তাবৎ দুনিয়ায় এখন একই সুর। একই রব। একই আতঙ্ক। করোনার ছোবলে শব মিছিলে লাশের সংখ্যা ক্রমেই দীর্ঘ হতে দীর্ঘ হচ্ছে। কোথাও কড়া লকডাউন আবার কোথাও চলছে ঢিমেতালে। লকডাউন পরিস্থিতিতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) আটকে পড়েছে ৩০ জন নেপালী এবং ১৭ জন সোমালিয়ান শিক্ষার্থী। কেমন কাটছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের দিন? তারা নিজেদের অনুভূতি নিয়ে কথা বলেছেন ক্যাম্পাসলাইভ২৪ ডটকমের সঙ্গে। জানিয়েছেন তাদের সমস্যা ও সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক।
শেখ রাসেল হলের দ্বিতীয় তলায় নেপালি ও পঞ্চম তলায় সোমালিয় শিক্ষার্থীদের বসবাস। এছাড়াও বিদেশী কয়েকজন ছাত্রী থাকেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে। "ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রভাবে আমি শঙ্কিত। পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেমিস্টার শেষ করতে পারাটা আদৌ সম্ভব কিনা তা নিয়েও আমার সন্দেহ হচ্ছে।" বলছিলেন লাইভস্টক সাইন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের নেপালি শিক্ষার্থী মনিশ শাহ ।
তবে ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সতর্কতামূলক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি এখনও হতাশ হয়ে যাননি। তাছাড়া নেপালি অ্যাম্বাসি থেকেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখে বলে জানান তিনি।
নেপালি শিক্ষার্থী নিরঞ্জন চৌধুরী, সরোজ সিং এবং বিধান ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, "রান্না, পাবজি এবং টিকটক ভিডিও তৈরি করেই সময় কাটাচ্ছি। আমরা কেউই বলতে পারি না কবে এ মহামারী থেকে পরিত্রাণ মিলবে। আমরা একটি নতুন ভোরের অপেক্ষায় ক্যাম্পাস বন্দী সময় পার করছি।"
পদম বোহোরা নামে ভেটেরিনারি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের নেপালি আরেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসলাইভের কাছে হতাশা প্রকাশ করে জানান, "নেপাল যাওয়ার টিকিট নেওয়া ছিল, কিন্তু একদিন লেট হয়েছিল বলে লকডাউনের কারণে যেতে পারলাম না।" এখন পর্যন্ত যেহেতু সুস্থ্য রয়েছেন তাই ব্যক্তিগতভাবে তিনি এখনও নির্ভার। সারাদিন ইউটিউব, ঘুম আর জিম করেই সময় কাটাচ্ছেন বলে জানান এই শিক্ষার্থী।
এছাড়া তিনি আরো জানান আমরা ভেটেরিনারি, এগ্রিকালচার, সিভিল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সিএসই বিভাগের বিদেশি শিক্ষার্থীরা শেখ রাসেল হলে একত্রে অবস্থান করছি।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের সোমালিয়ান শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ হায়দারী ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, "আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর রহমতে আমরা সবাই ভালো আছি। সবাই এখন হলে অবস্থান করছি। কোন সমস্যা নেই। নিরাপত্তা যথেষ্ট ভালো। হল থেকে বের হই, কিন্তু ক্যাম্পাস সীমানা থেকে বের হইনা। আমি একজন ইউটিউবার বলে লকডাউনের এই সময়ে ইউটিউবের জন্য ভিডিও তৈরি করছি।"
নেপালি শিক্ষার্থী নিরঞ্জন চৌধুরী এবং বিধান ক্যাম্পাসলাইভকে বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন কি আর করা। "রান্না, পাবজি এবং টিকটক ভিডিও তৈরি করেই সময় কাটাচ্ছি। আমরা কেউই বলতে পারি না কবে এ মহামারী থেকে পরিত্রাণ মিলবে। আমরা একটি নতুন ভোরের অপেক্ষায় ক্যাম্পাস বন্দী সময় পার করছি।"
শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট শেখ ফায়েকুজ্জামান টিটোর সাথে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, "অনেক শিক্ষার্থীর ভিসা জটিলতার কারণে নিজ দেশে যেতে পারেননি। এছাড়া অনেকে ইন্ডিয়া হয়ে যায় বলে তাদের যাওয়া সম্ভব হয়নি।
যারা বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ছিল তাদেরকে আমরা খুলনা, মাওয়া ঘাট পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছি কিন্তু ওদের তো বিমান করে বাসায় পৌঁছানো সম্ভব নয়।" তিনি আরও বলেন, "আমি নিজেও তাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।
তাদের যেকোনো ধরনের সহযোগিতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে দেয়া হচ্ছে। তাদের প্রতিদিনের বাজার করে দেবার জন্য একজন লোক দেয়া হয়েছে। তবে তারা আগে থেকে নিজেদের রান্না নিজেরাই করে।"
বিদেশি শিক্ষার্থীরা এ ব্যাপারে জানান, আমরা আমাদের যেকোন প্রয়োজনে ভিসি স্যার, প্রক্টর স্যার, হল প্রভোস্ট স্যার এবং বিভাগের শিক্ষকদের পাশে পাচ্ছি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী জানান বাজারের জন্য যে কর্মচারীকে দেওয়া হয়েছিল তিনি আর আসছেন না।
প্রসঙ্গত বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ঘটেছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ। সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গত ১৮ ই মার্চ থেকে পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। বন্ধ রাখা হয়েছে সকল ধরনের বাস ও ট্রেন সার্ভিস চলাচল।
পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটা পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকেও বিমান চলাচল স্থগিত রাখা হয়েছে। এছাড়াও জরুরী প্রয়োজনে বের হলে কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন