দীর্ঘ প্রায় এক মাস পর অবশেষে খুলতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরায় অবস্থিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুনরায় শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারী। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ছাত্রলীগ সমর্থক সেই ১০ ছাত্রকে প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। আজ বুধবার প্রতিষ্ঠানটির এক জরুরি সিন্ডিকেড সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইআইইউসির সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ কর্মকর্তা) মোশতাক আহমেদ।
লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি আরো জানান, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত র্যাগিং, শিক্ষক লাঞ্ছনা, ছাত্র নির্যাতন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম বহির্ভূত কার্যক্রমসহ কিছু শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশ বিষয়ে এক জরুরি সিন্ডিকেড সভা বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিন্ডিকেট তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশসমূহ বিশদ পর্যালোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে দোষী সাব্যস্ত ১০ ছাত্রকে বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তিসমূহ প্রদান করে। সভায় উচো অং মারমা (আইডি নং এলএম১৮৩১২২) ও মোঃ অনিক ইসলামকে (আইডি নং ইটি১৮৩০৮০) প্রতিষ্ঠান থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া মোঃ মশিউর রহমান (আইডি নং ইটি১৮৩০৫৭) ও ওমর ফারুক তুহিনকে (আইডি নং ইটি১৮৩০৭২) ২ বছরের জন্য বহিষ্কার, হাসান হাবীব মুরাদ (আইডি নং এলএম১৮৩১২৩), রবিউল হোসেন রনি (আইডি নং ইবি১৪১০০৮) ও মোঃ শফিউল আলমকে (এমবিএ)- আর ১৯৩১৪৭) ১ বছরের জন্য এবং এফজাজুল হক অমি (আইডি নং সি১৬৩০২৪), আবদুল্লাহ আল তাশরীফ (আইডি নং ইটি১৬৩০৩৩) ও আবদুল্লাহ আল নাঈমকে (আইডি ইটি১৬৩০২৮) ১ সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়াও আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক পরিচয় পত্র (আইডি কার্ড) বহন ও প্রদর্শনের নির্দেশনাও দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরুর পর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে ছাত্রলীগ সমর্থক নেতাকর্মীদের মতানৈক্য চরম আকার ধারণ করে। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এক ছাত্রকে নির্যাতন ও শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহারসহ নানান অভিযোগ তোলে কর্তৃপক্ষ। এসব অভিযোগে গত ২৯ জানুয়ারী কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দেশ প্রদান করে। অন্যদিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও প্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে জামায়াত আদর্শের দাবি করে তাদের মাধ্যমে সরকার বিরোধী কার্যক্রম, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুরে মদদ প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন। এসব বিষয়ে সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক সংবাদ সম্মেলন করে পাল্টা বিভিন্ন অভিযোগ তোলে কর্তৃপক্ষও।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র নিজেকে নির্যাতিত দাবি করে ছাত্রলীগের ১০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুরের অভিযোগে জামায়াতের নায়েবে আমির, কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন দক্ষিণ জেলা যুবলীগের নেতা এক আইনজীবি।
সব মিলিয়ে গত প্রায় দুই মাস ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র তিক্ততা বিরাজ করছিল। এরই মধ্যে আজ বুধবার আইআইইউসির জনসংযোগ কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মোঃ মোশতাক আহমেদ উক্ত সিদ্ধান্ত জানান।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন