একটি আশ্চর্য ঘটনা

লিখেছেন লিখেছেন সত্যের সেনানী ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৭:৩৭:২৭ সন্ধ্যা

একটি আশ্চর্য ঘটনাঃ আল্লাহর পক্ষে সবই সম্ভব মক্কার এক কিশোর, যিনি তখনও যৌবনে পদার্পণ করেননি। কুরাইশ গোত্রের এক সর্দার 'উকবা ইবন আবু মু'ইতের একপাল ছাগল নিয়ে তিনি মক্কার গিরিপথগুলোতে চরিয়ে বেড়াতেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন সকালে উঠে 'উকবার ছাগলের পাল নিয়ে বের হয়ে যেতেন আর সন্ধ্যায় ফিরতেন। একদিন এ কিশোর ছেলেটি দেখতে পেলেন, দু'জন বয়স্ক লোক, যাদের চেহারায় আত্মমর্যাদার ছাপ বিরাজমান, দূর থেকে তাঁর দিকেই এগিয়ে আসছেন। তাঁরা এত পরিশ্রান্ত ও পিপাসার্ত ছিলেন যে, তাঁদের ঠোঁট ও গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল। নিকটে এসে লোক দু'টি সালাম জানিয়ে বললেন, 'বৎস! এ ছাগলগুলি থেকে কিছু দুধ দুইয়ে আমাদেরকে দাও। আমরা পান করে পিপাসা নিবৃত্ত করি এবং আমাদের শুকনা গলা একটু ভিজিয়ে নেই।' ছেলেটি বললেনঃ 'এ আমার দ্বারা সম্ভব নয়। ছাগলগুলি তো আমার নয়। আমি এগুলির রাখাল ও আমানতদার মাত্র।' লোক দু'টি তার কথায় অসন্তুষ্ট হলেন না, বরং তাদের মুখ মন্ডলে এক উৎফুল্লতার ছাপ ফুটে উঠলো। তাঁদের একজন আবার বললেনঃ 'তাহলে এমন একটি ছাগী আমাকে দাও যা এখনো পাঁঠার সংস্পর্শে আসেনি।' ছেলেটি নিকটেই দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছোট্ট ছাগীর দিকে ইশারা করে দেখিয়ে দিলেন। লোকটি এগিয়ে গিয়ে ছাগীটি ধরে ফেলেন এবং 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম' বলে হাত দিয়ে ধরে তার ওলান মলতে লাগলেন। অবাক বিস্ময়ে ছেলেটি এ দৃশ্য দেখে মনে মনে বললেনঃ 'কখনও পাঁঠার (পুরুষ ছাগলের) সংস্পর্শে আসেনি এমন ছোট ছাগী কি করে দুধ দেয়?' কিন্তু কি আশ্চর্য! কিছুক্ষণের মধ্যেই ছাগীর ওলানটি ফুলে উঠে এবং প্রচুর পরিমাণ দুধ বের হতে থাকে। দ্বিতীয় লোকটি গর্তবিশিষ্ট পাথর উঠিয়ে নিয়ে বাঁটের নীচে ধরে তাতে দুধ ভর্তি করেন। তারপর তাঁরা উভয়ে পান করেন এবং ছেলেটিকেও তাঁদের সাথে পান করালেন। ছেলেটি যা কিছু দেখছিলেন সবই তাঁর কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। সবাই যখন পরিতৃপ্ত হলেন তখন সেই পুণ্যবান লোকটি ছাগীর ওলানটি লক্ষ্য করে বললেনঃ 'চুপসে যাও।' আর অমনি সেটি পূর্বের ন্যায় চুপসে গেল। এরপর কিশোর ছেলেটি সেই পুণ্যবান লোকটিকে অনুরোধ করলেনঃ 'আপনি যে কথাগুলি উচ্চারণ করলেন, তা আমাকে শিখিয়ে দিন।' লোকটি বললেনঃ 'তুমি তো শিক্ষাপ্রাপ্ত বালক।' এ মহাপুণ্যবান ব্যক্তিটি আর কেউ নন, তিনি স্বয়ং বিশ্ব মানবতার মহান মুক্তিদূত, সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আর তাঁর সঙ্গীটি ছিলেন হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা)। কুরাইশদের অত্যাচার উৎপীড়ন থেকে বাঁচার জন্য এ সময় তাঁরা মক্কার গিরিপথ সমূহে আশ্রয় নিয়েছিলেন। রাসূল (সা) ও তাঁর সঙ্গীকে যেমন ছেলেটির ভালো লেগেছিল তেমনি তাঁদের কাছেও ছেলেটির আচরণ, আমানতদারী ও বিচক্ষণতা খুব চমৎকার মনে হয়েছিল। এ ঘটনার অল্প কিছুদিন পরেই সেই কিশোর ছেলেটি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং সৃষ্টিজগতের শ্রেষ্ঠতম মানুষের খাদিম হিসেবে নিজেকে উৎসর্গ করেন। ছাগলের রাখালী সেই সৌভাগ্যবান বালকটি ছিলেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা)। তিনি নবী গৃহে প্রতিপালিত হন, তাঁকে অনুসরণ করেন এবং তাঁরই মত আচার- আররণ ও চরিত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হন। এ কারণে তাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছে, "হিদায়াত প্রাপ্তি, আচার-আচরণ ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে তিনি-ই হচ্ছেন রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকট উত্তম ব্যক্তি।" [আসহাবে রাসূলের জীবনকথাঃ ১ম খন্ড]

বিষয়: বিবিধ

১৪৮৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

295539
১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:০৪
আঃ হাকিম চাকলাদার লিখেছেন : খুব ভাল কাহিনী।
295540
১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:০৬
সত্যের সেনানী লিখেছেন : ধন্যবাদ
295543
১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:২২
ভিশু লিখেছেন : সুবহানআল্লাহ!
ভালো শেয়ার...Happy Good Luck
295555
১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৭
সালসাবীল_২৫০০ লিখেছেন : চমৎকার হয়েছে! ধন্যবাদ
295557
১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৩০
আফরা লিখেছেন : সুবহানআল্লাহ! খুব সুন্দর একটা ঘটনা শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ ।
295599
১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১২:৩৮
সত্যের সেনানী লিখেছেন : আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File