বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে এসে স্বপ্ন ঝরছে শিক্ষার্থীদের। সামান্য অভিমান কিংবা ঘটনায় আত্মহত্যার ভয়ংকর পথ বেছে নিচ্ছেন তারা। গত জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার ভয়ংকর পথ বেছে নিয়েছেন। এরমধ্যে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ইডেন কলেজ ও বদরুন্নেসা কলেজের দুই ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা দেশজুরে আলোড়ন সৃষ্টি করে। সর্বশেষ ২৭ নভেম্বর রাতে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্টক্লাস ফার্স্টবয় আবদুল্লাহ আল নোমান গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। গত ৮ জুন ছারপোকা মারার ওষুধ খেয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্র রাসেল হোসাইন। গত ২৯ আগস্ট আত্মহত্যা করেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) জারমিন আক্তার জুঁই। গত ৩ অক্টোবর ইঁদুর মারার বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বকুল দাশ। গত ২৮ অক্টোবর আত্মহত্যা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্টক্লাস সেকেন্ড বয় ফিরোজ কবির। মাস্টার্সে ৭ম হওয়ায় গত ১৪ জানুয়ারি আত্মহত্যা করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি (জিইবি) বিভাগের ফার্স্টক্লাস ফার্স্টবয় (অনার্স পর্যন্ত) তাইফুর রহমান প্রতীক। বউ-শাশুড়ির অপমানে গত ৭ ফেব্রুয়ারি আত্মহত্যা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নববিবাহিত ছাত্র রবিউল আলম। রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্টবয় সবুজ মিত্র আত্মহত্যা করেছেন ২৯ মার্চ। জন্মদিনে উইশ না করায় গত ২২ এপ্রিল আত্মহত্যা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী প্রিয়াংকা সাহা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হংস প্রসাদ হিমু গত ১০ জানুয়ারি ফেইসবুকে লাশের ছবি পোস্ট করে আত্মহত্যা করেছেন। গত ৪ অক্টোবর আত্মহত্যা করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাকিব ভুঁইয়া। ফেইসবুকে স্ট্যাটাসের পর গত ৮ জুন আত্মহত্যা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সঞ্জু দেব। প্রেমের কারণে বাবা-মা বকা দেয়ায় গত ১ জুলাই আত্মহত্যা করেছেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন রায়হান উদ্দিন সজিব। ঝগড়া শেষে গত ২০ আগস্ট আত্মহত্যা করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তাসকিয়া নুহাশ। গত ৪ জুন নিজ বাসা থেকে শুভ্র জ্যোতি টিকাদার নামে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়। অনার্স পরীক্ষায় তিন বিষয়ে ফেল করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ছাত্রী মনিজা আক্তার মিতু আত্মহত্যা করেছেন ১৬ জুলাই। এছাড়া গত ২১ এপ্রিল রাতে বয়ফ্রেন্ডকে ভিডিও কলে রেখে আত্মহত্যা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ইডেন কলেজের ছাত্রী সায়মা কালাম মেঘা।
রোগের যন্ত্রণায় ফার্স্টক্লাস ফার্স্টবয়ের আত্মহত্যা : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ছাত্র আবদুল্লাহ আল নোমান গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ওই ছাত্র বিভাগে ফার্স্টবয় ছিলেন। গত ২৭ নভেম্বর রাতে মেস থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার করা হয়।
সুইসাইড নোটে তিনি লিখেছেন, তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নন। যদিও সুইসাইড নোটটি প্রকাশ করা হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করা শর্তে মেসের এক ছাত্র জানিয়েছেন, ‘সুইসাইড নোটে লিখেছে ওর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়, ওর একটা অসুখ রয়েছে যেটা সহ্য করতে না পেরে সুইসাইড করেছে। ওর মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছে, ছোট বোনের দিকে খেয়াল রাখতে বলেছে। বন্ধুদের অনুরোধ করেছে, ওর ড্রেসগুলো যেনো কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দেয়; আর মালামালগুলো যেনো বিক্রি করে দেয়।’
নোমানের বন্ধুরা জানান, নোমান মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিল। বেশ কয়েকবার চিকিৎসাও করানো হয়। তবে আজ তার আচরণ স্বাভাবিক ছিল। আজকেও মেসের বাজার করেছে। নামাজও পড়েছে। উল্লেখ্য, নোমানের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায়। প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন তিনি।
ছারপোকা মারার ওষুধ খেয়ে মারা গেলেন জাবি ছাত্র : ছারপোকা মারার ওষুধ খেয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্র রাসেল হোসাইন। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তিনি এভাবে আত্মহত্যার ভয়ংকর পথ বেছে নিয়েছেন। তার বাড়ি বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়ায়। গত ৮ জুন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রাসেলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রাসেল অর্থনীতি বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন।
জানা গেছে, রমজান ও ঈদের ছুটি পেয়ে বাড়িতে যান রাসেল। বিভিন্ন কারণে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। এরই একপর্যায়ে রাতে ছারপোকা মারার ওষুধ খান রাসেল। তার পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি টের পেয়ে তাকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে রাসেলের মৃত্যু হয়।
ক্লাস শেষে ছাত্রীনিবাসে গলায় ফাঁস দিলেন জুঁই : ক্লাস শেষে ছাত্রীনিবাসে ফিরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) জারমিন আক্তার জুঁই। গত ২৯ আগস্ট তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল জারমিন আক্তার জুঁই। ত্রিশাল চরপাড়ায় অবস্থিত শেখ মঞ্জিলের একটি কক্ষে গলায় উড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। জুঁই জামালপুর সদরের বাগেরহাট গ্রামের জুলহাস হোসেনের মেয়ে। ওই ছাত্রীর বান্ধবী শীলা সাদিয়া জানিয়েছেন, জারমিন আক্তার জুঁই আমাদের সাথে বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত বিভাগের ক্লাসে উপস্থিত ছিল। পরে ক্লাস শেষ করে ছাত্রীবাসে এসে কিভাবে কি হলো তা আমরা বলতে পারছি না।
ইঁদুরের বিষ খেয়ে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের মৃত্যু : ইঁদুর মারার বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র বকুল দাশ। পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্র শাহপরান হলের ১২০ নম্বর কক্ষের বাসিন্দা ছিলেন।
গত ০২ অক্টোবর রাতে ‘রেট কিলার’ নামে এক ধরনের ইঁদুর মারার বিষপানের পর সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর প্রফেসর জহির উদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শাহপরান হলের প্রভোষ্ট প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান খান বলেন, বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে নিজ কক্ষে বমি করতে থাকলে রুমমেটরা বকুল দাশকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। চিকিৎসারত অবস্থায় বকুল ০৩ অক্টোবর ৭টায় মারা যায়। মৃত্যুে আগে তিনি চিরকুটে লিখে গেছেন নিজের ইচ্ছাতেই তিনি এমন পথ বেছে নিয়েছেন। তার মৃত্যুর জন্য পরিবার বন্ধু-বান্ধব কেউই দায়ি নয়। সবশেষে তিনি লিখেছেন চাপ ও অবহেলায় এমন পথ বেছে নিয়েছি...
রাবিতে পরীক্ষার আগের দিনেই ফার্স্টক্লাস সেকেন্ড বয়ের আত্মহত্যা : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিতের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন ফিরোজ কবির। ক্লাসে সিরিয়াস সেই ছাত্রটি সবসময় ভালো ফল করে আসছিলেন। তবে ফাইনাল পরীক্ষার আগের দিনে সব শেষ করে দিলেন তিনি। ৩য় বর্ষের সমাপনী পরীক্ষা দেয়া হলো না তার। এর আগেই তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন। ফিরোজ কবির নামের ওই ছাত্রের বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়। গত ২৮ অক্টোবর গলায় ফাঁস দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী আমজাদের মোড় এলাকার রাজু ছাত্রাবাস থেকে ফিরোজ কবিরের লাশ উদ্ধার করে মতিহার থানা পুলিশ।
সহপাঠী রেজাউল করিম বলেন, সকাল সাড়ে ৯টায় ফিরোজের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় তার। ও বলেছিলেন পরীক্ষা দেবে না। পরীক্ষা দিবে না বললে ভাবছিলাম হয়তো মজা করে বলছে। এমন একটা ঘটনা ঘটাবে বিশ্বাসই করতে পারছি না। তবে ২য় বর্ষের মাঝামাঝি সময়ে ভালো লাগে না, ভালো লাগেনা এমন করতো ফিরোজ। আমরা অনেক বোঝাতাম। একসাথে নামাজ পড়েছি। কোনো সম্পর্কগত সমস্যাও নেই যতদূর জানি।
অনার্সে ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট, মাস্টার্সে ৭ম স্থান, ক্ষোভে প্রাণ দিলেন প্রতীক : তাইফুর রহমান প্রতীক। পড়াশোনা করতেন শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি (জিইবি) বিভাগে। ২০১১-১২ সেশনের ওই ছাত্র অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হলেও মাস্টার্সে তার ফল বিপর্যয় হয়। শীর্ষস্থান ধরে রাখতে না পারায় ক্ষোভে দুঃখে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। তবে তার পরিবারের দাবি প্রতীককে ইচ্ছাকৃতভাবে ফল খারাপ করানো হয়েছে। শিক্ষকতার স্বপ্ন ছিল প্রতীকের। শিক্ষকদের বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে তার সেই স্বপ্ন বিনাশ হয়েছে। আর একারণেই আত্মহত্যার ভয়ংকর পথ বেছে নিয়েছেন প্রতীক।
জানা গেছে, প্রতীক অনার্সে প্রথম হলেও মাস্টার্সে যৌথভাবে ৭ম স্থান অধিকার করেন। মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টারে তার রেজাল্ট ৩.৫৮ হলেও দ্বিতীয় সেমিস্টারে তার রেজাল্ট ৩.৩৩ হয়। যৌথভাবে প্রতীক সপ্তম হন মাস্টার্সে। ওই ফল নিয়ে প্রতীক সন্তুষ্ট ছিলেন না। শিক্ষকতার স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন প্রতীক। ইংল্যান্ডে যাওয়ার জন্য জিআরই করছিলেন প্রতীক। এসব বিষয় নিয়ে প্রায়ই বিমর্ষ থাকতেন প্রতীক।
প্রতীকের মৃত্যুর জন্য জিইবি বিভাগের শিক্ষকদের দায়ি করেছেন তার বড় বোন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের শিক্ষক শান্তা তাওহিদা। তিনি অভিযোগ করেন, ‘অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া ছেলেটাকে বিভিন্ন ইস্যু বানিয়ে মাস্টার্সে সুপারভাইজার দেয়নি। বিভিন্ন কোর্সে নম্বর কম দিয়েছে! আমার ভাইটা টিচার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল এটাই তার অপরাধ...গত ছয় মাস ধরে ডিপার্টমেন্ট তিলে তিলে মেরে ফেলেছে আমার ভাইকে...আমার কলিজার টুকরা কষ্ট সহ্য না পেরে কাল সুইসাইড করেছে...।’
এদিকে প্রতীকের মৃত্যুর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচার অ্যান্ড মিনারেল সায়েন্স অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বেলাল উদ্দীনকে প্রধান করে কমিটি করা হয়। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম ও সহকারী প্রক্টর সামিউল ইসলাম।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জানুয়ারি সিলেট নগরীর কাজলশাহ এলাকার একটি বাসা থেকে পুলিশ প্রতীকের ফ্যানে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। এঘটনায় প্রতীকের বাবা তৌহিদুজ্জামান সিলেটের কোতোয়ালি থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।
বউ-শাশুড়ির অপমানে জাবি ছাত্রের আত্মহত্যা : বউ-শাশুড়ির অপমান সহ্য করতে না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নববিবাহিত এক ছাত্র আত্মহত্যা করেছেন। সাভারের নিজ বাসা থেকে রবিউল আলম (২১) নামের ওই ছাত্রের লাশ গত ০৭ ফেব্রুয়ারি উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিউল আলম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে পড়তেন। পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করে সংসারে অর্থের জোগান দিতেন রবিউল। দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কের পর গত ১৬ ডিসেম্বর বিয়ে করেন তিনি।
জানা গেছে, সাভারের উত্তরপাড়া মহল্লার স্থানীয় বাসিন্দা খোকনের মেয়ে ইতি আক্তারের সঙ্গে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল রবিউলের। রবিউল মেধাবী ছাত্র হওয়ায় তাঁর সঙ্গে ইতির বিয়ে দেয় ইতির পরিবার। তবে বিয়ের পর রবিউল আরো বেশি আর্থিক সমস্যায় পড়ে যান। ভাড়া বাসায় বসবাস করা রবিউল চলতি মাসের ভাড়া পরিশোধ করতে পারছিলেন না। উপায় না দেখে শ্বশুরবাড়ি থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া একটি আংটি বন্ধক রেখে ঘর ভাড়া পরিশোধ করেন তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রবিউলের স্ত্রী ইতি ও শাশুড়ি বৃহস্পতিবার সকালে রবিউলকে উপহাস করেন।
রবিউলের স্বজনদের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকে রবিউলসহ তাঁর গোটা পরিবারের দরিদ্র অবস্থা নিয়ে উপহাস করতেন তার স্ত্রী ও শাশুড়ি। অপমান সহ্য করতে না পেরেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন রবিউল।
রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্টবয়ের আত্মহত্যা : রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্র ভয়ংকর পথ বেছে নিয়েছেন। অভিমানে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। গত ২৯ মার্চ তিনি তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালির গলাচিপার নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেছেন। বাড়ির পাশে একটি আমগাছে ঝুলে আত্মহত্যা করেন তিনি।
সবুজ তার ব্যাচে ফার্স্টবয় ছিলেন। তবে তার রেজাল্ট খারাপ করার পর থেকে তিনি বিমর্ষ থাকতেন। সদ্য প্রকাশিত ফলাফলে তার সিজিপিএ ছিল ৩.৬৭। তিনি ইতিহাসের ছাত্র ছিলেন। প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় দ্বিতীয় হওয়ায় তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে।
জন্মদিনে উইশ না করায় প্রিয়াংকার আত্মহত্যা : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন প্রিয়াংকা সাহা। মার্স্টাস শেষ করেই শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। তবে কিছুদিন যেতে না যেতেই তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। জন্মদিনে উইশ না করায় আত্মহত্যা করেছেন তিনি। জন্মদিনের রাতেই তিনি ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন বলে নিশ্চিত করেছে পরিবারের সদস্যরা।
জানা গেছে, প্রিয়াংকা রাবি থেকে নাট্যকলায় মাস্টার্স শেষ করে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পিপুলবাড়িয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকা হিসেবে যোগ দেন। তিনি সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার গোশলা রোডের বলরাম সাহার মেয়ে। ২২ এপ্রিল সকালে নিজ বাড়ি থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়না তদন্ত শেষে তার লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।
প্রিয়াংকা সাহার বাবা বলরাম সাহা ও মা বন্দনা সাহা জানান, ২২ এপ্রিল ছিল প্রিয়াংকার জন্মদিন। ওইদিন বিকেলে প্রিয়াংকা কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে তার বান্ধবীদের সাথে মোবাইলে জন্মদিন নিয়ে কথা বলছিল। এসময় তারা মেয়ের কাছে নিশ্চিৎ হন ওইদিন প্রিয়াংকার জন্মদিন। এসময় প্রিয়াংকা তাদের উদ্দেশ্য করে বলে, তোমরা আমার বাবা-মা, আর তোমরাই আমার জন্মদিনের কথা ভুলে গেলে! তবে এ মন্তব্য করার পরও প্রিয়াংকা সবার সাথে স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলছিল। রাত সাড়ে আটটার দিকে প্রিয়াংকা নিজের শুতে যায়। এর কিছুক্ষণ পর মা বন্দনা সাহা প্রিয়াংকাকে রাতের খাবার খেতে ডাকাডাকি করেন। এসময় প্রিয়াংকার কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে তিনি ছোট মেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের ছাত্রী অন্তরা সাহাকে বিষয়টি জানান। পরে অন্তরা তার বোন প্রিয়াংকাকে মোবাইল করলেও তা রিসিভ করেনি। সকালে নাস্তা করার জন্য পরিবারের সদস্যরা প্রিয়াংকাকে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু প্রিয়াঙ্কার কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। পরে প্রতিবেশীদের ডেকে এনে দরজা ভেঙে প্রিয়াংকাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়।
ফেইসবুকে লাশের ছবি দিয়ে আত্মহত্যা : রাজধানীর উত্তরার গত ১০ জানুয়ারি একটি ছাত্রবাসে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হংস প্রসাদ হিমু। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজিতে পড়াশোনা করতেন। তার গ্রামের বাড়ী বরিশাল। আত্নহত্যার কিছুক্ষণ আগে তিনি পায়ের আঙ্গুলে ট্যাগ লাগানো মর্গে থাকা এক লাশের ছবি পোস্ট করেন।
জানা গেছে, উত্তরার ১০ নাম্বার সেক্টরে অবস্থিত একটি ছাত্রাবাসের ষষ্ঠ তলায় থাকতেন হিমু। প্রতিদিনের মতো গত ১০ জানুয়ারি দুপুরে সবার সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করে নিজের ঘরে যান হিমু। বিকেল ৩ টার দিতে তার সহপাঠী অর্পিতা প্রিয়া ওই ছাত্রাবাসের ছাত্রদের ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে হিমুর খোঁজ নিতে বলেন। এরপর ডেকে, দরজা নক করে তার কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন থানায় অবহিত করলে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে।
অভিমানে গলায় ফাঁস দিলেন সাকিব : রাজধানীর রায়েরবাজারের একটি বাসায় সাকিব ভুঁঁইয়া (২৬) নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী অভিমানে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। গত ৪ অক্টোবর দুপুরে রায়েরবাজারের জাফরাবাদ এলাকার ২৩৫/২ নম্বর বাসায় এ ঘটনা ঘটে।
সাকিবের মা শিরিন আক্তার জানান, ঘটনার সময় তিনি বাসায় ছিলেন না। তার স্বামী আবদুর রহিম ভুঁইয়াও নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। আর সাকিব একটি ঘরে ঘুমিয়েছিলেন। পরে বাসায় ফিরে তারা সাকিবের ঘরের দরজা বন্ধ দেখে তাকে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু সাকিব ঘরের দরজা না খোলায় তাদের মনে সন্দেহ হয়। পরে তারা ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা সাকিবকে ফ্যানের সঙ্গে গলায় রশি দিয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় দেখতে পান।
