শিক্ষার্থী নির্যাতনকারীদের আমলনামা বেরিয়ে এসেছে। এরা নানান অপকর্ম ও অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে গোয়েন্দা ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এরা হেন কাজ নেই যা ক্যাম্পাসে ঘটায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন যৌন হয়রানি, মাদক বাণিজ্য ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে তথ্য মিলেছে। এরা ছাত্রলীগের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের নাম ব্যবহার করে নানান অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ তাদেরকে অনুপ্রবেশকারী বলেও মন্তব্য করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জহুরুল হক হলের ওই ৪ শিক্ষার্থীকে মারধরের ব্যাপারে মূল পরিকল্পনাকারী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এর আগে এদের একজনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ছাত্রলীগের কিছু অসাধু নেতার আশ্রয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছিলো ওরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এদেরকে সবাই ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী হিসেবে জানে। নানা সময় এরা অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। কিন্তু ছাত্রলীগ এদেরকে দিয়ে কী আদায় করতে চাচ্ছে সেটা তারাই ভালো বোঝে।
জহুরুল হক হলের নির্যাতনে নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে ছিলেন- হল সংসদের সহ-সভাপতি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, মাহফুজুর রহমান ইমন, হল ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা প্রমূখ।
জানা গেছে, এদের মধ্যে আনোয়ার এবং হামজা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী। আর আব্বাসী সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী। অন্যদিকে ইমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়াদউত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাসের অনুসারী বলে তথ্য মিলেছে।
২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টম্বর শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল এলাকায় সেবা ফার্মেসী দোকানে হামলা চালিয়ে শুভ নামের এক কর্মচারীর মাথা ফাটিয়ে দেন।
এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ তাকে তাকে সংগঠন থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করেন। কিন্তু সংগঠনটির তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরি শোভন তার আশ্রয়ে তাকে রেখে দেন। ফলে সে দাপটের সাথে চাঁদাবাজি করে বেড়ায়। এরপর ২০১৯ সালে ৬ জানুয়ারি ছিনতাইয়ের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতারাই তাকে হল থেকে বের করে দেন।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হল শাখা ছাত্রলীগ কমিটির কয়েকজন পদধারি নেতা জানান, আমির হামজা অনেক দিন ধরে হলে মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবন, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় এবং ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদা আদায়সহ নানা অপরাধ করে আসছিলেন। তার অপরাধের কয়েকটি ঘটনা গণমাধ্যমেও এসেছে। তার এই অপকর্মের কারণে হল এবং ছাত্রলীগের বদনাম হচ্ছে। তাই আমরা তাকে হল থেকে বের করে দিয়েছিলাম।
এছাড়াও রাজধানীর বাটা সিগন্যালের সামনে কোটা আন্দোলনের ৩ নেতাকে মারধরের অভিযোগ মিলেছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া ৭ কলেজের অধিভুক্তি বাতিল চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশ নেয়া বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।
মারধরকারী অন্য আরেক নেতা জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সমর্থক শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগের ১৪ জন নেতাকর্মীকে চিহ্নিত করে দিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আনোয়ার হোসেন। সেদিন আনোয়ার হোসেন শহীদ মিনার এলাকায় কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে।
এ ছাড়াও তাকে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় মারামারিতে প্রথম সারিতে দেখা যায় বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। মারধরকারী অন্য নেতা হলেন জুহুরুল হক শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত।
হল সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে হলে কর্মচারীর নিয়োগ আটকে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রলীগ সূত্র থেকে জানা যায়, চাহিদা মতো টাকা না দেয়ায় এই নিয়োগ আটকে দেন তিনি।
হামলাকারীদের আরেকজন সার্জেন্ট জহুরুল হক শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমানে হলের সর্বোচ্চ পদ প্রত্যাশী মাহফুজুর রহমান ইমন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাসের এই অনুসারী ২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের উপর হামলা চালায়। পরে হামলার কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন