বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য হিসেবে মেয়াদ পূর্ণ করেছেন অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। আজ বৃহস্পতিবার তিনি নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হকের হাতে উপাচার্যের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।
উপাচার্য পদ থেকে ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের বিদায় উপলক্ষ্যে বিএসএমএমইউতে আনন্দ-উল্লাস করতে দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল চিকিৎসক-কর্মকর্তা কর্মচারীকে। উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের জবাব দিতেই এমন আয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। অপরদিকে নতুন উপাচার্য খ্যাতিমান চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হককে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বরণ করে নেওয়া হয়।
নতুন উপাচার্যকে বরণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যান্ড-পার্টি ঢাক-ঢোলের তালে তালে নাচেন। তবে কার্যত এই নাচ গান বাজনা বাজানো হয় বিদায়ী উপাচার্যকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ ও অপমান করতে। আজ থেকে ৩ বছর আগে যখন উপাচার্য হিসেবে ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন তাকেও ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের আগে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন আরেক খ্যাতিমান চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। কিন্তু ৩ বছর দায়িত্ব পালন শেষে তাকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লক দিয়ে পালিয়ে যেতে হয়েছিল।
এখানেই শেষ নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি অধ্যাপক ডা. কাদরীর বিদায়ও অপমানজনক ছিল। বিদায় সুখকর ছিল না অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খানেরও।
উপাচার্য হিসেবে শারফুদ্দিন ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন নানা অনিয়ম দুর্নীতিতেও জড়িয়েছেন। উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তার ছেলে তানভীর আহমেদ ও ছেলের স্ত্রী ফারহানা খানম চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। উপাচার্য শারফুদ্দিনের স্ত্রী নাফিজা আহমেদের ভাইয়ের ছেলে সাব্বির হোসেনকেও কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তবে এই তিন নিয়োগেই থেমে থাকেননি উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ। তার পরিবারের আরও ৭ সদস্যকে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। গত ৩ বছরে স্থায়ী, অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিকসহ বিভিন্ন উপায়ে ২ হাজারের বেশি অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, মেডিকেল অফিসার, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, নার্স, ওয়ার্ড বয়, আয়া, গাড়িচালক, সুইপার ও এমএলএসএস নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগের বড় অংশকে তিনি অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেন এবং পর্যায়ক্রয়ে স্থায়ী করে নেন। নিয়ম অনুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের কথা থাকলেও বেশির ভাগ নিয়োগই হয়েছে কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়া। যেখানে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদের বিদায়ের সপ্তাহখানেক আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য পদ থেকে বিদায় নিয়েছেন ড. শিরীন আখতার। উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ড. শিরীন বিতর্কিত ছিলেন। নিজের দায়িত্বের শেষ দিনে কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন পদে ৩৭ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী তার দায়িত্ব পালনের শেষ ৩ মাসে তিনি শতাধিক নিয়োগ দেন। তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ মিছিল করছিল দীর্ঘদিন ধরে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক কর্মচারীদের অভিযোগ উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে শিরীন আখতার নিয়োগ কেলেঙ্কারি চালিয়ে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করেছেন সোচ্চার ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে চাপে রাখেন। তদন্ত কমিটি গঠনের নামে হয়রানি করেন। শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, তার বিরুদ্ধে যারা কথা বলেছেন তাদের পদোন্নতি আটকে দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহানের শেষ কর্মদিবসে বিভিন্ন পদে ১৩৮ জনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ২০২১ সালের ৬ মে ছিল রাবির তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহানের শেষ কর্মদিবস। কিন্তু শেষ দিনে তিনি শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী পদে ১৩৮ জনকে ‘অ্যাডহক’ (অস্থায়ী) ভিত্তিতে নিয়োগ দেন। উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দুর্নীতির নানা অভিযোগে তার নাম গণমাধ্যমে বারবার জায়গা করে নেয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তদন্ত শেষে এম আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিলো কিন্তু তা না করে তাকে ২য় বার একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
২০২২ সালের মার্চে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) উপাচার্য পদ থেকে বিদায় নেন অধ্যাপক এম রোস্তম আলী। তার বিরুদ্ধেও বিভিন্ন সময় নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছিল। উপাচার্য পদ থেকে বিদায় নেওয়ার আগে তিনি নিয়ম ভেঙে সেকশন অফিসারসহ একাধিক পদে নিজের আত্মীয়-স্বজনদের নিয়োগ দিয়েছিলেন। এখানেই থেমে ছিলেন না এই উপাচার্য। তার ভাতিজিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়ার আগেই শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নির্ধারিত ডরমিটরিতে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিয়ে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা দিয়ে আসবাবপত্র কিনে দিয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের নজির স্থাপন করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে ১০১টি দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে একাই প্রতীকী অনশনে করেছিলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আব্দুল আলিম।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন