বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকে ঈঙ্গিত করে ছাত্রলীগ বলেছে, ‘সাম্প্রতিক বছরে বুয়েটের একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর অনাকাঙ্ক্ষিত, দুঃখজনক ও মর্মান্তিক মৃত্যু এ দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়কে গভীরভাবে ছুঁয়ে গেছে, ব্যথিত করেছে। এই ঘটনায় জড়িতদের দেশের প্রচলিত আইনে বিচার সম্পন্ন করা হয়েছে।’
ছাত্র-রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা বুয়েটকে প্রদান করা না হলেও বুয়েট প্রশাসন বেআইনি ও অসাংবিধানিকভাবে তা বাস্তবায়ন করছে দাবি করেছে ছাত্রলীগ।
শনিবার (৩০ মার্চ) সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মৌলবাদী গোষ্ঠীর কালোছায়া থেকে মুক্ত করে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবি এবং বুয়েট কর্তৃক গৃহীত অসাংবিধানিক, মৌলিক অধিকার পরিপন্থী, শিক্ষাবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আগামীকাল রবিবার প্রতিবাদ সমাবেশ করবে ছাত্রলীগ।
বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের আবাসিক হলের বরাদ্দকৃত সিট বাতিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখান করে এর নিন্দা জানিয়েছে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সম্পাদক।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে নেতারা বলেন, তা না করে, এই আইনের কোথাও ছাত্র-রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা বুয়েটকে প্রদান করা না হলেও বুয়েট প্রশাসন বেআইনী ও অসাংবিধানিকভাবে তা বাস্তবায়ন করছে। মূলধারার প্রকাশ্য ছাত্র-রাজনীতি নিষিদ্ধের এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে বুয়েটকে দেশ ও বিশ্ব মানবতাবিরোধী নিষিদ্ধ, অন্ধকার জগতের বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকাণ্ড পরিচালনার তীর্থস্থানে পরিণত করা হয়েছে।
বুয়েটে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, যা বললেন উপাচার্যবুয়েটে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, যা বললেন উপাচার্য
এর আগে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। শিক্ষার্থীধের আন্দোলনের মুখে ওই শিক্ষায়তনে নিষিদ্ধ হয় ছাত্র রাজনীতি।
এ ঘটনায় করা মামলা ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
ওই ঘটনার পর থেকে ছাত্র রাজনীতিতে নিষ্কৃয় ছিল বিশ্ববিদ্যায়টি। গত ২৭ মার্চ দিবাগত রাত ১টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকেই বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বি। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর বুয়েটে এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে নতুন করে রাজনীতি শুরুর পাঁয়তারা হিসেবে দেখছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে পুনরায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়া ও নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তারা আন্দোলন শুরু করেন। পরে আন্দোলনের মুখে গতকাল রাতে ইমতিয়াজ রাব্বিকে হল থেকে বহিষ্কার করে বুয়েট প্রশাসন। তবে সকল দাবি মেনে না নেওয়ায় আজ শনিবারও দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। আগামীকালও কর্মসূচি ঘোষণা করে রেখেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এদিকে এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সময় চেয়ে উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে বুয়েট প্রশাসন ঐক্যমত পোষণ করে। কিন্তু কারো পক্ষেই আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৮ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এরপর একাডেমিক কাউন্সিল বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন