চিঠি (কবর)-৫৬-৫৮ (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১১:০১:৩৪ সকাল

কিছুক্ষণ পর তার চেতনা ফিরল। স্বরণ হল খোদাদ্রোহীতার কথা কিন্তু তার বিশ্বাস সে মাফ পেয়ে গেছে। কারণ খাটি তওবার পর বান্দা নিষ্পাপ হয়ে যায়। তারপর সে হাসতে হাসতে উঠে বসল, উর্ধ্বে তাকিয়ে হাসতে লাগল। এই হাসি দ্রোহের নয়, এই হাসি মোসাহেবির, এই হাসি আপোষের, আনুগত্যের। কিন্তু দীর্ঘ দিনের অনশন ক্লিষ্ট শরীরে এমনিতেই চেতনা কম, তার উপর ব্রহ্মপুত্রের তীরে সারা রাত ধরে রোদন মাতম তার অবশিষ্ট চেতনাটুকুও বিলুপ্ত করে দিয়েছে। আবার সে আল্লাহ্‌র সাথে মোসাহেবি ও পাগলামি কথা বার্তা বলা শুরু করল। সে উঠে দাঁড়াল, তারপর উর্ধ্বে তর্জনি নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলল, আসলে কি জান, গ্রাম্য লোকেরা বলে, তুমিই জামাইয়ের বাপ তুমিই কন্যার বাপ। ভদ্দর লোকেরা বলে, তুমিই সর্প হয়ে দংশন কর, আবার তুমিই ওঝা হয়ে ঝাড়। কত রঙ্গ দেখালে তুমি।

এই যে আমাকে মুসলমান বানালে, তোমাকে জানার ও বোঝার তাওফীক দিলে। তোমার আনুগত্যের ঘেরাটোপে আবদ্ধ রাখলে, আমার উপর অনেক অনুগ্রহ করলে। ওমা, একি কান্ড, হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই আমার মত এমন একটা খাটি অনুগত সাফ কাওলার গোলামকে দিয়ে মালিকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করিয়ে দিলে। তারপর ইচ্ছা করলেই তুমি বিদ্রোহীকে শায়েস্তা করতে পারতে। এই যে আমার চারিদিকে কত বজ্রপাত হল একটা বজ্র আমার মাথার উপর চালান দিয়ে দিলেই তো আমি দাঁড়িয়ে থাকার পরিবর্তে এতক্ষণে আমার দেহের টুকরাগুলি কাঠ পোড়া কয়লার মত বিক্ষিপ্তভাবে মাটিতে পরে থাকত। আর এ অবস্থায় মরলে আমাকে যে কোন ঠিকানায় যেতে হত, উহঃ তা ভাবতে গেলেও কলিজা ফেটে যায়। কিন্তু না, তুমি তা করলে না, আমি শিরক না করার কারণেই হউক বা তোমার প্রতি আমার আনুগত্যের কারণেই হউক বা তোমার দয়ার কারণেই হউক তুমি আমার উপর অনুগ্রহ করলে, আমাকে তওবার সুযোগ দিলে, আসলেই তোমার দয়ার অন্ত নেই। এ জন্যই তো আমরা সবাই মিলে তোমার নাম দিয়েছি রহমান ও রহীম।

আমি জানি, তুমি আমার তওবা কবুল করেছ, কারণ তুমিই তো বলেছ, ‘কেউ যদি তোমার দরবারে দুয়েক ফোটা তেল (অশ্রু) ঝরায় তাহলে তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে তোমার লজ্বা হয়’। আর আমি দুয়েক ফোটা কেন আমার দু’টি সরিষা ভাণ্ডার (চোখ) থেকে কয়েক বালতি তেল গড়িয়েছি। কাজেই আমি এখন নিষ্পাপ- মাসুম। আর এই যে এত কিছু হল, আমি বিদ্রোহ করলাম তোমাকে গালাগালি করলাম, এ সবের জন্য কিন্তু আমি একদম দায়ী নই, মূল দায়ী হলে তুমি। কারণ তুমিই তো বলেছ, ‘লা তাসকুতু মিন ওরাকাতিন ইল্লা ইয়ালামুহা- তোমার অজ্ঞাতসারে কোন বৃক্ষপত্রও ঝরে পরে না’। এই মহাবিশ্বে যা কিছু ঘটছে গোচরে আর যা কিছু হচ্ছে অগোচরে এ সবই হচ্ছে তোমার জ্ঞাতসারে এবং এ সব কিছুই তোমার কুনের কারিশমা। এই ইউনিভার্সের অন্তরিক্ষে আর নিরিক্ষে যা কিছু আছে- এসব কিছুর মূল হলো তোমার এই কুন। যেমন তুমি বলেছ, ‘ইযা আরাদা শাইয়ান আইয়্যা কুলা লাহু কুন ফায়াকুন’। অর্থাৎ যখনি তুমি কোন কিছু ইচ্ছা কর তখন শুধু বল কুন (হয়ে যা) আর তখনি তা হয়ে যায়।

যেমন তুমি মুজিব জিয়াকে কইলা কুন মুসলিমা, ব্যস তারা মুসলমান হয়ে জন্ম নিল। গান্ধি, নেহেরু, বসুকে কইলা কুন হিন্দ, ব্যস তারা হিন্দু হয়ে জন্মাল। ফ্রয়েড, ডারউইন, মার্ক্সকে কইলা কুন ইয়াহুদ, ব্যস তারা ইহুদী হয়ে জন্মাল। নিউটন, ওয়াশিংটন, লিঙ্কনকে কইলা কুন নাসারা, ব্যস তারা খৃষ্টান হল। মিসরের এত মোটা তাজা ক্ষমতাবান রাজা রেমিসিসকে বললা কুন ফিরাউন আর তার পালক পুত্রকে কইলা কুন মুসা। এই ভাবে তুমি জাদুকরের মত কুন-এর খেলা খেলে এই মহাবিশ্বের চাকাটি ঘুরিয়ে যাচ্ছ। খেলাও যত খুশি তত খেলাও, আপত্তিও নাই, সমস্যাও নাই। কিন্তু সমস্যা হল একটাই, ইয়াওমে দ্বীন (কিয়ামতের দিন) তো তুমি গর্জন তুলবে, ‘এই যত নেতা খেতা রাজা বাদশাহ সব কটা এদিকে আয়’। তারপর কাহহার রূপ ধারন করে হুঙ্কার ছাড়বা, ‘লিমানিল মুলকুল ইয়াওমা- আজকের দিনের সার্বভৌমত্ব- প্রভুত্ব কার? তোমার এই হুঙ্কার ৪০ বছর পর্যন্ত ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতে থাকবে। আর এই গর্জনের গরমে রাজা বাদশা নেতা খেতা সবগুলির ডায়রিয়া হয়ে যাবে। তখন তো তুমি কইবা, ‘তোরা যারা হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদী, খৃষ্টান হইছস- তোরা সব কটা মালাউন। আমি কইছিলাম না মুসলমান হইতে, মুহাম্মদের (সাঃ) অনুসরণ করতে। তোদের ধর্ম গ্রন্থে আমি কি বলে দেই নাই, কল্কি নরাসংশ (বেদ), প্যারাক্লীত, ফারানের ভাববাদী, উস্ট্রারোহি (বাইবেল), মৈত্রেয় বুদ্ধ (ত্রিপিটক) যখন আসবে তখন তার অনুসরণ করবে? কিন্তু তোরা তা করিস নাই। এখন যা, সোজা জাহান্নামের দিকে রাস্তা মাপ। আর এই মুজিব- জিয়া, তোরা আবার কাপাকাপি করতাছস ক্যা, কাপড় নষ্ট করিস না, যা তোদেরকে ছেড়ে দিলাম, আপাতত জান্নাতের দিকে হাটতে থাক।

এখন কথাটা হল, আমাকে মুসলমানের ঘরে জন্ম দিয়ে মুসলমান বানাইলা আর চ্যাটার্জি, মুখার্জি, ব্যানার্জিকে হিন্দুর ঘরে জন্ম দিয়ে হিন্দু বানাইলা। তারপর ওপারে গিয়া তো আবার ঠিকই বিচার করবা, নাকি ছাড় দিবা? এজন্যই গেয়ো লোকেরা তোমাকে বলে, ‘তুমিই জামাইয়ের বাপ তুমিই কন্যার বাপ। ভদ্দর লোকেরা কয়, তুমি সর্প হয়ে দংশন কর তুমিই ওঝা হয়ে ঝাড়। এই রাগে দুঃখেই ঐ যে ফিরোজ শাই আছিল না, সে সারা জীবন গাইল, ‘ইচ্ছাতে তোমার বানাইয়্যা মানুষ তবুও কেনে আমি অপরাধী’। কিন্তু এই বেটা একদিন নিয়ম ভঙ্গ করে গাইল, ‘এক মিনিটের নাই ভরসা সাঙ্গ হবে রং তামাসা’। এই নিয়ম ভঙ্গ করার কারণে তুমি চটে গিয়েছিলে কিনা জানি না। কারণ সে ‘সাঙ্গ হবে রং তামাসা’ বলার সাথে সাথে তার ইহলীলাটাও সাঙ্গ হয়ে গেল, বেচারা মঞ্চেই ঢলে পরল। আচ্ছা সাঙ্গ হউক সমস্যা নাই, শুধু তার সুন্দরী বউটা বিধবা হল আর বাচ্চারা ইয়াতিম হল এই যা, আচ্ছা তাতে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু সমস্যাটা তো হল এই জায়গায় যে, এখন তো তুমি তাকে জিজ্ঞেস করবা, ‘এই হারামজাদা জানস না আমি গান বাদ্যি বাজনা হারাম করেছি, গান করলি কেন, এখন জাহান্নামে যা। আচ্ছা তখন যদি সে আবার গাইতে শুরু করে, ‘ইচ্ছাতে তোমার বানাইয়্যা মানুষ তবুও কেনে আমি অপরাধী। আচ্ছা, তখন তুমি কি উত্তর দিবা? আমার কিন্তু বড্ড হাসি পায়। যাউক গা, মালিকের ব্যাপার স্যাপার নিয়া গোলামের মাথা ঘামানোর অধিকার নাই।

আসল কথা পাড়ি, এই যে তুমি কুন এর খেলাটা খেলছ, একটা একটা করে কুন মার আর আড়ালে বসে কুট কুট করে হাস কিন্তু এই কুন এর ঠেলায় আমাদের যে কি বাঁশটা যায় এটা তো তুমি একবার চিন্তা করলা না। এ সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিচ্ছি। তোমার তো জানাই, তবুও তোমার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বলছি। ঐ যে আমাদের পশ্চিম পাড়ার অলিম আছিল না, ঐ যে কাদির ড্রিলার ও কাশেম মেম্বারের বাপ, লতার পাতা হিসাবে আমাদের নানা লাগত, আমরা নানা ডাকতাম। এই হালায় তামাক খাইত মানে সেবন করত, আবার কামলাদের জন্যও তামাক কিনে আনত। একদিন সে মাটির টোকা (লোটা) নিয়ে তামাক ও লালি কিনার জন্য কাইচাপুর বাজারে গেল। সে ছয় আনার লালি (কালচে লাল বর্ণের গাঢ় তরল যা দ্বারা তামাক পাতা মলে সেবনোপযোগি করা হয়, এটা সম্ভবত গুড়ের গাদ দিয়ে তৈরি করা হত) কিনে টোকাটা পাশে রেখে তামাকের গুড়া কিনতে ব্যস্ত। তখন পাশ দিয়ে এক লোক যাওয়ার সময় পায়ের গুতা লেগে টোকাটা উল্টে লালি মাটিতে পরে গেল। আর সাথে সাথে লোকটা ‘ওহ হো’ বলে আফসোস করল। তখন অলিম নানা কইল, ‘আপনের তো গেল ‘ওহ হো’ আমার তো গেল ছয় আনা’। অর্থাৎ ঐ লোক তো শুধু একটা ‘ওহ হো’ ব্যয় করল, সে তো লালিও কিনে দিবে না আর পয়সাও ভর্তুকি দিবে না কিন্তু তার তো ছয় আনা মাটিতে মিশল। এরপর থেকে ‘আপনের তো গেল ওহ হো আমার তো গেল ছয় আনা’ এই বাক্যটা আমাদের দেশে একটা বাগধারা বা প্রবাদ হিসাবে প্রচার পেয়ে গেল। ভর্তুকিযোগ্য নয় বা ভর্তুকি দেয় না এমন ক্ষতির ক্ষেত্রে এই বাগধারাটা ব্যাপক ব্যবহৃত হতে থাকে। আমারও ধান্ধা হচ্ছে, বাগধারাটা দুই বাংলায় ছড়িয়ে দেয়া- যাতে বাঙালিরা এই অমূল্য বাগধারার মূল্যে উপকৃত হতে পারে।

যাউক গা, এখন আমিও তোমাকে কইতে চাই, তোমার তো যায় শুধু একটা কুন কিন্তু আমাদের তো যায় বাঁশ। এই যেমন ধর আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন আমার বাবাকে বললা ‘কুন মওতা’ ব্যস বাবা মারা গেল। তারপর আমাদের কি অবস্থাটা হল, আমরা ইয়াতিম হলাম, দুঃখ কষ্ট করলাম। এই যেমন আমার বউটা বোনের বাসায় বেড়াতে গেল আর তুমি বললা ‘কুন ইযহাবি- চলে যা’ ব্যস সে চলে গেল। কিন্তু এখন আমার যে বরাক বাশটা যাচ্ছে সেটা কি তুমি টের পাচ্ছ, নাকি বুঝতে পারছ, নাকি বুঝতে চেষ্টা করবা? করবা না জানি। এই যে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ, হেফাজত, জামাত, এরা সবাই মুসলমান তোমার বান্দা, রাসূল (সাঃ) এর অনুসারী, মসজিদে নামায পরে রোযা রাখে, সবাই ভাই ভাই। কিন্তু তুমি ওদেরকে বললা ‘কুন মারামারি’ ব্যস তোমার তো গেল একটা কুন মাত্র কিন্তু আমাদের তো দেশ রক্তাক্ত হল। ইয়াতিম বিধবার আহাজারিতে বায়ুমণ্ডল বিষাক্ত হল, সন্তান হারা মায়ের অশ্রুতে যমিন সীসাক্ত হল।

আবার মানব প্রজন্মের দানব আলেকজান্ডার, নেপোলিয়ন, হিটলার, লেলিন, বুশ বাপ বেটা, এই বিচ্ছুগুলিকে তুমি কইলা ‘কুন কিতাল’ ব্যস যুদ্ধ বেধে গেল। মরুভূমি বনভুমির উপর দিয়ে মানবতার রক্তের বন্যা ছুটে গেল, পৃথিবী কয়েক বার পুরুষ শুন্য হয়ে গেল। এ জন্যই তো আমি একবার নয় একশ বার বলব, ‘তোমার তো যায় শুধু একটা কুন আর আমাদের তো যায় বাঁশ। কিন্তু কোন বরাক বাশটা যায় তা তুমি বুঝও না বুঝতে চেষ্টাও কর না। আচ্ছা না বুঝলা কিন্তু আমাকে একটা জিনিস বুঝাও। প্রতি সেকেন্ডে পৃথিবীতে অযুত কোটি ঘটনা ঘটে, তাহলে তুমি একক সত্বা প্রতি সেকেন্ডে অযুত কোটি বার কুন বল কেমনে? এ সম্পর্কে আমার বুদ্ধিমত্তা ও মজার ঘটনাটা তোমাকে বলছি, অবশ্য তুমি তো আলিমুল গায়েব- সবই জান, তবুও তোমার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বলছি।

আসলে হাসানের অবস্থা হল মুসা (আঃ) এর মত। তুর পাহাড়ে আল্লাহ্‌ মুসাকে জিজ্ঞেস করলেন মুসা তোমার হাতে ওটা কি? তখন তার এটুকু উত্তর দেয়াই যথেষ্ট ছিল যে, হাযা আসায়া- এটা আমার লাঠি। কিন্তু না, তিনি লম্বা তফসীর ফেদে বসলেন, ‘ক্বালা হিয়া আসায়া, আতাআক্বাইয়ু আলাইহা ওয়া আহুশ্যু বিহা আলা গানামিন, ওয়া লীয়া ফিহা মাআরিবু উখরা- এটা আমার লাঠি, এটাতে আমি ভর দেই, এটা দিয়ে ছাগল তাড়িয়ে নেই এবং এর দ্বারা আমি অন্যান্য কাজ কর্ম করে থাকি। মুসা (আঃ) এর এত লম্বা বক্তৃতার কারণ হল মানুষ যখন তার চির আরাধ্য, সর্বাধিক প্রিয় কাউকে কাছে পেয়ে যায় তখন সে প্রিয়জনের সাথে আলাপের ডালি ঢেলে দেয়, লম্বা আলাপের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় প্রিয়জনকে কাছে ধরে রাখতে চায়। যেমন নব দম্পতি সারা রাত জেগে জেগে আলাপ করে তবুও গল্প শেষ হয় না। তদ্রুপ মুসা (আঃ) আল্লাহকে কাছে পেয়ে আলাপের বস্তা খোলে দিয়েছিলেন।

একই অবস্থা হল হাসানের। কারণ তার বিশ্বাস তার তওবা কবুল হয়েছে, এখন সে নিষ্পাপ। আর এ অবস্থায় আল্লাহ্‌ বান্দার খুব কাছাকাছি থাকে, বান্দার প্রতি সন্তুষ্টচিত্ত থাকে। তখন তিনি বান্দার কামনা বাসনা পুরা করেন, এ জন্যই সে আল্লাহ্‌র সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে আলাপ শুরু করেছে। দীর্ঘ গপ্প ফেদে বসে আল্লাহকে ভুলাতে চাচ্ছে। ভুলাতে চাচ্ছে সে ঐ শিশুর মত যে কারো হাতে লজেন্স, বিস্কুট বা মোয়া দেখল আর তা খেতে তার মন চাইল। তখন সেটা পাওয়ার জন্য শিশুটা বাজে গপ্প, প্রগলভতা ও অঙ্গভঙ্গি শুরু করে দেয়। মোয়াটা না দেয়া পর্যন্ত সে অভিনয় চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু মোয়াটা দেয়ার সাথে সাথে সে খেতে খেতে চলে যায় আর একটা কথাও বলে না। হাসানেরও একই অবস্থা, তার আসল উদ্দেশ্য হল বউকে পাওয়া আর এই মোয়াটা আছে আল্লাহর হাতে। তাই সে চাচ্ছে আল্লাহ্‌র সাথে খাতির জমিয়ে মোসাহেবি করে, তোষামোদ করে, ঘনিষ্ঠ হয়ে, ভুলিয়ে ভালিয়ে হঠাৎ বউ ফেরত পাওয়ার দাবী করে বসবে, তখন যেন আল্লাহ্‌ তাকে খালি হাতে ফেরত দিতে লজ্বা পায়। এ জন্যই সে বালখেল্লাপনা ও প্রগলভতা শুরু করে দিয়েছে, গপ্প দীর্ঘায়িত করছে। আর এমনটা ভাবার কারণ হচ্ছে, আসলে তার কোন বাহ্যিক অনুভুতি নাই। দীর্ঘ দিনের অনশন, সারা রাত্রির ক্লেশ তাকে চেতনাহীন করে দিয়েছে। এ জন্যই যা মুখে আসছে তাই বলছে কিন্তু কী বলছে তা সে নিজেই জানে না।

সে বলল, ‘ফররুখ শিয়ারের ঘটনা, সে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সহপাঠী। ভার্সিটি ভর্তি হওয়ার পর সে ভাবল মুই কি হনুরে, আবার বাংলা সাবজেক্টটা নাস্তিক হওয়ার জন্য খুবই উপকারি, উপযোগী, দরকারি ও ফলপ্রসু একটা সাবজেক্ট। বেচারার তো গেল মাথা ঘোরে। নিজেকে প্রগতিশীল নাস্তিক পরিচয় দিতে শুরু করল। মৌলবাদের বিরুদ্ধে সে খড়গহস্ত। সে আমাকে মৌলবাদী ভাই বলে ডাকত আর আমি তাকে আগে প্রগতিশীল ভায়া ডাকতাম কিন্তু পরে প্রগতিশালা ডাকতাম। এই নামকরণের পিছনে একটা শানে নুযুল আছে।

যেদিন থেকে পৃথিবীতে পাশ্চাত্যের দাজ্জালি বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেদিন থেকে ইসলামকে পরাজিত শক্তি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর সেদিন থেকেই মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া কিছু জারজ রুশো, ম্যাকয়াভেলি ও মার্ক্সদের আব্বা হুযুর ডাকতে শুরু করল। এরা পাশ্চাত্যের মানবতা বিধ্বংসি পুঁজিবাদ, ভোগবাদ, বস্তুবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, সমাজতন্ত্র ইত্যাদিকে জীবনাদর্শ হিসাবে গ্রহণ করল। কিন্তু তাদের কুৎসিত প্রবৃত্তিকে আড়াল করার জন্য নিজেদের নামকরণ করল প্রগতিশীল। এরা চলনে বলনে আচরনে দাজ্জালের আদর্শ গ্রহণ করল আর যাহির করল তারা দাজ্জালের সন্তান, পৃথিবীর শাসক সমাজের লোক। জনগন তাদেরকে শাসক শ্রেণীর মনে করে সম্মান দেখাল। যদিও এরা আত্মপুজারি অকাট মুর্খ।

পক্ষান্তরে যারা ইসলাম পন্থি, ইসলামের যথার্থ অনুসারী তারা যত বড় জ্ঞানী, গুণী, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী হউক না কেন তারা পরাজিত শক্তির (ইসলাম) প্রতিনিধি বলে গন্য হল, এদেরকে কোণঠাসা করা হল, সমাজও এদেরকে অবমূল্যায়ন করল। ফলে তারা নিজেরাও হীনবল হয়ে হীনমন্যতায় ভুগল এবং ঐ প্রগতিশীলদের পীড়নে ও শাসনে নত হয়ে গেল। সঙ্গত কারণে আমিও ফররুখ শিয়ারের সামনে নত হয়ে থাকতাম। যদিও জানা শুনা বিদ্যে বুদ্ধিতে তার উচ্চতা ছিল সর্বোচ্চ আমার হাঁটু বরাবর। আমি মনে করতাম আমাদের দৌড় তো মসজিদ পর্যন্ত কিন্তু তারা প্রগতিশীল, তারা দেশ জাতি রাষ্ট্রে গতির সঞ্চার করবে, জাতির ভাগ্য উন্নয়ন করবে, দেশের উন্নতি করবে, বিশ্বসভার আসরে দেশের গৌরব প্রতিষ্ঠিত করবে, জাতির রক্ত কনিকায় বলাকার গতি সঞ্চার করবে। কিন্তু খুব শীঘ্রই আমার এ ভ্রম কেটে গেল। অবশ্য আগে থেকেই আমার জানা ছিল মসজিদ পর্যন্ত আমাদের দৌড়টাই প্রকৃত দৌড়। কারণ মসজিদ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হলে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হত এবং আমাদের ক্ষমতার দৌড়টাও মর্ত থেকে আরশে মুকাম পর্যন্ত বিস্তৃত থাকত। কিন্তু ইসলাম পন্থিদের বিভক্তি ও কূপমণ্ডূকতার কারণে তারা নিজেরাও গোল্লায় গেল আর ইসলামকেও ভাগাড়ে পাঠাল।

কিন্তু প্রগতিশীলদের সকল ব্যাপারে আমি যতই জানতে লাগলাম, তাদের বক্তব্য, বিবৃতি, লেখালেখি দেখতে লাগলাম ততই আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠল যে, এই প্রগতিশীলদের সকল গতির মূল উপলক্ষ হচ্ছে নারীদেহ। জ্ঞান-বিজ্ঞান দেশ জাতির উন্নয়ন কোন দিকেই তাদের কোন গতি নেই। তারা জাতি- রাষ্ট্রে কোন অবদান রেখেছে, উন্নয়ন করেছে বা কোন কিছু আবিষ্কার করেছে এমন কোন প্রমাণ নেই, যা কিছু করেছে মৌলবাদিরাই করেছে। কারণ প্রগতিশীলদের গতিটা নারীদেহ পর্যন্ত গিয়েই স্থির হয়ে যায়। যে কোন মোটা মাথাও এই নাস্তিক মুরতাদ ওরফে প্রগতিশীলদের বক্তব্য, বিবৃতি ও লেখালেখি দেখলেই বিষয়টা বুঝতে পারবে, বেশি চিন্তা করতে হবে না। এখানে আমি দু’টি উদাহরণ দিচ্ছি।

হঠাৎ একদিন শুনলাম দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। আর তার কামান্ডার হলেন থাবা বাবা নামে এক ভদ্র লোক। সে ধর্মের উপর থাবড়া মারতে মারতে প্রগতিশীল হয়ে গেল। বাইসেক্স, হুমোসেক্স, উড়াল সেক্স আরো দুনিয়ার যত সেক্স আছে সবকিছু করতে করতে হঠাৎ তার দেহের গতি এতই বেড়ে গেল যে, সকল নারীদেহ ডিঙ্গিয়ে গিয়ে তার মা ও বোনের দেহ পর্যন্ত পৌঁছে গেল অর্থাৎ সে নাকি অজাচারি। অবশ্য এটা আমি নিজের চোখে দেখি নাই অন্যদের কাছে শুনেছি। যারা এটা প্রচার করেছে তারা কি শেখের পোলা (সত্য) নাকি দুষ্ট পোলা (মিথ্যা) তা আমার জানা নাই, একমাত্র তুমিই জান কারণ তুমি আলেমুল গায়েব। তখন কয়েকটা পাজি পোলাপান দুষ্টুমি করে বসল। লিবারেশন ওয়ার- এর এই কামান্ডারকে মেরে ঠিক কুকুরের মত কুণ্ডলী পাকিয়ে রেখে চলে গেল। এদিকে হীরক রাজা ফরমান জারি করে দিয়েছে তার রাজ্যে হাসতে মানা, কারণ কামান্ডার মারা গেছে, শোক দিবস পালন করতে হবে। তার সেপাই সান্ত্রীরা ঘোরে বেড়াচ্ছে যেই হাসবে তাকেই ধরবে।

তখন আমার দেখা দিল আরেক বিপত্তি। আমাদের গ্রামে একটা কুকুর পাগলা হয়ে গিয়েছিল, তখন গ্রামবাসীরা ওটাকে মেরে রাস্তার ধারে ফেলে রেখেছিল। ঠিক এই কুকুরটার মতই থাবা কমান্ডারের দেহটাও কুণ্ডলী পাকিয়ে রাস্তার ধারে পরেছিল। যে কেউ দেখলে বলত দু’টি এক, কোন পার্থক্য নাই। তা দেখে আমার তো খালি ফের ফের করে হাসি পায়। কিন্তু হীরক রাজার রাজ্যে তো হাসতে মানা। তাই মুখে রুমাল চেপে হাসতাম। তখন আমার বন্ধুরা বলত, ‘এই তুই নওশা নাকি, মুখে রুমাল গুজে রেখেছিস কেন? কিন্তু যারা আমার বিষয়টা বুঝত তারা বলত, ‘আরে ছাড় তো, ও খুব লাজুক মানুষ’।

আরেকটা উদাহরণ হল, আমার তসলিমা আপু মনি। আমাদের ময়মনসিংহের গর্ব, আমাদের কি জানি বলে কৃতি নাকি কুত্তি সন্তান। সে নারী ও মানবতার পক্ষে কথা বলা শুরু করল, লেখালেখি শুরু করল, প্রগতিশীল হল। গর্বে আমাদের বুক ভরে উঠল, আমাদের মেয়ে বড় হয়েছে, ডাক্তার হয়েছে, দেশের গৌরব ডেকে আনছে, আমাদের মুখ উজ্জল করছে। কিন্তু হঠাৎ প্রগতির গতি দেখা দিল তার দেহে। দেহটা উথলে উঠল, শাওনের প্রমত্তা যমুনার মত বান ডাকল। তখন সে ময়মনসিংহের তাগড়া ছেলেদের জন্য দেহটাকে গতিশীল করল। কিন্তু শীঘ্রই বুঝল এই গতিতে হচ্ছে না আরো বাড়াতে হবে। গেল ঢাকায়, দেহের গতি বাড়াল, কবি সাহিত্যিক ও খেরাজখোরদের (এক চাঁদাবাজ তার নাগর ছিল) জন্য তার দেহটা উন্মুক্ত করল। কিন্তু যখন বুঝল দেশের বাইরেও দেহের গতি বাড়াতে হবে, তখন শিল্পি সাহিত্যিকদের নিয়ে কলকাতার হোটেলে উঠল। আবার খেলারাম চাচাকে নিয়ে চট্টগ্রাম ঘোরে এল। আরো গতি বাড়ানোর জন্য কলকাতার দাদা বাবুদের জন্য দেহটা ছেড়ে দিল। এরপরেও যখন বুঝল তার মনমত হচ্ছে না, তখন ঘোষণা দিল দুয়েক জন পুরুষ তার দেহের কাংখিক গতি দিতে পারছে না, তার একশ জন দরকার।

তখন আমি মাত্র টিন এজ অতিক্রম করেছি, পাগলামি বয়স। প্রতিদিন বিকালে বাজারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ক্যানভাসারদের লেকচার শুনি, ‘হ্যাঁ ভাই, আপনি বিয়ের আগে সারা জীবন আজে বাজে খাতায় লিখালিখি করে কালি শেষ করে ফেলেছেন। এখন নিজের খাতা (বউ) এনে বিপদে পরেছেন, লিখতে পারছেন না, কালি শেষ। এই ঔষধ নিয়ে যান, তারপর নিজের খাতায় যত খুশি লিখবেন, রাত দিন লিখবেন তবুও আপনার কালি শেষ হবে না’। এই লেকচার শুনে শুনে আমি তসলিমাকে একটা চিঠি লিখলাম, ‘তসলিমা আপুমনি, আপনি যাদের কাছে যান ওরা আগেই আজে বাজে লিখে কালি শেষ করে ফেলেছে আপনাকে ঠিকমত লিখতে পারে না। এ জন্যই আপনার মনে হচ্ছে দুয়েকজনে হবে না, আপনার একশ জন দরকার। আসলে এটা আপনার ভুল ধারণা, জীবনে কোথাও কালি ব্যয় করে নাই এমন এক জনই আপনার জন্য যথেষ্ট হবে। আর বিশ্বাস করেন, আমার এক ফোটা কালিও কোথাও ব্যয় হয়নি। আপনি চাইলে আপনার তলপেট থেকে গলা পর্যন্ত কালি দিয়ে ভরে দিতে পারব। বিশ্বাস না হলে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন’। কিন্তু এ চিঠি নিয়ে যাওয়ার সাহস পাইনি। কারণ এই কাজটাকে গেঁয়ো লোকেরা বলে ডাইল ফ্রী খাওয়া, আর যারা ডাইল ফ্রী খায় ওদেরকে লোচ্চা বলে এবং সবাই ঘৃণা করে। তাই দমে গেলাম। কিন্তু তুমি তো জান আমার কোন পাপ চিন্তা ছিল না, শুধু বহুগামিনীকে পথে আনাই লক্ষ্য ছিল। তাছাড়া সে ছিল আমার এক দশকের বড়, পত্র দিলে যদি থাপ্পড়- টাপ্পর মারে, এই ভয়েই আর যাওয়া হয়নি।

এদিকে একশ জন পাস করে তসলিমা বুঝতে পারল আন্তর্জাতিক মানের প্রগতিশীল হতে হলে দেহের গতি আরো বাড়াতে হবে, তখন সে ঘোষণা দিল, ‘কেউ আমার দেহের প্রতি হাত বাড়ালে না বলতে আমার লজ্বা হয়’ (সুত্রঃ ক)। তখন বেয়ারা চেংড়া ছেলেরা তার দিকে ব্যাপক ঝুকল। কিন্তু বাংলাদেশের আল্লামা হুযুররা সাংঘাতিক বেরসিক। তারা নিজেরাও রস করে না, অন্যদেরও করতে দেয় না, এমনকি রসবোধও নেই। যখন দেশের যুব সমাজ তসলিমার দেহ থেকে ব্যাপক উপকৃত হচ্ছিল তখন এই বেরসিক হুজুররা এত সুন্দর মালটাকে দিল তাড়া। আহ আফসোস হয়, মাগীরে কী একখান ফিগারই না তুমি দিছিলা, দেখলেই মাথা ঘুরায়া যাইত। দেশের ছেলেরা এই দেহটা থেকে উপকৃত হতে পারল না ঐ আল্লামা হুজুরদের কারণে। যাউক গা, তখন তসলিমা আনন্দাতিশয্যে দু’হাত উর্ধ্বে ছোড়ে মেরে চেচিয়ে উঠল, ইয়াহ হো, আই এম সাকসেস, আমি বিজয়ি, আমি ধন্য। এই সুযোগে আমার দেহে উল্কার গতি সঞ্চার করব, বিলিয়ে দিব প্রাচি প্রাতিচির সকল মানুষের মাঝে’। তারপর সে দেশ ছাড়ল।

ভারত বর্ষের কিম্ভুতাঙ্গদের তার দেহ আস্বাদন করাল, আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ আর পাশ্চাত্যের স্বেতাঙ্গদের মধ্যে তার দেহ বিলিয়ে দেয়ার পর চিন্তা করল, দেহ তো যথার্থ গতিশীল হয় নই। কারণ তার দেহ থেকে পৃথিবীর গুটি কয়েক লোক মাত্র উপকৃত হতে পেরেছে। কাজেই এবার সে চিন্তা করল, উদয়াচল থেকে অস্তাচলের মধ্যে প্রত্যেক যুবা বৃদ্ধ ও বালকের লাগালের মধ্যে তার দেহ পৌছে দিবে এবং রস ছড়িয়ে দিবে। কিন্তু পৃথিবীর সকল পুরুষের সাথে দৈহিকভাবে শয়ন করা তো সম্ভব নয় তবে মানসিকভাবে সম্ভব। অর্থাৎ তার দেহের স্পর্শকাতর অঙ্গগুলির ক্রিয়া কসরত সম্পর্কে রসিয়ে রসিয়ে বর্ণনা দিয়ে পৃথিবীর সকল পুরুষকে তার দেহের প্রতি লালায়িত করতে হবে। সে তাই করল, রচনা করল ‘ক’ এবং অন্যান্য গ্রন্থ। এভাবে সে পৃথিবীর বুকে স্থাপন করল এক অনন্য দৃষ্টান্ত। কারণ মহাকালের কোন ক্ষণে এমন কোথাও শুনা যায় নাই যে, কোন বার বনিতা বেশ্যার জ্বালামুখে নর শিশ্ন কত গভীরে, কত প্রান্তে আর কিভাবে সন্তরন করেছিল স্বয়ং রসাল রসে লিপিবদ্ধ করে জীব জগতের শেষ প্রান্তর পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়েছে। এভাবেই তসলিমা তার দেহটাকে সমগ্র পৃথিবীর জন্য সার্বজনিন করল, গতিশীল করে তুলল। এই হল নাস্তিক মুরতাদ ওরফে প্রগতিশীলদের যথার্থ সংজ্ঞা এবং পরিচয়। এতে কারো সন্দেহ থাকলে তারা চিন্তা গবেষণা করলেই এর সত্যতা বুঝতে পারবে।

বস্তুত আসল প্রগতিশীল হল ধার্মিকরা আর নাস্তিক মুরতাদরা হল দেহের গতিশীল। একদিন এ বিষয়টা নিয়ে আমি চিন্তা- ভাবনা করছি, আর হঠাৎ আমার দেহটা কেঁপে উঠল। কারণ এদের সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) এর সেই ভবিষ্যৎ বাণীটা আমার মনে পরে গেল যেখানে তিনি বলে গেছেন, ‘দ্বীনুহুম দানানিরুহুম ওয়া কিবলাতুহুম নিসায়ুহুম’ অর্থাৎ এমন এক যুগ আসবে যখন এই প্রগতিবাদীদের ধর্ম হবে টাকা পয়সা আর কিবলা হবে নারী। আহ কতই না বাস্তব। এই প্রগতিশীলদের জীবন আবর্তিত হয় বৈধ অবৈধ উপায়ে অর্থ রোজগার করে মদ মাৎসর্য্য ও নারীতে গা ভাসিয়ে দিয়ে। তাদের লক্ষ উদ্দেশ্য থাকে শুধু নারী দেহের প্রতি, নারীই তাদের কেবলা। এ বিষয়টা আমার সামনে পরিস্কার হওয়ার পর আমি নিয়ত করলাম ইসলামের একেকটা সত্য ওদের সামনে তুলে ধরব আর পাছায় একটা করে লাথি মারব। কিন্তু ভাবলাম যে কারো পাছায় তো লাথি মারা যাবে না, এতে পাবলিক ক্ষেপে যাবে এবং আমার বিচার করতে চাইবে। কিন্তু শালার পাছায় লাথি মারা যায়, এটা কেউ দোষনীয় মনে করে না। কাজেই আমি নিয়ত করলাম দৈনিক একটা করে প্রগতিশীলদের বোন বিয়ে করব আর ওদের পাছায় লাথাব। এ জন্যই প্রগতিশীল এর ‘শীল’ শব্দ পরিবর্তন করে শালা বানিয়ে ওদের নামকরণ করলাম প্রগতিশালা। এভাবেই ফররুখ শিয়ারকে প্রগতিশালা বলে ডাকা শুরু করলাম।

৫৭

কিন্তু তার সাথে সব সময় আটার মত লেগে থাকতাম, পথে আনার চেষ্টা করতাম। কারণ তার ও আমার মধ্যে একটা বড় মিল ছিল, আমরা উভয়েই ছিলাম আলেম পরিবারের সন্তান। কিন্তু তার বাবা ছিল আলিয়ার আলেম, এ জন্যই সে বস্তুবাদের দিকে হাঁটছিল। কারণ আলিয়ার আলেমদের নাট বল্টু ঢিলা হয়। এ জন্য তাদের অনেকের সন্তানরাও কক্ষচ্যুত হয়। এ সম্পর্কে আমি তোমাকে অন্যদিন বলব।(এক বিংশতির যীশু গ্রন্থে বলা হবে)

যাউক গা, আসল কথা পাড়ি। একদিন রাস্তা দিয়ে হাটার সময় সে আমার পিঠ চাপড়ে বলল, আচ্ছা মৌলবাদী ভাই, এ মহাবিশ্বে যা কিছু হচ্ছে সবই আল্লাহ্‌র কুন দ্বারা হচ্ছে। আল্লাহ্‌র কুন বলা ছাড়া অর্থাৎ হুকুম ছাড়া একটা গাছের পাতাও নড়ে না। এ বিষয়টা চিন্তা করতে গিয়ে গত দু’রাত ধরে আমার ঘুম নাই। আচ্ছা বলতো পৃথিবীতে প্রতি সেকেন্ডে কয়টা শিশু, কয়টা গরু, কয়টা ছাগল ইত্যাদি জন্ম নিচ্ছে আর কয়টা মরছে? আমি মাথা ঝাকালাম, বলতে পারব না। সে বলল, ‘আচ্ছা বলার দরকার নেই এমনিতেই ধর, আঠার হাজার বলিস আর আঠার লক্ষ বলিস, ধরে নে প্রতি সেকেন্ডে প্রত্যেক প্রজাতির একশ করে প্রাণী জন্ম নিচ্ছে আর একশ করে মরছে। আবার একশ করে এ্যাকসিডেন্ট হচ্ছে, মারামারি হচ্ছে, ঝগড়া হচ্ছে, প্রেম হচ্ছে, তালাক হচ্ছে, পাশ করছে, ফেল করছে, চাকরি হচ্ছে, সত্য মিথ্যা বলছে আবার প্রতি সেকেন্ডে অসংখ্য পাতা নড়ছে, রোদ বৃষ্টি হচ্ছে এভাবে প্রতি সেকেন্ডে পৃথিবীতে অগনিত ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এখন আমার বিস্ময় ও প্রশ্ন হল, আল্লাহ্‌ তো একক, এক সত্ত্বা, তিনি প্রতি সেকেন্ডে এত অসংখ্য কুন কী করে বলেন। যেহেতু তার হুকুম তথা কুন বলা ছাড়া কিছুই হয় না, কাজেই একই সময়ে তিনি এত কুন কী করে বলেন?

প্রশ্নটা শুনেই বুঝতে পারলাম আমার পুরো এক জগ পানির তেষ্টা পেয়ে গেছে, মুহুর্তেই শরীরটা ঘেমে গেল। কারণ এই আধ্যাত্মিক প্রশ্নের উত্তর আমার জানা ছিল না। কিন্তু তুমি তো আলিমুল গায়েব, সকল কারিগরের আসল কারিগর। তুমিই আমার মনে উত্তর ঢেলে দিলে। তারপর ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে একটা গাছের নীচে দুর্বা ঘাসের উপর বসলাম। তাকে বললাম, ‘শুন নাস্তিক মুরতাদরা হল অন্ধ, পশু এবং মুর্খ। কোরআনে দেখতে পাবি তোদেরকে বলা হয়েছে, আ’মা-অন্ধ। চোখ থাকতে অন্ধ বলা হল কেন? কারণ তোদের অন্তর্দৃষ্টি নেই। বস্তুত দৃষ্টি দুই প্রকার, চক্ষুদৃষ্টি ও অন্তর্দৃষ্টি। আমরা চক্ষুদৃষ্টিতে দেখতে পাই সামনের দু’তিনশ হাত পর্যন্ত। কিন্তু অন্তর্দৃষ্টি অসীম, অন্তহীন সীমাহীন। যেমন আমরা প্রাইমারিতে কি পড়েছি, বাল্যকালে কী কোথায় কার সাথে খেলেছি, আশপাশের পরিবেশ সবই মনে আছে, সে সব দৃশ্য আমরা মনের চোখে দেখতে পাচ্ছি। অন্তর্দৃষ্টি না থাকলে শুধু চোখের দৃষ্টিতে আমরা নিজেদের ও আত্মীয় স্বজনের বাড়ি এবং পরিচিত স্থান সমূহে যেতে পারতাম না, পথভুলে অন্যত্র চলে যেতাম। এটাকে বলে অন্তর্দৃষ্টি, আরবিতে বলে রুয়্যাত।

কিন্তু অতীতের কোন কিছুই আমরা চর্মচক্ষে দেখিনা শুধু চোখের সামনে কিছু জায়গা দেখি, এটাকে আরবীতে বলে বসিরত। পশুদের অন্তর্দৃষ্টি নাই শুধু চক্ষুদৃষ্টি আছে। এ জন্যই তাদের কোন জ্ঞান নেই, স্মৃতি নেই, আর এ কারনেই তারা ইতর প্রাণী বা পশু। আর নাস্তিক মুরতাদরাও যেহেতু অন্তর্দৃষ্টির দিক থেকে অন্ধ, তাই তারা কোন কিছু দেখে না, শুনে না, বুঝে না, সত্য মিথ্যা বুঝে না, তমীয করতে পারে না, এজন্যই তারা মুর্খ বা পশু। আর তুই হলি সেই অন্ধ, পশু এবং মুর্খ। মুর্খ না হলে এমন একটা সাদামাটা সহজ বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করতে হত না, তুই নিজেই বুঝতে পারতিস। আচ্ছা তুই তো আগে কিছুদিন মাদরাসায় পড়েছিস, আরবি টারবি কিছু জানা আছে না? সে বলল, ‘হ্যাঁ কিছু তো আছেই। আমি বললাম, ‘তাহলে এবার মনোযোগ দিয়ে শুন’।

আদি সৃষ্টিঃ আদিতে মহা প্রভু আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। সব কিছু অন্ধকার বিবরের ন্যায় আধারে ঢাকা ছিল। সদাপ্রভু ইচ্ছা করলেন তিনি সৃষ্টি করবেন, সৃষ্টি করবেন তিনি জগতসমূহ। তাই তিনি সর্ব আদিতে সৃষ্টি করলেন কলম। কলম দিয়ে প্রথম লিখলেন কাফ, এই কাফ- কে নর, মর্দা ও কর্তা হিসাবে স্থির করলেন। তারপর লিখলেন নুন। এই নুন কে নারী, মাদী ও কর্মের প্রতিক হিসাবে স্থির করলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, সমগ্র সৃষ্টিকে এই কাফ ও নুনের প্রকৃতি অনুসারে বিন্যস্ত করবেন। তাই তিনি কাফ ও নুনকে এক্ত্র করে একটি শব্দ তৈরি করলেন কুন, আর এই কুন দিয়েই তিনি মহাবিশ্বের সবকিছু সৃষ্টি করলেন। (আরবি ক্রিয়ামুল কানা ইয়াকুনু কাওনান অর্থ হওয়া, কোন কিছু হওয়া, এর অনুজ্ঞা কুন, অর্থ হও, হয়ে যাও)।

সৃষ্টির প্রথম দিনঃ সদা প্রভু আল্লাহ্‌ প্রথম একটা বিন্দু সৃষ্টি করতে চাইলেন। তিনি বললেন কুন, সুতরাং পৃথিবী সৃষ্টি হল। কিন্তু পৃথিবী জমাট অন্ধকার ও পানিতে বেষ্টিত ছিল। তিনি দৃশ্যমান করার জন্য বললেন, ‘কুন’ ব্যস আলো সৃষ্টি হল। তারপর রাত্রি হল এবং ভোর হল। এটাই ছিল সৃষ্টির ইতিহাসে প্রথম দিন।

দ্বিতীয় দিনঃ সদাপ্রভু আল্লাহ্‌ জলকে দু’ভাগ করার জন্য বললেন কুন। সৃষ্টি হল আকাশ মন্ডলি। জল রাশির এক ভাগ আকাশে থাকল, অন্যভাগ মর্তে থাকল। তারপর রাত হল এবং সকাল হল, এটাই ছিল সৃষ্টির দ্বিতীয় দিন। তারপর বন্ধুকে বললাম, দেখ, কুন এর কাফ এর প্রতিক হল আকাশ অর্থাৎ নর বা কর্তা। আর নুন এর প্রতিক হল মাটি অর্থাৎ নারী বা কর্ম। আচ্ছা তুই তো কিছু আরবি জানিস, এগুলির আরবি শব্দ ও লিঙ্গ বলতো। সে বলল, আকাশ আরবিতে সামাউ, এটা পুংলিঙ্গ। আর মাটি আরবিতে আরদ, এটা স্ত্রী লিঙ্গ। আর ইংরেজি আর্থ আরবি আরদ থেকে এসেছে। আমি বললাম, এবার বুঝলি তো আকাশ ও পৃথিবী আসলে কুন এর দুই অক্ষরের প্রতিক।

তৃতীয় দিনঃ তারপর সদা প্রভু কুন বলে মাটি ও জলরাশি পৃথক করলেন। স্থল ভাগের নাম রাখলেন পৃথিবী আর জলরাশির নাম দিলেন সাগর। সাগর হল নরের প্রতিক আর পৃথিবী হল নারীর প্রতিক। কারণ সাগরের পানি দিয়েই ফস-ফসল, গাছ-গাছালি, বৃক্ষলতা সব কিছু জন্ম নেয়, আবার সব কিছু সাগরেই ফিরে যায়। তারপর রাত হল এবং ভোর হল। গেল তৃতীয় দিন।

চতুর্থ দিনঃ এরপর সদা প্রভু সময়ের জন্ম দিতে চাইলেন বা সময়কে বন্টন করতে চাইলেন। তিনি কুন বলে সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি সৃষ্টি করলেন। এর মাধ্যমে তিনি সময়কে দিন, সপ্তাহ, পক্ষ, মাস, বছর ইত্যাদিতে বিভাজন করলেন। এখন সূর্য হল কাফ বা নরের প্রতিক আর চন্দ্র, নক্ষত্ররাজি ও পৃথিবী হল নুন বা নারীর প্রতিক। কারণ এগুলি সূর্য থেকে আলো পায় ও উপকৃত হয়। গেল চতুর্থ দিন।

পঞ্চম দিনঃ এরপর সদা প্রভু আল্লাহ্‌ জল ভাগ ও আকাশ মণ্ডলে প্রাণের সঞ্চার ঘটাতে চাইলেন। তিনি কুন বলে সিন্ধু বক্ষে অসংখ্য ছোট ছোট ও বিরাট বিরাট প্রাণী সৃষ্টি করলেন এবং আকাশে উড়ার জন্য দুই পাখা বিশিষ্ট বিচিত্র প্রাণীর অস্তিত্ব দিলেন। রাত দিনের আবর্তনে গেল পঞ্চম দিন।

ষষ্ঠ দিনঃ মহা প্রভু আল্লাহ্‌ ইচ্ছা করলেন পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণদান করবেন। তিনি কুন বলে সরীসৃপ, চতুষ্পদ ও বুকে চলা উরগ জাতীয় প্রাণী সৃষ্টি করলেন। এভাবে গবাদি পশু, পোষা প্রাণী, বন্য প্রাণী, হিংস্র প্রাণী, নিরীহ প্রাণী, গর্তে ও মাটিতে বাসোপযোগি অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীতে পৃথিবী ভরিয়ে তুললেন। এরপর সদাপ্রভু দেখলেন, সবকিছুই তো হল কিন্তু এই বিশাল আয়োজন, অতুল সৃষ্টি এই মহা জগতের উপর কর্তৃত্ব করার, রাজত্ব করার কেউ নেই। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন জগতের রাজা বানাবেন- যে সকল সৃষ্টির উপর প্রভুত্ব করবে। তখন সদা প্রভু বললেন আইস, আমরা এবার মানব সৃষ্টি করব। সে জল, স্থল ও আকাশ লোকে রাজত্ব করবে, সকল সৃষ্টির উপর প্রভুত্ব করবে। সদাপ্রভু ইচ্ছা করলেন মানব সৃষ্টি করবেন, সৃষ্টি করবেন তাকে নিজ আদলে ও বৈশিষ্টে। তারপর তিনি পৃথিবী থেকে কাদামাটি আনয়ন করে বললেন কুন, ব্যস একটা মানুষের প্রতিকৃতি হল। তখন তিনি প্রতিকৃতির নাকে ফুঁ দিয়ে প্রাণ বায়ু প্রবেশ করালেন এবং মুর্তিটি জীবন্ত হয়ে উঠল। সৃষ্টি হল আদি মানব আদম। তারপর সদাপ্রভু আল্লাহ্‌ পূর্বদিকে একটা বাগান বানিয়ে নাম দিলেন এডেন (আরবি আদন), আর আদি মানবকে সেই বাগানে রাখলেন। এই হল মহাবিশ্ব সৃষ্টির গোড়ার কথা।

এখানে সৃষ্টিতত্ব সম্পর্কে তোকে আর একটু জ্ঞান দেয়া দরকার। বাইবেল বলছে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহ্‌র আকৃতিতে, অবয়বে তার চাঁচে ঢেলে। যেমন-

26 Zvici Avj­vn& ej‡jb, ÒAvgiv Avgv‡`i gZ K‡i Ges Avgv‡`i ms‡M wgj †i‡L GLb gvbyl ˆZix Kwi| Zviv mgy‡`ªi gvQ, AvKv‡ki cvLx, cky, ey‡K-nuvUv cÖvYx Ges mg¯— `ywbqvi Dci ivRZ¡ Ki“K|Ó 27 c‡i Avj­vn& Zuvi gZ K‡iB gvbyl m„wó Ki‡jb| nu¨v, wZwb Zuvi gZ K‡iB gvbyl m„wó Ki‡jb, m„wó Ki‡jb cyi“l I ¯¿x‡jvK K‡i|

কিন্তু হাদীসে বলা হয়েছে, ‘খালাকাল্লাহু আদামা আলা সুরাতিহি অর্থাৎ সিফাতিহি’। সকল ইসলামী চিন্তাবিদ একমত যে, এখানে সুরাত অর্থ সিফাত। অর্থাৎ আল্লাহ আদমকে তার গুন- বিশিষ্টের উপর সৃষ্টি করেছেন। কাজেই বাস্তবতায় বুঝা যায় বাইবেলের বর্ণনা বিকৃত করা হয়েছে। কারণ, ১) আল্লাহ্র কোন আকার আকৃতি নাই, তিনি শুধু মাত্র একটা নুর বা আলো। যেমন কোরানে বলা হয়েছে ,আল্লাহু নুরুস সামাওয়াতি অয়াল আরদি- অর্থাৎ আল্লাহ আকাশ ও যমিনের আলো। ২) আর যদি যুক্তির খাতিরে ধরেও নেই যে, আল্লাহ্র আকার আকৃতি আছে তবুও বিবেক কখনোই এ কথা মেনে নেয় না যে, স্রষ্টা তার সৃষ্টিকে, মালিক তার গোলামকে, প্রভু তার ভৃত্যকে নিজের আকৃতি দান করবেন। কারণ তাহলে সৃষ্টি স্রষ্টার সমজাতীয় হয়ে যাবে, গোলাম মালিকের সমপর্যায়ের হয়ে যাবে, মানুষ আল্লাহ্র সমকক্ষতার দাবীদার হয়ে যাবে। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ এত বড় বোকামি করবেন না। কাজেই প্রমাণিত হল বাইবেলের বর্ণনা ভুল।

এখন হাদীসের বর্ণনা যে সঠিক এর প্রমাণ হচ্ছে, আল্লাহ্র প্রধান বৈশিষ্ট হচ্ছে দুটি, ১) অহংকার বা বড়ত্ব। ২) প্রশংসা। এর ব্যাখ্যা হল, আল্লাহ বলেছেন অহংকার আমার চাদর তা নিয়ে টানাটানি করো না। অর্থাৎ অহংকার ও বড়ত্ব দেখোনো একমাত্র আল্লাহর বৈশিষ্ট, দাস জাতি মানবের জন্য এটা শোভনীয় নয়। যে অহংকার করবে বড়ত্ব দেখাবে তার ইহকাল নষ্ট হবে পরকাল ধ্বংস হবে। এ জন্যই মানুষের জন্য এটা হারাম। আবার সকল প্রশংসার যোগ্য একমাত্র আলাহ, মানুষ কখনো কোন প্রশংসার যোগ্য নয়। আল্লাহকে যত বেশি প্রশংসা করা হয় আল্লাহ তত বেশি খুশি। এজন্যই তিনি বান্দাকে প্রশংসা করার ও তেল মারার মন্ত্র শিখিয়ে দিয়েছেন। বান্দাহ যত বেশি আল হামদু লিল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, আল্লাহু আকবার জপ করবে আল্লাহ তত বেশি খুশি, একদম খুশিতে বাগবাগ। কাজেই প্রশংসা ও তেল খাওয়ার হকদার একমাত্র আল্লাহ, কোন মানুষ নয়। এজন্যই রাসূল (সাঃ) বলেছেন, কারো প্রশংসা করবে না, কেউ সামনে তোমার প্রশংসা করলে তার মুখে মাটি নিক্ষেপ করবে। অর্থাৎ এ কাজটাও হারাম। কোন মানুষের প্রশংসা করা যাবে না, একমাত্র আল্লাহ্‌র প্রশংসা করতে হবে।

কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, আল্লাহ্‌র এ দুটি বৈশিষ্ট মানুষের মধ্যে পুর্নাংগরুপে বিরাজমান, মানুষ অহংকার করে বড়ত্ব দেখায়। প্রশংসা চায় তৈল মর্দন চায়। বাস্তবতা তো হলো মানুষের পৃথিবীটাই চলছে তৈলের উপর। বিশেষত আমরা বাঙালি জাতির কোন ধন সম্পদ ও সম্বল না থাকলেও অন্তত একটা সম্পদ আছে, সেটা হল তৈল মারামারি। কিন্তু ইসলামের নির্দেশ হল, যে এসবের মধ্যে লিপ্ত হবে তার ইহকাল নষ্ট হবে পরকাল ধ্বংস হবে। আর যে বিরত থাকবে, আত্মসংবরণ করবে, সে উভয় জাহানে সফলকাম হবে। কাজেই প্রমাণিত হল আল্লাহ মানুষকে তার আকৃতিতে নয়, বৈশিষ্ট দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।

৭ম দিনঃ সুতরাং পৃথিবী, আকাশ ও এতদোভয়ের আভ্যন্তরিন যাবতীয় বিষয় পুর্নাংগ হল। সদাপ্রভু আল্লাহ যে কাজ শুরু করেছিলেন তা শেষ করে সপ্তম দিনে তিনি বিশ্রাম নিলেন। তিনি এ দিনটিকে আশির্বাদ করে পবিত্র দিনে (জুম্মা বার) পরিনত করলেন। দিনটিকে তিনি বিশেষ মর্যাদা দান করলেন। হ্যাঁ ঐ দিনটি ছিল শুক্রবার, এই দিনে আল্লাহ সৃষ্টি কর্ম শেষ করে বিশ্রাম নিলেন। এজন্য এটি একটি মর্যাদাশীল দিন, বিশেষ দিন, পবিত্র দিন। আর এ কারনেই আমরা এ দিনটিকে ঈদের দিন, ছোট হজ্বের দিন, খুশির দিন হিসাবে উৎযাপন করি। (সুত্রঃ বাইবেল, উল্ড টেস্টামেন্ট, জেনেসিস)

এবার আসল কথায় আসি। আগেই বলেছি কাফ হল নর এবং কর্তার প্রতিক আর নুন হল নারী বা কর্মের প্রতিক। কাজেই যেভাবে কাফ ও নুন মিলিত হলে কুন হয় এবং নতুন কোন কিছু সৃষ্টি হয় ঠিক একইভাবে নর নারী বা কর্তা ও কর্ম মিলিত হলেই কুন হয় অর্থাৎ নতুন কিছু পয়দা হয়, আল্লাহ্‌র নতুন করে কুন বলার দরকার হয় না। তিনি শুধু সৃষ্টির আদিতে কুন বলে বলে সব কিছু সৃষ্টি করেছেন আর তার সৃষ্টি জগতকে কুন-এর বিন্যাস অনুসারে বিন্যস্ত করেছেন। খোদার সৃষ্টি দুই প্রকার, জীব ও জড়। জীবের ক্ষেত্রে নর নারী বা মর্দা মাদী এক্ত্র হলে কুন হবে। তখন আল্লাহ্‌র নতুন করে কুন বলার দরকার নাই এমনিতেই বাচ্চা পয়দা হবে। যেমন তুই কাফ ও তোর বান্ধবী তানিয়া নুন। এখন তোরা এক্ত্র হলেই কুন হয়ে যাবি আর তোদের সন্তান হবে। এতে আল্লাহ্‌র কুন বলার দরকার নাই। ঐ যে একটা ষাঁড় একটা গাভী দেখা যায়- ওরা এক্ত্র হলেই বাছুর হবে, আল্লাহ্‌র কুন বলার দরকার নাই। আর জড় জগতের ক্ষেত্রে নর নারী নাই ওরা হল কর্তা ও কর্ম। যেমন ঐ গাড়িটা আসছে ওটা মানে ওর চাকা কাফ বা কর্তা আর রাস্তাটা নুন বা কর্ম, দুয়ের ঘর্ষণে কুন হয়েছে, রাস্তা অতিক্রম করছে, এখানে আল্লাহ্‌র কুন বলার দরকার নাই। বাতাস কর্তা, বৃক্ষ লতা কর্ম, কাজেই বাতাস আসলে পাতা নড়বে, এতে আল্লাহ্‌র কুনের দরকার নাই। এভাবে সৃষ্টির আদিতেই আল্লাহ্‌ কুন বলে সব কিছু বিন্যস্ত করে দিয়েছেন। এখন দু’টি বস্তু এক্ত্র হলে কুন হবে, নতুন কিছু পয়দা হবে, সেখানে আল্লাহ্‌র আবার কুন বলার দরকার পরে না। এভাবেই পৃথিবীতে অসংখ্য ঘটনা ঘটছে অথচ আল্লাহ্‌ স্থির হয়ে বসে আছেন, তার কুন বলার প্রয়োজন পরে না। এবার বুঝলি তো গাধা?

ফররুখ শিয়ার মুখে অসন্তুষ্টি ফুটিয়ে তুলে বলল, তুই কি আমাকে ছাগল পাইলি নাকি। সৃষ্টি রহস্যটা না হয় মেনে নিলাম কিন্তু কাফ নুনের যে কেরামতিটা বর্ণনা করলি এটা আমার বিশ্বাস হয় না, এর স্বপক্ষে তোর কাছে কোন দলীল প্রমাণ আছে? আমি বললাম, আরে নাস্তিক ছাগু, তুই যদি আসলেই ছাগু না হতি তাহলে আমাকে এই প্রশ্ন করতি না। তারপর আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলাম কেউ আছে কিনা, কারণ এখন আমি যে ব্যাখ্যা দিতে যাচ্ছি- তা যদি আমাদের আল্লামা হুজুররা শুনে তাহলে লগি বৈঠা নিয়ে মাঠে নামবে আর শ্লোগান তুলবে, ‘এইটা তসলিমার ইয়ে হয়ে গেছে, এই পাগলকে পাঠিয়ে দে ঐ পাগলির কাছে’। না, কেউ নেই। তাকে বললাম, ‘আচ্ছা তুই তো জানিস আরবী এক অক্ষর থেকে অন্য অক্ষর পৃথক করার জন্য বিভিন্ন চিহ্ন বা নোকতা ব্যবহার করা হয়। তদ্রুপ লাম থেকে কাফ কে পৃথক করার জন্য এর মাথায় বাংলা ‘রেফ’ এর মত একটা চিহ্ন বসিয়ে দেয়া হয়েছে, ব্যস অন্য অক্ষর থেকে পৃথক হয়ে গেছে। এখন কাফ এর ন্যায় আর কোন অক্ষর নাই। কিন্তু প্রশ্নটা হল, এরপরেও কাফের পেটে বা মাঝ খানে পেছানো তারের ক্লিপের মত যে চিহ্নটা দেখা যায়, এটা কিসের জন্য এবং কেন দেয়া হল, জানিস এটা? সে মাথা ঘুরাল। আমি বললাম, তাহলে শুন, এটাই হল নর বা পুংলিঙ্গের প্রতিক। কারণ ঐ চিহ্নটা পুরুষের অন্ড কোষের ন্যায় অর্থাৎ অন্ড কোষের মাঝে শিরা যেভাবে পেছানো থাকে ঐ চিহ্নটাও ঐরূপ পেছানো। কাজেই প্রমাণিত হল কাফ নরের প্রতিক।

আবার দেখ নুন অক্ষরটা অন্য কোন অক্ষরের সদৃশ নয়। কারণ বা, তা, ছা নৌকার মত লম্বা আর নুন চাঁদের মত গোলাকার, তবুও নুনের বুকে বিন্দু বা নোকতা দেয়া হল কেন। কারণ সোজা হিসাব, নুনের বুকে এক নোকতা আর নারীর বুকে দুই নোকতা। অর্থাৎ নারীর প্রতিক, এটাও প্রমাণিত হল। সুতরাং এখন আর তোর কোন আপত্তি থাকার কথা নয়। সে কিছু না বলে কাচুমাচু করে চলে গেল কিন্তু তাকে পথে আনার জন্য, লাইনে তুলার জন্য আমি তার পিছু লেগে থাকলাম। তার পিছনে প্রায় তিন চিল্লা বা চার মাস ব্যয় করলাম। আমার চেষ্টার সুফল এল বটে কিন্তু তা আমার উপরই বোমেরাং হল। কারণ সে সত্যিকার মানুষ হয়ে গিয়েছিল, জামাতে নামায পড়ত, তাসবিহ টিপত, তানিয়ার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল, সকল পাপ কর্ম থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করল। কিন্তু তুমি তো আমাকে সৃষ্টির সময়ই নাট বল্টু ঢিলা করে দিয়েছিলে, ঢিলেমি অলসতাকে করে দিয়েছিলে আমার মজ্জাগত। ফলে অনেক সময় জামাত ধরতে পারতাম না, সকালে উঠি উঠি করে মাঝে মাঝে ফযর কাযা হয়ে যেত। তখন সে এসে আমাকে ধমকাত, ‘আরে তুই জামাত মিস করলি, ফযর পরলি না’ ইত্যাদি বলে বলে ধমকাত আর আমি লজ্বা পেতাম। এই লজ্বার সংখ্যাটা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকল। ফলে লজ্বা ভয়ে রুপান্তরিত হয়ে গেল আর তখন থেকেই আমি তার থেকে অন্তত পাঁচশ গজ দূরত্ব বজায় রেখে চলার চেষ্টা করতে থাকি।

৫৮

যাই হউক, এতক্ষণ তোমার কুনের কেরামতি বর্ণনা করলাম, মহিমা কির্তন করলাম। কেন করলাম, বুঝলা? এই ঝড় বাদলের রাতে এই নির্জন নদী তটে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেন তোমার কাছে কাকুতি মিনতি করছি বুঝতে পারছ কিছু? আমাদের হাতে খাবার কোন কিছু থাকলে কোন শিশু ভাব-ভঙ্গিমা শুরু করে। আর তা দেখে আমরা বুঝতে পারি সে কি চায়। ব্যস হাতের জিনিসটা দিয়ে দিলেই সে খেতে খেতে হাসতে হাসতে চলে যায়। কাজেই তুমি তো আরো ভাল করেই বুঝতে পারছ, আসলে আমি কি চাই। আসলে আমি একটা কুন চাই। একটা কুন মেরে আমার বউকে এনে দিলেই তো আমি চলে যাই। এই রাত নিশীথে আমারও প্যান প্যান ঘ্যান ঘ্যান করতে হয় না আর তোমারও বকবক শুনে কান ঝালাপালা করতে হয় না।

নাকি তুমি মনে করছ আমি আন্তরিকভাবে কিছু চাচ্ছি না, শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোমাকে তেল মারছি। না, আমি যা চাচ্ছি আন্তরিকভাবেই চাচ্ছি, তেল মারছি না। আর মারলেই বা ক্ষতি কি, তুমি তো এটাই চাও। তুমিই তো বলেছ তোমার কাছে পৃথিবীর সব চেয়ে প্রিয় বস্তু হল তেল (অশ্রু)। এ জন্যই তোমার বান্দারা শুধু তোমাকে তেলই মারে। আচ্ছা সুদখোর, ঘোষখোর, যিনাখোর, চোগলখোর আরো যত দুনীয়ার পাপখোর আছে- যখন তোমার দরবারে হাত তুলে কেঁদে উঠে বলে, ‘আল্লাহ্‌ আমাকে মাফ কর আর গুনাহ করব না’। অথচ সে নিজেও জানে গুনাহ করবে তুমিও জান। এরপরেও তাকে তুমি মাফ করে দাও কারণ সে তোমাকে তেল মেরেছে। অথচ আমার বেলায় এমন হলে বলতাম, ‘হারামজাদা মুনাফিক, বগলে ইট আর মুখে শেখ ফরিদ, মুখে বলছিস আর গুনাহ করবি না অথচ তোর মনে পাপ দেখা যাচ্ছে, যা বেরু, বেরু আমার দরবার থেকে, আর কোন দিন আসবি না, আরেক দিন দেখলে থাবড়িয়ে কান ঠসা করে দিব’। কিন্তু না, তুমি কোন পাপীকে তাড়িয়ে দাও না বরং বুকে তুলে নাও, মাফ করে দাও। কারণ তুমি যে রহমান তুমি রহীম।

শুধু মাফ কেন, তুমিই তো বলেছ, ইন্নাল্লাহা গাফুরুর রহীম অর্থাৎ তুমি চরম ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। মানুষের ক্ষেত্রে দয়া আগে তারপর ক্ষমার প্রশ্ন। কিন্তু তুমি উল্টো অর্থাৎ আগে ক্ষমা কর তারপর দয়া কর। এর অর্থ কী? এর অর্থ হল, কোন মহা পাপীও আন্তরিক তওবা করলে তাকে তুমি মাফ করে দাও। শুধু তাই নয়, মুনকার নাকীরের খাতায় লিখিত সেই ক্ষমাপ্রাপ্ত পাপগুলির শুন্যস্থান তুমি হাসানা (নেকি) দিয়ে ভরিয়ে দাও, যাতে পরকালে কোন মানুষ বা ফেরেশতা বুঝতে না পারে যে, এই শুন্যস্থানগুলিতে আগে পাপ ছিল যা ক্ষমা করা হয়েছে। কারণ তাতে সেই ক্ষমাপ্রাপ্ত ব্যক্তি লজ্বিত হবে। এই হল তোমার গাফুরের পর রহীম বলার অর্থ। আহ সুবহাল্লাহ, তুমি কত মহান কত বিরাট, তোমার দয়ার তুলনা নাই। এ জন্যই তোমাকে আমরা রহমান বলে ডাকি।

যাই হউক, এই যে তুমি তোমার বান্দাদের ক্ষমা কর এরা কেউই তো প্রকৃত তওবাকারী নয়। শুধু তেল মারা পার্টি। কারণ প্রকৃত তওবা করলে কেউ দ্বিতীয় বার গুনায় লিপ্ত হত না। সুতরাং এই তেল মারা পার্টিকেই তুমি ক্ষমা করে দাও শুধু এজন্য যে, তারা তেল মেরেছে। আর তুমিও তেল মারার জন্য উৎসাহ দাও। যেমন তুমি বলে থাক, ‘কিরে গুনাহ করে ফেলেছিস, আচ্ছা ঠিক আছে আয় আমার দরবারে, আমি মাফ করে দিব। আমার দরবারে এক দুই ফোটা তেল (অশ্রু) ছাড়। তাও না পারলে চোখটা পিট পিট কর, ঠোঁটটা নাড়া, মুখটা বিকৃত কর, একটু কাকুতি মিনতি কর, কান্নার অভিনয় কর, আমি তোকে মাফ করে একেবারে মাসুম বানিয়ে দিব’। এইভাবে তুমি তোমার বান্দাকে তেল মারার জন্য উৎসাহ দাও। আসলে তুমিই হলে আদি আসল তেল খাদক, আসল তেলের বেপারি।

এখান থেকেই পৃথিবীর মানুষ তেল মারা শিখেছে। আর বাঙালিরা তেল ডিঙ্গিয়ে মবিল মারা পর্যন্ত শিখে গেছে। আর আমাদের রাজনীতিবিদরা তেলের যে রসায়ন সৃষ্টি করেছে দুনীয়ার ইতিহাসে তেল থেকে এতটা রস কোন মহাবিজ্ঞানীও বের করতে পারে নাই। এজন্যই তোমাকে একটা কথা বলে রাখি, রসায়ন শাস্ত্রে প্রতি বছর নোবেল দেয়া হয় অথচ আমাদের রাজনীতিবিদরা তেলের যে অপুর্ব রসায়ন সৃষ্টি করেছে তজ্জন্য আজ পর্যন্ত একটাও নোবেল প্রাইজ দেয়া হয় নাই। কাজেই তোমাকে বলে রাখছি, শীঘ্রই যদি আমাদের প্রত্যেক রাজনীতিবিদের অনুকূলে একটা করে নোবেল বরাদ্দ না দেয়া হয় তাহলে আমি কিন্তু ঐ জোচ্ছোর গাজাখোর নোবেল কমিটির বিরুদ্ধে হেগের আদালতে মামলা ঠুকে দিব।

যাই হউক, কোন বান্দা তেল মারুক বা আন্তরিকভাবে তওবা করুক তাকে তুমি মাফ করে দাও। কারণ কোন বান্দাকে খালি হাতে ফিরাতে তোমার লজ্বা হয়। কারণ তুমি যে রহমান, তুমি যে রহীম। এখন আমার প্রশ্নটা হল, আমাকে খালি হাতে ফিরাতে তোমার লজ্বা হবে না। এই যে আমি ঝড় বাদলের রাতে নির্জন উপত্যকায় প্যাক কাদার মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সারা রাত ধরে চেচামেচি করছি এতে তো আমারও কষ্ট হচ্ছে তোমারও কান ঝালাপালা হচ্ছে। আচ্ছা, তোমার কি ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটছে না। তুমি তো জানই আমি কি চাই, আমার আরাধ্য বস্তুটা আমাকে দিয়ে দিলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। আমার বউটা আমাকে ফেরত দিয়ে তুমি নিজেও উদ্ধার হও আমাকেও বাঁচাও। আমি তো বেশি কিছু চাচ্ছি না, শুধু একটা কুন মাত্র। একটা কুন বলতে তো আর তোমার কষ্টও লাগবে না টাকা-পয়সাও খরচ হবে না। কাজেই শুধু একখান, মাত্র একটা কুন, শুধু একবার তুমি একটা কুন মেরে দাও, ব্যস কেল্লা ফতেহ।

আমার বউ তার বোনের বাসায় যাওয়ার সময় তুমি বলে দিলে ‘কুন যিহাব- চলে যা’। আর সে গেল তো এমন যাওয়াই গেল যে, এক্কেবারে ঢাকা ভার্সিটির শিক্ষকের ঘরে যাওয়ার লাইন ঘাট সব ক্লিয়ার করে ফেলল। এখন তুমি ওর মুখে ছাই ফেল। শুধু একবার মাত্র একটা কুন মেরে বলে দাও ‘কুন ইতয়ান- চলে আয়’। ব্যস আর যাবে কোথায় বাবা। ওর লাইন ঘাট সব ভেঙ্গে চোরে খান খান হয়ে যাবে। আর আমি এক্ষন, এই মুহুর্তে গিয়ে দেখব আমার বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, দাঁড়িয়ে আছে একজন বোরকা ওয়ালী, দীর্ঘ দেহী, কোলে একটা বাচ্চা। তারপর আমি দরজা খোলার সাথে সাথে আমার পায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পরবে, আর্তনাদ শুরু করবে, ও ভাই ভাই গো আমারে মাফ কইর‍্যা দেন। আপনে আমার বড় ভাই- ছোট ভাই, আপনে আমার দাদা- নানা, আপনে আমার শালা- শালি, আপনেই আমার দুলাভাই, আপনেই সবকিছু। আমি আর কোন দিন আপনেরে ফালাইয়্যা থুইয়্যা যামু না। পর্তেক (প্রত্যেক) দিন সকালে ঘুম থিক্যা উইঠ্যা আমার কপালে সাতটা লাত্থি মারলেও আমি আর আপনেরে ফালাইয়্যা যামু না। ব্যস তোমার একখান কুন পেলেই আমার জীবন, আমার সন্তানের জীবনটা বেঁচে যায়, একটা সংসার বেঁচে যায়। কাজেই তুমি একটা কুন মেরে দাও।

আর যদি না মার তাহলে বুঝব ইহুদীরা ঠিকই বলে। তারা বলে, ‘ইয়াদুল্লাহি মাগলুলাহ’ আল্লাহ্‌র হাত মুষ্ঠিবদ্ধ অর্থাৎ আল্লাহ্‌ কৃপন। কাজেই আমার পরামর্শ হল, মাত্র একটা কুনের জন্য তুমি নিজের উপর এত বড় অপবাদ টেনে নিও না। ঝটপট একটা কুন বলে ফেল। তোমাকে একটা উদাহরণ দেই। আমাদের উত্তরের বাড়ির এক ভাবী সবসময় বলে, ‘আচ্ছা পুরুষরা ঐ তিন কথা (তালাক) মুখে আটকে রাখে কেমনে। আমি হলে তো সারাদিন তালাক তালাক করতাম’। তেমনি আমার প্রশ্ন হল, এত মূল্যবান কুনটা তুমি মুখে আটকে রাখ কেমনে, আমি হলে তো সারাদিন কুন কুন করতাম। কুন এর বন্যা ছুটিয়ে দিতাম। কুন মেরে মেরে দুনিয়ার সকল নিঃস্ব দরিদ্র সর্বহারার অভাব মুছন করতাম, রোগ, শোক তাপ হানা দুঃস্ত মানবের কল্যাণ করতাম, লোটেরা যালিম শ্রেণীকে নিশ্চিহ্ন করে দিতাম। না না, আমি একথা বলছি না যে, তোমার দয়ার ঘাটতি আছে, তুমি তো অসীম দয়াবান। আর এজন্যই তো তুমি পৃথিবীর মানুষের প্রয়োজনের চেয়ে দশগুণ বেশি জীবনোপকরন পৃথিবীতে সর্বদা মজুদ রাখ। কিন্তু মানুষ মাত্র একভাগ আহরণ করতে পারে, আবার এই এক ভাগও সমবন্টন হয় না। এক শতাংশ মানুষ বাকী নিরানব্বই শতাংশের প্রাপ্য শোষণ করে, লোট-পাট করে নিয়ে যায় অর্থাৎ একজন খায় নিরানব্বই রুটি আর নিরানব্বই জনে খায় এক রুটি। তোমার দয়ার দান তো ঠিকই আছে কিন্তু লোটেরাদের অপকর্ম মানুষের মধ্যে অভাব ও অশান্তি জিইয়ে রাখে। কাজেই এই এক শতাংশ লোটেরা শোষক শ্রেণীকে ধ্বংস না করতে পারলে পৃথিবীর বৈষম্য দূর হবে না। আর ওদেরকে ধ্বংস করার জন্য ক্ষমতা দরকার।

কাজেই মালিক আমার, দাও না গো আমাকে একটা কুন টুন। মাত্র একটা কুন এর ক্ষমতা দাও। যদি একবার মাত্র কুন এর ক্ষমতাটা পেয়ে যাই তাহলে প্রথমেই আমি কুন মেরে ফেরদৌসিকে মেরে ফেলব। স্বামী থুয়ে অন্য ভাতার জুটানোর সাধ মিটিয়ে দিব চিরদিনের জন্য। মারব মানে কি একেবারে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই ভস্ম বানিয়ে দিব। তারপর ধরব ইঞ্জিনিয়ার ও তার বউকে। ওদেরকে বলব, তোরা আমার বউকে অন্যত্র বিয়ে দিতে চাস, অন্যের বিছানায় পাঠাতে চাস, আমার বাচ্চাকে ইয়াতিম করতে চাস, এখন যা কুকুর হয়ে রাস্তায় রাস্তায় রতিকর্ম করে বেড়াবি আর পৃথিবীর সকল মানুষ দেখবে। এটা আমি তোদের ভাগ্যলিপির শামিল করে দিলাম। তারপর পটেটোকে পাছায় লাথি মেরে বলব ‘হারামজাদা, নুরানির মত সুন্দরী মেয়ের জামাই হওয়ার মত কোন যোগ্যতা তোর নেই। তুই তালাক দে আমি ওকে ভাল জামাই দেখে বিয়ে দিব। আর তুই বলে বেড়াস মায়ের খেদমত করার দরকার নাই, কাজেই তোর বিচার হল তুই বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাবি, মাতৃতুল্য বৃদ্ধা মহিলাদের হাগা মুতা পরিস্কার করবি, তাদের খিদমত করবি’। তারপর আমার যত শত্রু সব কটাকে কুন মেরে মেরে ধ্বংস করব। এরপর ঘোষণা দিব, ‘আমার সামনে সবাই মস্তক অবনত রাখবে নইলে ক্ষেপনাস্ত্রের মত কুন মেরে ধ্বংস করে দেব। কাজেই আমার মালিক, তুমি শুধু একবার আমাকে কুন এর ক্ষমতাটা দাও, আমি দেখিয়ে দিব।

এরপর হাসান হাসতে লাগল, একেবারে হেসে কুটিকুটি। তারপর আবার উর্ধ্বে তর্জনি নাচিয়ে নাচিয়ে বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ এবার বুঝতে পেরেছি তুমি কেন মানব জাতিকে কুন বা এ জাতীয় ক্ষমতা দাও নাই। কারণ তাহলে তারা কুন মেরে মেরে একে অন্যকে ধ্বংস করে দিত, তোমার সাধের পৃথিবীকে তামা বানিয়ে ছাড়ত, তোমার তাবৎ সৃষ্টি ধ্বংস করে দিত। ফলে তোমার সৃষ্টি- লীলার উদ্দেশ্য সাঙ্গ হয়ে যেত। আচ্ছা এক কাজ করা যায় না। এই কুনটাকে দুই ভাগ করে ফেল, কুনে খাইর (কল্যাণকর কুন) ও কুনে শার (অকল্যাণকর কুন)। তারপর আমাকে কুনে খাইরটা দাও। আমি মানবতার জন্য কিছু কাজ করি।

প্রভু আমার, তুমি তো জান আমি নিজে একজন দুখী মজলুম মানুষ। কাজেই মানুষের দুঃখ কষ্ট দেখলে, অভাব দেখলে, মজলুম দেখলে, নির্যাতিত হতে দেখলে আমি খুব কষ্ট পাই, আমার মন কাঁদে। তাদের সাহায্য সহযোগিতা করতে আমার খুব মন চায়। আমার প্রাণটা তখন উসখুস করে কিন্তু কিছুই করতে পারি না। কারণ আমার যে ক্ষমতা নাই, সামর্থ নাই। মালিক আমার, বুক ভরা আশা দিলা কিন্তু সাধ্যি মোরে দিলা না। আমাকে একটা কিছু দাও, কোন একটা অথরিটি দাও, যে কোন একটা ক্ষমতা দাও, সেই সাথে তওফিক দাও, তারপর দেখ আমি কি করি। তোমার যাতের শপথ, পৃথিবী থেকে নিরন্ন দিগম্বরের অশ্রু আমি মুছে ফেলব। কোন দানবের হুংকারে মর্তের মাটি কাপবে না। কোন দুর্বল অসহায় মজলুমের আহ- আর্তনাদ বায়ু মণ্ডল দোষিত করবে না।

পৃথিবীতে অশান্তির মূল কারণ দু’টি শ্রেণী, পুঁজিবাদী লোটেরা শ্রেণী আর ধর্ম ব্যবসায়ী পোরুহিত শ্রেণী। তোমার রবুবিয়্যাতের কসম, একটি বার ক্ষমতা পেয়ে গেলে পৃথিবীর সীমানা থেকে এ দু’টি শ্রেণীর অস্তিত্ব আমি মুছে ফেলব। কারণ পৃথিবী যখন তমসার ঘেরাটোপে বন্ধি তখন ভূপৃষ্ঠে এক রাখাল বালকের আবির্ভাব ঘটল। পরিনত বয়সে তিনি ফারানের চুড়ায় দাঁড়িয়ে তার করুণার হাতটি দিগন্ত পর্যন্ত বিস্তৃত করে ডাকলেন, ‘শুন পৃথিবী বাসী, আমি নাযিরে উরয়ান- চূড়ান্ত সতর্ককারী। এই মহাবিশ্বের যিনি প্রভু তার বার্তা নিয়ে আমি তোমাদের কাছে এসেছি। তোমরা আমার অনুসরণ কর, আনুগত্য কর তাহলে ইহলোকে পরলোকে সফলকাম হতে পারবে।

মানুষের এই ত্রানকর্তা আভির্ভুত হয়েই প্রভু- ভৃত্যের এই দুনিয়ায় মানুষের মধ্যে ব্যবধানের প্রাচীর গুঁড়িয়ে দিয়ে ঘোষণা দিলেন, মানুষ মানুষে কোন ব্যবধান নাই, সবাই সমান, সবাই এক আল্লাহর সৃষ্টি। তোমাদের মধ্যে উত্তমতার মানদণ্ড আল্লাহকে ভয়ের মানদণ্ডে নিহিত। ১) তোমাদের জান মাল ইজ্জত রক্ত তোমাদের পরস্পরের জন্য হারাম। ২) সে মুসলমান নয় যার হাত ও জিহ্বা থেকে অন্যরা নিরাপদ নয়। ৩) তোমরা নিজেরা যা খাবে পরবে তোমাদের অধিনস্থদেরও তাই খেতে পরতে দিবে, ৪) যে পেট পোরে খেয়ে ঘুমাল আর তার প্রতিবেশী উপোস থাকল সে মুসলমান নয়। ৫) তোমার উপর তোমার প্রতিবেশীর হক আছে। তুমি মাংস রান্না করলে একটু ঝুল বাড়িয়ে দাও, যাতে তোমার প্রতিবেশীকে মাংস না দিতে পারলেও অন্তত একটু ঝুল দিতে পার। ৬) তোমার স্ত্রী তোমার দেহের অর্ধাংশ, আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তাকে গ্রহণ করেছ, কাজেই তার অধিকার আদায় কর, অবিচার করো না। ৭) তোমার সম্পদে দরিদ্র ও আত্মীয়স্বজনদের হক আছে। কাজেই যাকাত দিবে, প্রয়োজন না মিটলে ইনফাক- অতিরিক্ত ব্যয় করবে, তাতেও না হলে সম্পদ জমা করবে না, সমবন্টন করবে। তিনি মানব জাতির শান্তির জন্য পুর্নাংগ বিধান রচনা করলেন।

তারপর পৃথিবীতে কিভাবে জীবন যাপন করতে হবে নিজের জীবনাচারের মাধ্যমে মানব জাতিকে তা শিক্ষা দিয়ে গেলেন। তিনি আরবের শ্রেষ্ঠ ধনাঢ্য মহিলা খাদিজাকে (রাঃ) বিয়ে করলেন। তার সকল সম্পদ নিঃস্ব দরিদ্রের মাঝে বন্টন করে দিলেন। তিনি ধনীদের কাছ থেকে সম্পদ উসুল করে দরিদ্রের মাঝে বন্টন করে দিতেন। কখনো নিজের কাছে জমিয়ে রাখতেন না- যা আসত সাথে সাথে বন্টন করে দিতেন। আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, একদিন আসর নামাযের ইকামত হল, রাসূল (সাঃ) নামায শুরু না করে হন্তদন্ত হয়ে ঘরে গেলেন, তারপর এসে নামায পড়ালেন। নামাযের পর সাহাবাগণ এভাবে ছুটে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ‘ঘরে একটা স্বর্ণের টুকরা আছে, নামায পড়ে ঘরে যেতে যেতে গোধুলি বেলা হয়ে যাবে, তখন হয়ত আর কোন সওয়ালি আসবে না। তাই ঘরে বলে এলাম কেউ আসলে যেন স্বর্ণের টুকরাটা দিয়ে দেয়। কারণ কোন সম্পদ নিয়ে রাত্রি যাপন করা আমি পসন্দ করি না’। এই ছিল মানব জাতির ত্রানকর্তার অর্থনৈতিক দর্শন।

কিন্তু ইউরোপের দাজ্জাল যখল নাজাত দাতাকেই লোটেরা ডাকাত বলে বিশ্বময় প্রচারের প্রয়াস চালাচ্ছে তখন আমরা তার জীবন মানের প্রতি তাকালে দেখতে পাই- আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) জীবনে কোন দিন পেট ভরে তৃপ্তি সহকারে খেতে পান নাই। মায়মুনা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) সাধারণত চাশতের সময় কিছু খাওয়ার জন্য স্ত্রীদের ঘরে আসতেন। কিছু পেলে খেতেন আর না পেলে বলতেন আনা সায়েম- আমি রোযা রাখলাম। ওরওয়া বলেন, একদিন আমি হযরত আয়েশার (রাঃ) কাছে গেলাম। তিনি কথায় কথায় বললেন, ‘আমি খেতে পারি না’। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন, খেতে পারেন না কেন? তিনি বললেন, ‘ঘরে যখন ভাল কোন কিছু রান্না হয় তখন আমি সব কিছু সামনে নিয়ে বসি, ভাবী আজ তৃপ্তি সহকারে খাব। কিন্তু যখন খেতে বসি তখন রাসূল (সাঃ) এর কষ্টের কথা মনে পরে যায়। তিনি দুনীয়াতে ছিলেন অথচ কোন দিন পেট ভরে খেতে পাননি। এমনও সময় গেছে তিনদিন চারদিন চলে গেছে উনুনে আগুন জ্বলেনি। তখন আমার কান্না আসে। আর বসে বসে কাঁদতেই থাকি কাঁদতেই থাকি, এক সময় খানা ফেলে উঠে চলে যাই। আর খাওয়া হয় না’।

এই হল মানুষের নবী, মানবতার নবী, মানব জাতির ত্রান কর্তার জীবন চিত্র। তিনি পৃথিবীতে অর্থনৈতিক সাম্য, ইনসাফ ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার বিধান দিলেন আর তা প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব আলেম শ্রেণীর উপর অর্পন করে তিনি দুনীয়া থেকে বিদায় নিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তার প্রতিনিধি দাবীদার আলেম উলামা আল্লামা শ্রেণী অপকর্ম করে করে একক উম্মাহকে হাজারটা ফেরকায় বিভক্ত করে পরস্পরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে, উম্মাহকে দুর্বল করে দিয়েছে, দাজ্জালকে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে অভিষিক্ত হতে সহযোগিতা করেছে। ফলে পৃথিবী আজ দাজ্জালের বিষাক্ত নখের থাবায় রক্তাক্ত। কাজেই চারদিকে যখন বিপন্ন মানবতার বিলাপ আর মাতম উঠছে তখন আলেম আল্লামা শ্রেণী শহরে, নগরে, বন্দরে, জনপদে ঘুরছে আর হাঁকছে, ‘ভিক্ষে দাও পুরবাসী, ভিক্ষে দাও, আল্লাহ্‌ ও রাসূল (সাঃ) না খেয়ে মরছেন। তারপর ভিক্ষের মুষ্ঠি তুলে আল্লাহ্‌ রাসূল (সাঃ) কে (দরিদ্র জনগোস্টিকে) না দিয়ে নিজেরাই খেয়ে ফেলছে। কাজেই এদের বিচার হওয়া উচিত এবং অনিবার্য।

আরেকটা শ্রেণী হল পুঁজিবাদী লোটেরা শ্রেণী। এদের সমস্যাটা হল এরা অসহায় দরিদ্র জন সাধারনকে বাপ মনে করে। অর্থাৎ সন্তান যেমন বাপের সম্পদ যথেচ্ছা ব্যবহার করে, তসরুফ করে, যাচ্ছে তাই করে এরাও তদ্রুপ জনগণের সম্পদ চোষে নেয়, লোটপাট করে, আত্মসাৎ করে। নিজেদের ভোগের ভাড়ার পূর্ণ করে, বিদেশে পাচার করে, হর্ম প্রাসাদ নির্মাণ করে। কাজেই এদের বিচার হওয়া উচিত। একটিবার যদি ক্ষমতাটা পেয়ে যাই তাহলে ওদের বুঝিয়ে দিব কবে কখন থেকে জনগণ ওদের বাপ হল। ওদের সকল সম্পদ জনগণের মাঝে ফিরিয়ে দেয়া হবে।

কিন্তু আমার যে সব আশা আকাঙ্ক্ষার কথা বললাম, এসব তো বেঁচে থাকলেই সম্ভব কিন্তু এখন তো আমার বেঁচে থাকাই বড় দায়। কারণ কোন মানুষের অর্ধেক দেহ কেটে ফেললে সে বেঁচে থাকে না, থাকতে পারে না। কাজেই আমার স্ত্রী- যে আমার দেহের অংশ, সে আমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্যের হয়ে যাবে তখন আমি কি করে বেঁচে থাকব। মালিক আমার, বিয়ে তো আমি করিনি তুমি করিয়েছ। কারণ তোমার কলম ছাড়া কিছুই হয় না। তুমিই দু’টি দেহ বিক্রিয়া করে একিভুত করে দিয়েছ, এখন আবার অর্ধেকটা দেহ কেটে অন্যকে দিয়ে দিবে এটা কি করে সম্ভব, আমি কেমনে বাঁচব, আমি বাঁচতে পারব না’ বলে সে দু’হাতে মুখ ঢেকে ডুকরে কেঁদে উঠল। তারপর দু’হাত উর্ধ্বে তুলে দোয়া করতে লাগল, সুখ দুঃখের মালিক ওগো, ওকে ছাড়া আমি বাঁচব না, সে আমার প্রাণ, প্রাণ ছাড়া দেহ বাঁচে না। সে গুমরে গুমরে কাঁদতে থাকে।

তারপর দু’হাত তুলে হঠাৎ চিৎকার দিয়ে বলে উঠে, ‘ঠিক আছে ঠিক আছে, এটাই যদি তোর সিদ্ধান্ত হয় তাহলে তোকে আরেকটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের তো তোর এই সাধের দুনীয়া দেখা হল, ভোগ করা হল, সাধ মিটল, আর কী দরকার। আমি এলাম, দুনীয়া দেখলাম, ভোগ করলাম, বিয়েও করলাম, বাচ্চাও হল, ব্যস দুনীয়াদারী পূর্ণ হল। আমার স্ত্রীও এল, দুনিয়া দেখল, ভোগ করল, বিয়ে হল বাচ্চাও হল, দুনীয়াদারী পূর্ণ হল। এখন দু’জনের একজন’ বলে সে হাটুতে হাত ধরে রুকুর ন্যায় উবু হয়ে থাকল, তার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরছে পৃথিবী পৃষ্ঠে। হঠাৎ সোজা হয়ে গর্জে উঠল, ‘দু’জনের একজন উঠিয়ে নে। আমি বেঁচে থাকতে আমার স্ত্রী অন্যের স্ত্রী হয়ে যাবে, আমার সন্তানের মা অন্যের সন্তানের মা হয়ে যাবে- এই কলংকের চেয়ে এক জনকে উঠিয়ে নে। আমি মারা গেলে সে অন্যের স্ত্রী হলে কারো গায়ে কলংক লাগবে না। আবার সে মারা গেলে আমি মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে বাকী জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারব। কাজেই প্রভু আমার, তোমার কাছে আমার সর্বশেষ আবেদন, হয় আমার স্ত্রীকে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও, না হয় দু’জন থেকে এক জনের মৃত্যু ঘটাও’ বলে সে হাটা শুরু করল। বজ্রনাদে যা না হয় ক্ষুদ্রনাদে তা হয়। তার এই শেষ বার্তাটা বায়ু মণ্ডল ভেদ করে নক্ষত্র লোক অতিক্রম করে পৌঁছে গেল উর্ধ্বে, পৌঁছে গেল তার অভীষ্ট ঠিকানায়।

রাতের চতুর্থ জাম, বাস্তু জগত নীরব নিথর, কোথাও কোন সাড়া শব্দ নেই। কুকুরের ঘেউ নেই, পাখির গান নেই, ঝিল্লির রব নেই, ডাহুকের ডাক নেই, নেই কোন শিয়ালের হুক্কাহুয়া। ব্রহ্মপুত্রের তীর, উচু উচু ঘাস, কাশবন, ঝোপঝাড়, গাছের বাগান অন্ধকারে দুর্লঙ্ঘনীয় পর্বতের রূপ ধারণ করেছে। কিন্তু তার কোন চেতনা নাই, এসব কিছু পাড়িয়ে মাড়িয়ে চলছে। সাপ, বিচ্ছু, হিংস্র প্রাণী, গর্তের বিষাক্ত প্রাণী এসবের কোন ভয় নাই, অনুভূতি নাই। অনেকক্ষণ হাটার পর সে গিয়ে আলোক ঝলমলে মেইন রোডে উঠল। হাসান রাস্তার পাশ ধরে হেটে যাচ্ছে। ভোখা, ক্ষুধা তৃঞ্চায় তার দুর্বল ক্ষীণ দেহটি থরথর করে কাঁপছে। সে আস্তে আস্তে হেটে যাচ্ছে। জন মানবের চিহ্ন নাই। মাঝে মধ্যে দুয়েকটা গাড়ি সাপের মত ফুস ফুস করে পাশ দিয়ে উল্কার বেগে ছুটে যাচ্ছে। দু’চারটা নিশাচর বুভুক্ষু খাদ্যের সন্ধানে ঘোরে বেড়াচ্ছে। সবাই ঘুমিয়ে আছে, কুকুরগুলি গলাগলি করে ঘুমিয়ে আছে, গরুগুলি একে অন্যের গায়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে, স্বামী স্ত্রী একে অন্যের বাহু বন্ধনে- সন্তান বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে আছে। সবাই আপন নীড়ে আপন জন নিয়ে ঘুমুচ্ছে। আর এমন সময় পৃথিবীর এক হতভাগা পৃথিবীর পথে হাটছে, হাটছে সে ঝড় বাদলের রাতে অন্ধকার পথে। চলছে অন্ধকারের পথিক, অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে হেটে যাচ্ছে। যার কোন ঘর নাই, আপন জন নাই, কেন্দ্র নাই, আশ্রয় নাই, সে এখন উন্মুক্ত পৃথিবীর মুক্ত পথিক, নীড় হারা ঝড়ের পাখি।

বাসায় পৌঁছতেই ফজরের আজান দিল। সারা শরীর কাঁদায় মাখা। সে গোসল করে জায়নামাজে ঝাঁপিয়ে পরল। আজ তার তাহাজ্জুদ পড়া হয়নি তাসবীহ পড়া হয়নি, শুধু সেজদায় পরে থাকল। সেজদায় পরে সে কাঁদছে, শুধু কাঁদছে, মুখে কোন ভাষা নেই, নির্বাক কান্না, বোবা কান্না। হৃদয় কন্দরে আজন্মের জমে উঠা দুঃখ, ব্যথা, যন্ত্রণা ও বিষাদের পাহাড়গুলি বরফের মত গলে গলে চোখ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। জায়নামাজ ভিজে গেছে, জায়নামাজের নীচে ফ্লোরে জমে উঠেছে পানি, চোখের পানি, অশ্রু, চির বঞ্চিত এক হতভাগ্য যুবকের অশ্রু।

বিষয়: বিবিধ

২৩২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File