ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেট অধিবেশন থেকে আগামী এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে তিন জনকে মনোনীত করা হয়েছে। তবে অধিবেশনে উপাচার্য ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদের কেউই উপস্থিত ছিলেন না। বিষয়টিকে অনেকেই নিয়মবহির্ভূত বলে অভিযোগ করেছেন। তাদের দাবি, উপাচার্য তার পছন্দের ব্যক্তিদের মনোনীত করতেই তড়িঘড়ি করে নির্দিষ্ট সময়ের আগে এই সিনেট অধিবেশন আহ্বান করেছেন।
রবিবার (১৪ জুন) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিনেট অধিবেশনে তিন জনকে সিনেট সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়।
মনোনীতরা হলেন, ঢাবির ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সদ্য সাবেক ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু সমাজকল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এস. এম বাহালুল মজনুন, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম শামসুজ্জামান খান। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য এ তথ্য বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ এবং উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই এই অধিবেশন ডাকেন উপাচার্য। জুন মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটকে সামনে রেখে সিনেট অধিবেশন ডাকা হয়। এবার নির্দিষ্ট সময়ের আগে সভা ডাকায় আলোচ্যসূচিতে বাজেট ছিল না। তাই অধিবেশনে উপস্থিত হননি বিশ্ববিদ্যালয় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিনও। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল উপস্থিত ছিলেন না।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা জানান, সিনেট অধিবেশন ডাকা হয় মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট পাসের জন্য। কিন্তু অধিবেশনে বাজেট নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। সিনেট সদস্য মনোনীত করতেই উপাচার্য নিজ ক্ষমতাবলে এই অধিবেশন ডেকেছেন। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে আর কখনও হয়নি। উপাচার্যের এ ধরনের আচরণ অনৈতিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যায় না বলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সিনেট অধিবেশনে উপস্থিত না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই সময়ে সিনেট অধিবেশন আহ্বান করা হয় মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট পাস করার জন্য। যদিও বাজেট পাসের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিতে উল্লেখ নেই। তারপরও অতীতে সব সময় অধিবেশনে বাজেটই থাকে মূল বিষয়। এছাড়াও দেশে করোনার সর্বোচ্চ প্রকোপ এখন। বিধিগত দিক থেকে, নৈতিকতার দিক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঐতিহ্যপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে এমন একটি ঘটনা সুন্দর হয়নি। এটা বিধিবহির্ভূত ছিল।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘সব ধরনের নিয়ম-নীতি মেনে অধিবেশন ডাকা হয়েছে। সিনেটের সভা ডাকার বিধি-বিধান রয়েছে। সেই অনুযায়ী সভা ডাকা হয়েছে। এক্ষেত্রে নিয়মের কোনও ব্যত্যয় ঘটেনি। এটা হল সিনেটের বার্ষিক অধিবেশন, যেখানে বাজেট পাস করা হয়। বাজেট এখনও তৈরি হয়নি, তাই সেটি নিয়ে আলোচনা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি গ্রুপ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা বলছে সিনেট কেন ডাকা হলো? অধিবেশনটি মূলত ২০ তারিখের পরে হয়। এ বছর এগিয়ে আনার বিশেষ কারণ ছিল। প্রথমবারের মতো এটি পূর্ণাঙ্গ সিনেট। ১৬ তারিখের পর থেকে সেটি অপূর্ণাঙ্গ হয়ে যাবে। আমরা যাতে পূর্ণাঙ্গ সিনেটে বসতে পারি সেই সৎ উদ্দেশ্য সামনে রেখেই অধিবেশন ডাকা হয়েছে। এছাড়াও সিনেটের ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধির মেয়াদ শেষ হবে ১৬ জুন। এরপর অধিবেশন ডাকলে আমরা তাদের সম্মান জানাতে পারবো না। তাই অধিবেশনটি আগেই ডাকা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, গত বছর ২৬ জুন, ২০১৮ সালে ২৫ জুন, ২০১৭ সালে ১৭ জুন এবং ২০১৬ সালে ২৩ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশন হয় এবং সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট উপস্থাপিত হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন