সম্প্রতি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারীর প্রতি সহিংসতার ভয়ানক চিত্র ওঠে এসেছে। শিক্ষাঙ্গনে সহপাঠী থেকে শুরু করে গুরু-শিক্ষকের যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন নারী শিক্ষার্থীরা।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে নিপীড়নের প্রতি ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টি চাপা পড়ে যায় ন্যায়বিচার না পাওয়া, আর চরিত্র হননের ভয়ে। ঘটনা প্রকাশ্যে এলে তদন্তসাপেক্ষ দোষীকে শাস্তি দিয়ে উদাহরণ তৈরির পরামর্শ অপরাধবিজ্ঞানীদের।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের এক ছাত্রী যৌন নিপীড়ন ও বুলিংয়ের শিকার হয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বিচার চেয়ে আবেদন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ করলে বিভাগের চেয়ারম্যান ও অভিযুক্ত শিক্ষক তাকে বহিষ্কারের হুমকি দেন এবং এক পর্যায়ে তাকে ফেল করানো হয় পরীক্ষাতে। ৩ বছর পার হলেও ওই ঘটনার কোনো বিচার মেলেনি।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সময় সংবাদকে বলেন,
প্রতিবাদ করায় আমার ওপর আরও অত্যাচার শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বিন্দুমাত্র বিচারের দেখা পাইনি। চেয়ারম্যান স্যার যাকে অব্যাহতি দিয়েছেন, তিনি এখনও চেয়ারে বসে আছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, অভিযোগ করলে উল্টো অভিযোগকারীকেই বিপদে পড়েতে হয়। আর ব্যবস্থা না নেয়ায় যৌন নিপীড়নের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে।
তারা বলছেন, সামনে হয়তো এমন ঘটনা কয়েকটা আসে। কিন্তু এমন আরও অনেক ঘটনা আছে। এসব ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত করলেই সমাধান হয় না। এসব ঘটনার স্থায়ী সামাধান প্রয়োজন।
গত দুই বছরে দেশের প্রথম সারির পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলে ২৯টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ১৪টি। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ৭টি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ৪টি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ২টি এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২টি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এসেছে।
‘স্ট্র্যাটেজিস ফর প্রিভেন্টিং মাসকুলিনিটি অ্যান্ড জেন্ডার বেজড ভায়োলেন্স ইন হায়ার এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন ইন বাংলাদেশ: আ স্টাডি অব রাজশাহী ইউনিভার্সিটি’ শীর্ষক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, অধিকাংশ অভিযোগ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। তবে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীই ভয়ে অভিযোগ করেন না।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের ঘটনা:
নিপীড়ক সহপাঠী ৫৬ শতাংশ
বহিরাগত ১১ শতাংশ
শিক্ষক ৯ শতাংশ
ভুক্তভোগীদের চেয়ে ছোট বা বড় ২৪ শতাংশ
নির্যাতনের ৩০ শতাংশ বাজে মন্তব্য
৬০ শতাংশ সাইবার হয়রানি
শারীরিক নির্যাতন ১০ শতাংশ
যৌন নিপীড়নকারীদের শাস্তি দিয়ে উদাহরণ তৈরির পরামর্শ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনের।
সময় সংবাদকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া দরকার। তারা যেন নিরাপদে থেকে পড়াশোনা ও গবেষণা করতে পারে, সেই বিষয়গুলোতে নজর দেয়া দরকার। নীতিমালা আইনে এ বিষয়গুলো স্পষ্ট থাকতে হবে, যাতে কোনো নারী হয়রানির শিকার হলে অবশ্যই তিনি বিচার পান।
নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের আরও সচেতন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন পাঠদান কার্যক্রম চালু করা উচিত।
এ বিষয়ে ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন বলেন,
নিপীড়নের বিষয়গুলো থেকে প্রতিকারের উপায় সব জায়গায় স্থাপন এবং কার্যকর করা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীরা এসব বিষয় পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে শিখতে পারলে তারা প্রতিকারের উপায়গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকবে। এতে এ ধরনের সমস্যা অনেক কমে আসবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন