ছাত্রলীগের হাতে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ খুন হওয়ার ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতো উত্তাল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)। আবরার হত্যার ৩৬ ঘণ্টা পর বিকাল ৫টার দিকে বুয়েটের নিজ কার্যালয়ে আসেন উপাচার্য। দাবি না মানা পর্যন্ত সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করার কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম ভিসি দেখেছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাবা আল্টিমেটাম দিও না। দাবি তো মেনে নিয়েছি। আমাদের তো বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে হবে।
মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ৩৬ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ক্যাম্পাসে এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (উপাচার্য) অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম।
এর আগে বিকেলে ক্যাম্পাসে আসেন বুয়েট উপাচার্য। ক্যাম্পাসে এসেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন ও কয়েকজন বিভাগীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় প্রশাসনিক ভবনে ভেতর থেকে তালা দেওয়া হয়।
পরে শিক্ষার্থীরাও প্রশাসনিক ভবনের বাইরে থেকে তালা দিয়ে দেন। এক পর্যায়ে বৈঠক শেষ করে ভিসি সাইফুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। তাকে দাবির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি নীতিগতভাবে সব দাবির সঙ্গে একমত বলে জানান।
এ সময় ভিসি বলেন, আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তোমরা (শিক্ষার্থীরা) যেভাবে চেয়েছো সেভাবে করতে হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তার বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেননি।
বুয়েট শিক্ষার্থীরা সকাল থেকেই আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন করে আসছিল। এক পর্যায়ে তারা আট দফা দাবি জানায়। পাশাপাশি দাবি না মানা পর্যন্ত সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বিক্ষোভকারীরা আবরারের খুনিদের বিচারসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলো হলো—
১.খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা খুনিদের ছাত্রত্ব আজীবনের জন্য বাতিল নিশ্চিত করতে হবে;
৩. আবরার হত্যায় দায়ের করা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের অধীনে স্বল্পতম সময়ে নিষ্পত্তি করতে হবে;
৪. আবরার হত্যার ৩০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি, তা তাকে সশরীরে ক্যাম্পাসে এসে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে জবাবদিহি করতে হবে। একইসঙ্গে ডিএসডব্লিউ কেন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়েছেন, তাকে আজ বিকেল ৫টার মধ্যে সবার সামনে সে বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে;
৫. আবাসিক হলগুলোতে র্যাগের নামে এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর সবধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধে জড়িত সবার ছাত্রত্ব
৬. বাতিল করতে হবে। একইসঙ্গে আহসানউল্লা হল ও সোহরাওয়ার্দী হলের আগের ঘটনাগুলোতে জড়িত সবার ছাত্রত্ব বাতিল আগামী ১১ নভেম্বরের বিকেল ৫টার মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে;
৭. রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আবাসিক হল থেকে ছাত্র উৎখাতের ব্যাপারে অজ্ঞ থাকা ও ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হওয়ায় শেরে বাংলা হলের প্রভোস্টকে ১১ নভেম্বর বিকেল ৫ টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে;
৮. মামলা চলাকালীন সব খরচ ও আবরারের পরিবারের সব ধরনের ক্ষতিপূরণ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে।
ব্রেকিংনিউজ/
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন