএ সদস্য ১৪টি, বিটিএমএর সদস্য চারটি এবং অন্যান্য খাতের কারখানা ছয়টি। এছাড়া শিল্প পুলিশ-৬ খুলনায় অসন্তোষপ্রবণ কারখানা রয়েছে ১১টি। সব কারখানাই পোশাক খাতের বাইরের

বিষয়: বিবিধ

৪৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File