ফেসবুক স্ট্যাটাসের ৪ দিন পর চবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা : ফেইসবুকে স্ট্যাটাসের ৪দিন পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র সঞ্জু দেব আত্মহত্যা করেছেন। গত ৮ জুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছিলেন, I feel I have lost.../I'll die before the task is done.../May be my love lacked something.../ May be I was too weak.../May be the God did't want it. স্ট্যাটাসের চার দিন পর শহরের মিজান হোটেলের কক্ষ থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে প্রেম সংক্রান্ত ব্যর্থতার জের ধরেই ওই মেধাবী শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশের প্রাথমিক ধারণায়ও আত্মহত্যার প্রমাণ মিলেছে। তাছাড়া মৃত্যুর আগে এই স্ট্যাটাসেও ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন তিনি।
পুলিশ জানায়, গত ১০ জুন হোটেল মিজানে একটি কক্ষ নেন সদর উপজেলার জায়ফরপুর গ্রামের কানাই লাল দেবের ছেলে সঞ্জু দেব। ১১ জুন সারাদিন তিনি রুম থেকে বের হননি। ১২ জুন দুপুর ১২টা পর্যন্ত হোটেল কক্ষ থেকে বের না হওয়ায় সংশ্লিষ্টরা খবর দেন পুলিশে। পুলিশ গিয়ে দরোজা ভেঙে ফ্যানের সঙ্গে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে।
সদর থানার ওসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ১০ জুন হোটেল কক্ষে অবস্থানের পর সঞ্জু দেব আর বের হননি। আমাদের মনে হয়েছে ১১ জুন রাতেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। আমাদের প্রাথমিক ধারণায় আত্মহত্যার প্রমাণ মিলেছে। এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
প্রেমের কারণে বাবা-মা বকা দেয়ায় প্রাণ দিলেন সজিব : চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন রায়হান উদ্দিন সজিব। সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ওই ছাত্র বাবা-মায়ের বকা খেয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। গত ১জুলাই রাতে তিনি বারআউলিয়ার ফুলতলা এলাকায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। রায়হান ফুলতলা গ্রামের জামাল উদ্দিন চৌধূরীর ছেলে।
রায়হান চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকেে এইচএসসি পাশ করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন।
জানা যায়, প্রেমঘটিত কারণে মা-বাবা বকাঝকা করলে অভিমানে তিনি নিজ ঘরে আত্মহত্যা করেন।
ঝগড়া শেষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা : রাজধানীর গুলশানের নিকেতনে তাসকিয়া নুহাশ নামে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন। ওই ছাত্রী বেসরকারি সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির ইকোনমিকস বিভাগে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। স্বামীর সঙ্গে ঝগড়ার পর তিনি এম কাজ করেছেন। গত ২০ আগস্ট তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিকেল ৫টায় নুহাশকে মৃত ঘোষণা করেন।
নুহাশের বড় ভাই ফারহান ইসলাম বলেন, নিকেতনে আমাদের বাড়িতে তার শয়ন কক্ষে দরজা বন্ধ করে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেয় নুহাশ। পরে বিষয়টি জানতে পেরে ছিটকিনি ভেঙে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বাসায় আমি, মা ও নুহাশ থাকতাম।
তিনি আরো বলেন, গত ৮ মাস আগে তাদের বিয়ে হয়। তার স্বামী সৈয়দ ফরমানুর রেজা গত জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।
তাসকিয়া নুহাশ সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণ দীয়া গ্রামের মৃত ফরিদুল ইসলামের মেয়ে। তার স্বামীর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
নিজ বাসায় বুয়েট ছাত্রের লাশ : গত ৪ জুন রাজধানীর এলিফেন্ট রোড এলাকার একটি বাসা থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শুভ্র জ্যোতি টিকাদার নামে ওই ছাত্র বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। ৩ জুন দিবাগত রাতে শুভ্রর সঙ্গে তার স্ত্রী নাদিয়া বিনতে রউফের কথাকাটাকাটি হয়। এরপর শুভ্র তার নিজের কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেন। ওই সময় শুভ্রর স্ত্রী নাদিয়া পাশের কক্ষে চলে যান। পরদিন দুপুরে শুভ্র তার কক্ষের দরজা না খোলায় আরেকটি চাবি দিয়ে দরজা খুলে শুভ্রকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তার স্ত্রী। পরে পাশের ভবনে বসবাসকারী শুভ্রর বাবা নন্দদুলাল টিকাদারকে ফোনে ঘটনাটি জানান নাদিয়া। শুভ্রর বাবা এসে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে লাশ নামান।
শুভ্র ও তার স্ত্রী দুজনই বুয়েট থেকে পাস করেন। শুভ্র ব্যবসা ও তার স্ত্রী চাকরি করতেন। এ ঘটনায় শুভ্রর বাবা বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।
তিন বিষয়ে ফেল করায় ঢাবি অধিভুক্ত ছাত্রীর আত্মহত্যা : অনার্স পরীক্ষায় তিন বিষয়ে ফেল করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন। মনিজা আক্তার মিতু নামে ওই ছাত্রী গত ১৬ জুলাই রাতে নিজের বাড়িতে গিয়ে গাছের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। তিনি অর্থনীতি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ছিলেন মিতুর বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানায়।
মিতুর খালা রিনা খাতুন জানান, মিতু গত ১৬ জুলাই কলেজ থেকে বিকেলে বাড়ি ফিরে। বাড়িতে স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করে। পরে রাত ১০টার দিকে তার ছোট বোনের সঙ্গে একই ঘরে ঘুমাতে যায়। রাত ২টার সময় মিতুর মা ঘরের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি ও খোঁজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে ঘরের পেছনে গাছের সঙ্গে মিতুকে ঝুলে থাকতে দেখে চিৎকার দিলে পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে।
মিতুর কলেজের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী কেয়া বলেন, ১৬ জুলাই সকালে সাত কলেজের আন্দোলনে আমরা নীলক্ষেত মোড়ে ছিলাম। মিতু অনেক ভালো ছাত্রী। টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ চালাত। এছাড়া পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর তিন বিষয়ে ফেল করার বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি মিতু। পরে তার মাকে জড়িয়ে ধরে বিষয়টি নিয়ে কান্নাকাটি করেছে বলেও জানান মিতুর এ বান্ধবী।
বয়ফ্রেন্ডকে ভিডিও কলে রেখে ছাত্রীর আত্মহত্যা : বয়ফ্রেন্ডকে ভিডিও কলে রেখে আত্মহত্যা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ইডেন কলেজের এক ছাত্রী। আত্মহত্যার আগে তিনি চিরকুটে লিখে যান ‘আমি বাঁচতে চাইছিলাম। কিন্তু মাহিবি আর ওর মা আমাকে বাঁচতে দেয় নাই। আমি বারবার মাহিবির কাছে কুত্তার মতো যাই আর ও দিনের পর দিন আমারে পায়ে ঠেলে। ওর মা বোন আমারে যা তা বলে।’
ঝালকাঠির মেয়ে সায়মা কালাম মেঘা গত ২১ এপ্রিল রাতে আত্মহত্যা করেন। এসময় তার বয়ফ্রেন্ড মাহিবী ভিডিও কলে ছিলেন। রাজধানী কাঁঠালবাগান এলাকার একটি বাসা থেকে মেঘার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার প্রথম থেকেই মেঘার প্রেমিক ঝালকাঠির ছেলে বরিশাল হাতেম আলী কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মাহিবি হাসান ও তার মাকে মেঘার মৃত্যুর জন্য দায়ী করে আসছিল মেঘার পরিবার। পরে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেন মেঘার বাবা আবুল কালাম আজাদ।
এর আগে মায়ের উদ্দেশে মেঘা লেখেন, ‘আম্মু আমি জানি আমি ছাড়া তোমার আর কেউ নেই। কিন্তু আমি নিরুপায়। তুমি মুক্তা চাচির কাছে জিজ্ঞেস কইরা দেইখো আমার পিঠ দেয়ালে ঠেইকা গেছে। তাই আজকে আমি মইরা গেলাম। আমার ভাইটারে মানুষ বানাইয়ো। যেন আমার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পারে। আর আব্বুরে সামলাইও। আব্বুকে বুঝাইও, আমি নিরুপায় হইয়া মরছি। - মেঘা।’
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন