এক শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানোর প্রলোভন দেখিয়ে তার বোনকে কুপ্রস্তাব দেয়ার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অফিসের ঊর্ধ্বতন সহকারী আরমান হেলালীর বিরুদ্ধে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন। গত শনিবার রাতে ওই নারী তার ফেসবুকে আরমান হেলালীর দেয়া নানা কুপ্রস্তাবের স্ক্রিনশট শেয়ার করেন।
ফেসবুকে দেওয়া স্ক্রিনশটগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ২৮ নভেম্বর বিকেল ৫ টা ৪৪ মিনিটে আরমান হেলালী ওই নারীকে বলেন, 'আগামীকাল চকবার আছো?' জবাবে ওই নারী কেন জানতে চান। তখন আরমান হেলালী বলেন, তোমার সঙ্গে কথা আছে। দেখা করে কথা বলবো। তোমার বোনকে এনো না। একা এসো।'
ওই নারী জানতে চান, 'কোন খবর কি পেয়েছেন আর ভাইয়া।' জবাবে আরমান হেলালী বলেন, 'না পাইনি। আর পেলেও বলবো না।' ওই নারী কেন জানতে চাইলে আরমান বলেন, 'আমি তোমার ভাইয়া না তাই। যারা তোমার ভাই তাদের থেকে খবর নাও।'
জবাবে ওই নারী বলেন, 'বুঝিনি'৷ তখন আরমান বলেন, 'বললাম আমাকে ভাইয়া ডাকবেনা।' তখন ওই নারী বলেন, 'তাহলে কি ডাকবো'। জবাবে আরমান বলেন, 'যা তোমার ইচ্ছা'। ওই নারী তখন বলেন, 'প্লিজ আমাকে চবির খবরটা জানলে বলবেন। আমার ছোটবোন প্রতিদিন কান্না করে ব্যাপারটা নিয়ে।'
আরমান ওই নারীকে বারবার বিরক্ত করলে ওই নারী আরমানকে পরবর্তীতে বলেন, 'ভাইয়া ওদের আর ভর্তি করাবেনা, সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে৷ আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না। ধন্যবাদ'। জবাবে আরমান হেলালী বলেন, 'আমার কথায় ভিসি সব করবে। আমি ভর্তি করাতে পারবো তোমার বোনকে।'
এসময় ওই নারী কিভাবে জানতে চাইলে আরমান হেলালী বলেন, 'নতুন ভিসিকে আমি যা বলবো তা করবে। ভর্তির কাজ শুরু হয়েছে। আমি ভর্তি করাতে পারবো তোমার বোনকে। ভিসি'র সাথে আমার খুব ভাল রিলেশন। আমি কিছু বললে মানা করবেনা কখনো। এবারের ভিসি আমাদের ভিসি।'
তখন ওই নারী বলেন, 'দরকার নেই। ধন্যবাদ আপনাকে।' জবাবে আরমান হেলালী বলেন, 'আচ্ছা দেখা কর। আমি বুঝিয়ে সব বলছি'। তখন ওই নারী বলেন, 'দেখা কেন করবো, আজব। প্লিজ ডিস্টার্ব করবেন না।' আরমান হেলালী তখন বলেন, 'আমি তোমাকে ভালবাসি'৷
জবাবে ওই নারী বলেন, 'ফালতুমি করবেন না একদম।' আরমান হেলালী বলেন এ সময়, 'তোমার নাম্বারটা দাও। রাত হলে আর কন্ট্রোল হয় না। কথা বলবো।' এর পরপর ওই নারীর মেসেঞ্জারে কিছু অশ্লীল ছবি পাঠান আরমান হেলালী৷
এসব কথোপকথনের স্ক্রিনশট ফেসবুকে দিয়ে ওই রাতে ওই নারী তার আইডি থেকে পোস্ট করে লেখেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরণের কর্মকর্তা থাকতে পারে বিশ্বাস হয় না। আমার ছোটবোন ইম্প্রুভমেন্ট দিয়ে এবার এডমিশন টেষ্ট দিয়েছিল। তার ভর্তির ব্যাপারে কথা বলতেই চবির রেজিস্ট্রার অফিসে যাওয়া। এবং সেখানেই এই মানুষরুপী জানোয়ারের সাথে পরিচয়। হেল্প করার কথা বলে আমার নাম্বার নেয়, পরে ফেসবুক আইডি পেয়ে প্রায় ডিস্টার্ব করা শুরু করে। আজ ডিস্টার্বের মাত্রা ছাড়িয়ে দিয়েছে কিছু অশালীন ছবি পাঠিয়ে। এভাবে সাহায্যের নামে বাজে প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছিল অনেক দিন।
ভুক্তভোগী ওই নারী আরও লেখেন, 'হ্যাঁ আমি চবির কেউ না। তাই বলে চবির একজন কর্মকর্তা আমাকে বাজে কথা বলে যাবে তার কোন অধিকার নেই। আপনারা যারা চবি শিক্ষার্থী আছেন আমি এই অভিযোগটা আপনাদের দিলাম। এসব কুত্তার বাচ্চাদের চবি থেকে বের করুন। না হয় সামনে অবস্থা আরো বাজে হবে।' ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর বোনের সাথে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত প্রভাবশালী হওয়ায় কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি বিরল ঘটনা। ডিন অফিসের মত একটি জায়গায় এমন অনৈতিক লোক চাকরি করতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে তাকে উপাচার্যের উচিত সাসপেন্ড করা। কারণ সে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এ ঘটনার তদন্ত প্রভাবিত করতে পারে।
এ বিষয়ে আরমান হেলালী বলেন, এগুলো সব মিথ্যা বানোয়াট। এ বিষয়ে আমি আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বরাবর একটি অভিযোগও দিয়েছি।
বিডি-প্রতিদিন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন