ঘোষণা দিয়েও নির্ধারিত সময়ে কাউন্সিল করতে পারেনি বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল। কবে হবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
কাউন্সিল নিয়ে হযবরল অবস্থার মধ্যেও চলছে তৎপরতা। সভাপতি ও সাধারণ পদে আলোচনায় এসেছে একঝাঁক নাম। তারা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা রেখে চলছেন। নিজের অবস্থান জানান দিতে দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয়তা দেখাচ্ছেন। পদ পেতে সিন্ডিকেটের দরবারেও তদবির করছেন।
ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মহলে নিজেদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন ডজনখানেক পদপ্রত্যাশী। বিশেষ করে ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির আন্দোলনে দলের পক্ষে নিজেদের ভূমিকাকে ফলাও করে তুলে ধরছেন তারা।
সংগঠনের শর্ত মেনে ২০০০ সালে এসএসসি পাস ও তৎপরবর্তী ব্যাচ থেকে শীর্ষ দুই পদ পেতে আগ্রহীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান, বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ফজলুর রহমান খোকন, বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-তথ্যবিষয়ক সম্পাদক মামুন খান, ঢাবি ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আমিনুর রহমান আমিন, যুগ্ম-সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ইকবাল হোসেন শ্যামল, রিজভী আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আবু তাহের, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল আলম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মো. জাকির হোসেন, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাদিয়া পাঠান পাপন, ঢাবির সিনিয়র সহ-সভাপতি তানভীর রেজা রুবেল, কাজী রওয়ানুল ইসলাম শ্রাবণ, মহিউদ্দিন রাজু প্রমুখ।
নেতৃত্বে আসতে পারলে প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলকে সক্রিয়, শক্তিশালী ও জাতীয় সব ইস্যুতে আন্দোলনের উপযোগী করে গড়ে তোলার বিষয়ে নিজেদের পরামর্শ শীর্ষনেতাদের কাছে তারা তুলে ধরছেন।
কাউন্সিল ঘিরে অবশ্য তৃণমূল ও সাধারণ কর্মীরা সিন্ডিকেট ভেঙে কমিটি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাদের ভাষ্যে, সিন্ডিকেট আর টাকার কাছে কমিটি বিক্রি হলে, আগামী ৫০ বছরেও বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারবে না। একই সঙ্গে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনও জোরদার হবে না।
জাতীয়তাবাদী পরিবার ও সরকারবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখা যোগ্য প্রার্থীদের ছাত্রদলের শীর্ষনেতৃত্বে আনার পরামর্শ দিয়েছে তৃণমূল।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্য জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজে কমিটি নিয়ে কাজ করছেন। প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করেছেন। তাই এবার কাউন্সিলে সিন্ডিকেটের কোনো সুযোগ নেই।
ছাত্রদলের কমিটি গঠনে কাউন্সিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘দ্রুতই ছাত্রদলের চলমান সংকট কেটে যাবে। সবার মতামতের ভিত্তিতে শিগগিরই কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হবে।’
উল্লেখ্য, গত ১৫ জুলাই ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের নেতা নির্বাচনে কাউন্সিল করার ঘোষণা দেয়া হয়।
কিন্তু, প্রার্থী হতে ২০০০ সাল থেকে পরবর্তী সময়ে এসএসসি পাস বয়সসীমা বাধ্যতামূলক করলে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির একাংশ ক্ষুব্ধ হয়। তারা ধারাবাহিক কমিটির দাবিতে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে টানা কয়েক দিন আন্দোলন, ভাংচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটায়।
তাদের নিবৃত্ত করতে ১২ জনকে বহিষ্কার করা হলে আন্দোলন আরও জোরদার হয়। ফলে নির্ধারিত সময়ে কাউন্সিল বাতিল করতে বাধ্য হন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
সর্বশেষ গত ১৬ জুলাই রাতে কাউন্সিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও সার্চ কমিটির নেতারা গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ নিয়ে বৈঠক করেন। কিন্তু, কোনো ধরনের সমাধান ছাড়াই সে বৈঠক শেষ হয়।
তবে কাউন্সিলের বিষয়ে তারেক রহমানকে তারা জানিয়েছেন, ৮০ ভাগ কাজ হয়েছে। বাকি ২০ ভাগ সংকটের সমাধান করে চলতি মাসেই কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন