বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগ প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনরত ইতিহাস বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ইন্দ্রাণী বাছাড় ফেসবুকে আবেগঘন একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ইউজিসি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিয়ে।
স্ট্যাটাস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ইতিহাস বিভাগের ৪১২ জন শিক্ষার্থীর সংকটময় পরিস্থিতি ইউজিসি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বুঝতে চাইছেনা। তাই এ স্ট্যাটাস দিয়েছি।
পাঠকের সুবিধার্থে শিক্ষার্থী ইন্দ্রাণী বাছাড় ফেসবুকে দেয়া আবেগঘন স্ট্যাটাসগুলি হুবহু তুলে ধরা হলো।
ইতিহাসের শিক্ষার্থী হয়ে মুজিববর্ষে "বঙ্গবন্ধু" কে অন্যভাবে স্মরণ করব ভাবছিলাম কিন্তু এভাবে স্মরণ করতে হবে এটা ছিল কল্পনাতীত। শিক্ষা আমাদের মৌলক অধিকার, আমাদের নায্য অধিকার। সেই অধিকার আদায় করতে অনশনে বসেছি। আমার মনে হচ্ছে আমি বাংলাদেশে নই তৎকালীন অবিভক্ত পাকিস্তানে বসে আছি। কারণ আমারা স্বাধীনতা পায়নি এখনো দাস হয়ে আছি প্রশাসন আর ইউজিসির কাছে।
আমি ইতিহাসের শিক্ষার্থী হওয়ার সুবাদে অনেক ক্ষমতাসীনদের উত্থান পতন পড়েছি জেনেছি। আমি ক্ষমতাসীনদের একটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, আপনারা হয়তো ভুলতে বসেছেন বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী দেশ। যেখানে গণতন্ত্র আছে সেখানে কেউই অপরাজেয় নয়। আশা করি আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় ঘটবে। বিভাগ বন্ধ করা কোন সুষ্ঠু সমাধান হতে পারেনা। এই সিদ্ধান্ত কেবলই অপরিনামদর্শীতার পরিচয়। আমি সবাইকে আহবান করছি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সচেতন ব্যক্তি হওয়ার। কারণ সচেতনতার চেয়ে বড় স্বদেশপ্রেম আর কিছুই নয়।
মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার কেউই অনাহারে থাকবে না, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আজ আমরা আমাদের মৌলিক অধিকার আদায় করতে আমরণ অনশনে বসতে বাধ্য হয়েছি! এই লজ্জা কার?!
ইউজিসি থেকে জানানো হয়েছে যে , বিভাগের অনুমোদন যদি দেওয়া হয় তবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও তো আন্দোলন করবে, বলবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তো দেওয়া হয়েছে।
আমরা ইউজিসিকে বলতে চাই , শিক্ষার্থীরা আন্দোলন কেন করবে? আপনারা তো বিশ্ববিদ্যালয় তদারকির দায়িত্ব নিয়েছেন, আপনাদের তদারকি থাকা সত্ত্বেও অবৈধ কাজ সংঘটিত হয় কি করে? আপনাদের কাজটা আসলে কি? দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতা করার পিছনে আপনাদের কি স্বার্থ?
অনুমোদনহীন বিভাগ চালু করা, ভর্তি করা অবৈধ। কোন বিভাগ অবৈধ না বৈধ সেটা দেখার দায়িত্ব , চাকুরি আমাদের দেওয়া হয়নি, আপনাদেরকে দেওয়া হয়েছে ।
প্রশাসন স্থায়ী হওয়ার উদ্দেশ্যে আমাদের অসহযোগিতা করে যাচ্ছে । আমরা আমাদের বিভাগের অনুমোদন গত ৬ ফেব্রুয়ারি ই পেয়ে যেতাম কিন্তু আমাদের প্রশাসন ইউজিসির কাছে অনুমোদন চায়নি। তারা চায় আন্দোলন হোক, কাল ক্ষেপণ হোক। কাল ক্ষেপণ হলে বাকি ৩৩ টা বিভাগের শিক্ষার্থীরা সেশন জটের ভয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান করবে। তখন ১১ হাজার শিক্ষার্থী ও ৪১২ জন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটবে। এই সংঘর্ষ থামাবার লক্ষ্যে এমারজেন্সি হয়ে পড়বে স্থায়ী প্রশাসন। তখন উপরমহল একপ্রকার বাধ্য হয়ে অস্থায়ী প্রশাসনকে স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নিবে।
আন্দোলনের প্রথমদিকে প্রশাসনের বিরুদ্ধে কোন কথা বলিনি কারণ প্রশাসন আমাদের অনুমোদন আনলে যারা প্রশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল তাদের শোচনীয় অবস্থা হওয়ার আশঙ্কা ছিল।
যে শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ পরীক্ষার খাতায় ইতিহাস বিভাগ লিখলে ৫ মার্ক মাইনাস করে খাতা দেখার হুমকি দেয়, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা কতটা বিপদজনক হবে আমরা বুঝি। কারণ আমাদের শিক্ষাজীবন বরবাত করার মতো ইচ্ছাশক্তি ও ক্ষমতা দুটোই আছে।
আবার শিক্ষার্থীদের জীবন বরবাত করার জন্য উনাদের কোনরূপ কঠোর শাস্তি হয়না। সাময়িকভাবে বহিষ্কার হলেও বাড়ি বসে প্রতি মাসে স্যালারি পেয়ে যায়। উদাহরণঃ আক্কাস আলী(সিএসই)।
আরো একটা বিষয় পরিষ্কার করতে চাই , মাইনাস মার্কিং করার হুমকির কোনো রেকর্ড আমাদের কাছে নাই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার্থীদের কাছে পরীক্ষার হলে কোন প্রকার ডিভাইস রাখা নিষিদ্ধ।।
প্রশাসন আমাদেরকে ঠকিয়েছে । বার বার বিশ্বাসঘাতকতা করেছে । প্রশাসন বলেছে বিভাগ অনুমোদনের জন্য ইউজিসিকে বলা হয়েছিল। কিন্তু ইউজিসি থেকে বার্তা দেয় অনুমোদন চাওয়াই হয়নি। এরূপ মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন প্রতিবাদ করেনি।
আই এম সরি, আমি বিশ্বাসঘাতক মোশতাক কে দেখিনি কিন্তু আমাদের প্রশাসন কে দেখেছি।
ইউজিসি কি চায়?
উচ্চতর শিক্ষা নাকি উচ্চতর ডিগ্রি ?
পুঁজিবাদী শিক্ষা নাকি মানবতাবাদী শিক্ষা ?
সম্প্রীতি নাকি সাম্প্রদায়িকতা? (ধর্মের ভিত্তিতে নয়)
বিশ্ববিদ্যালয় কি?
সম্মান ও সম্প্রীতির মেলবন্ধনের জন্মভূমি নাকি অবমাননা আর ক্ষমতার অপব্যবহারের জলন্ত দৃষ্টান্ত ?
ইতিহাস বিভাগ বন্ধ করা মানে ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে ঘোষণা করা, এটা প্রকৃতপক্ষে ইতিহাসের অবমাননা।
ইতিহাস বিভাগ বন্ধ করার পশ্চাতে কোন যৌক্তিকতা তো নেই, আছে শুধু ক্ষমতার অপব্যবহার ।
উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের অনুমোদনের দাবিতে দীর্ঘ ৩৬ দিন আন্দোলন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে ইতিহাস বিভাগ। এর আগে তারা ইউজিসি ঘেরাও কর্মসূচি এবং অনশন কর্মসূচি ও পালন করেছে।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন