তিলে তিলে গড়ে উঠা মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড ট্রাস্টিজ জোরপূর্বক পরিবর্তন করে বিশ্ববিদ্যালয়টি দখলের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদীরা। এই প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানটি দখলে নেওয়ার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর আওয়ামী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নির্দেশে ট্রাস্টি বোর্ড পরিবর্তনের লক্ষ্যে বৈঠক হয় বৃহস্পতিবার। এই বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) মহাপরিচালকসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ঢাকা উত্তরের ভোটার বিহীন নির্বাচনের মেয়র আতিকুল ইসলামকে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান মনোনীত করা হয়। নিয়োগ করা হয় ট্রাস্টি বোর্ডের নতুন ১৩ সদস্য। এই মনোনয়নের মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদীরা মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও প্রতিষ্ঠানটির সকল সম্পত্তি নিজেদের দখলে নিয়েছে।
এর আগে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই ও এনএসআইকে ব্যবহার করে শেখ হাসিনার সরকার দেশের বৃহত্তম প্রাইভেট ব্যাংক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ব্যাংকসহ চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় দখলে নিয়েছে।
মানারাত ট্রাস্ট নামক একটি দাতব্য সংস্থার তত্ত্বাবধানে দেশীয় সংস্কৃতির মূল্যবোধ ধারণ করে ১৯৭৯ সালে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল কিন্ডার গার্ডেনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমে যাত্রা শুরু করেছিল। পর্যায়ক্রমে মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে রূপ দেওয়া হয় এই প্রতিষ্ঠানটিকে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশের মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে তৈরি সিলেবাসের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল অত্যন্ত সুনামের নাথে। ১৯৯৫ সালে ট্রাস্টটি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং এ লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। ২০০১ সালের ৩ এপ্রিল ট্রাস্টটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারি অনুমোদন লাভ করে। সে বছরের ২১ মে বিশ্ববিদ্যালয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। ওই বছরের ২৮ মে ঢাকার গুলশানে ৭৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পাঠ দান কার্যক্রম শুরু করেছিল।
বৃহস্পতিবার (৮ই মে) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-ঢাকা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ধারা ৬ (১০) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করায় উল্লিখিত আইনের ধারা ৩৫ (৭) অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর কর্তৃক মেয়র, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন-কে চেয়ারম্যান করে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুনর্গঠন করা হয়েছে।
অথচ, এই মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক কোন অভিযোগ কখনো উত্থাপন করা হয়নি এবং অনিয়মের অভিযোগে কখনো কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। কারণ দর্শানোর কোন নোটিশ ছাড়াই বিদ্যমান ট্রাস্টি বোর্ডকে বাতিল করে পুরোপুরি আওয়ামীদের দিয়ে নতুন বোর্ড গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিজের মত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন