দীর্ঘ ২৯ বছর পর সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নীতিমালা যুগোপযোগী করতে গঠনও করা হয়েছে নীতিমালা রিভিউ কমিটি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কার্যক্রম চোখে পড়লেও অনেকটাই স্থবির হয়ে পরেছে প্রগতিশীল বাম সংগঠনগুলো।
কার্যক্রম না থাকার ব্যাপারে ক্যাম্পাসে ও হলগুলোতে সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠনের একক আধিপত্যকে দায়ী করছেন প্রগতিশীল ছাত্রজোট। চাকসু নির্বাচনের পূর্বে হলগুলোসহ ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছে তারা। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরিতে সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠনকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট।
চবি শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমানে ক্যাম্পাসে শুধু প্রগতিশীল ছাত্রজোটই নয় অন্যান্য ছাত্রসংগঠন ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা নানা ভাবে অবহেলিত হচ্ছে। ক্যাম্পাসের সবখানে সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠনের একক আধিপত্য বিরাজমান। সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠন বর্তমানে ক্যাম্পাসে এটি ‘ভয়ের সংস্কৃতি’ চালু করেছে। এই পরিবেশে কেউ চাইলে স্বতন্ত্র প্যানেল নিয়ে কথাও বলতে পারবে না। এই ভয়ের সংস্কৃতি বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি এই ‘ভয়ের সংস্কৃতি’ বন্ধে সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠনকেও এগিয়ে আসতে হবে।
এ বিষয়ে ছাত্র ফেডারেশনের (জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল) চবি শাখা নেতা মো. আরাফাত দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমরা প্রগতিশীল ছাত্রজোট ২০১২ থেকেই ক্যাম্পাসে চাকসু নির্বাচনের দাবিতে সরব ছিলাম। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাকসু নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিলেও ক্যাম্পাসে একটি অগণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজমান। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একপক্ষীয় নীতির মাধ্যমে ক্যাম্পাসে সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠনের একক আধিপত্য তৈরি করতে নানা ভাবে সহযোগিতা করছে। আমরা ‘ডাকসু মার্কা চাকসু’ নির্বাচন চাই না। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই তাদের এই নীতি বর্জন করে সকল দলগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
চবি শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফন্টের (মার্কসবাদী) সভাপতি আবিদ খন্দকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমাদের প্রগতিশীল ছাত্রজোটের বিভিন্ন সমাবেশ ও মিছিলে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন হামলা চালিয়েছে। আমরা সেগুলোর বিচার দাবি করেও কোন ফল পাইনি। ক্যাম্পাসের সব জায়গায় ও হলগুলোতে তাদের একক দখলদারি রয়েছে, যার কারণে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অগণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজমান। চাকসু নির্বাচনের পূর্বে সকল দলগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত করা না গেলে চাকসু নির্বাচন একটি অগণতান্ত্রিক নির্বাচনে পরিণত হবে।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের চবি শাখার সভাপতি ধীষাণ প্রদীপ চাকমা বলেন, চাকসু নির্বাচন দেওয়ার জন্য প্রশাসন যে নীতিমালা রিভিউ কমিটি করেছে এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে ক্যাম্পাসে বর্তমানে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ নেই। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একক আধিপত্য। প্রশাসন গত বছর হলগুলোতে মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ না দিয়ে শুধুমাত্র ছাত্রলীগকেই বরাদ্দ দিয়েছে। ফলে হলগুলোতেও ছাত্রলীগের একক আধিপত্য রয়েছে। তাই প্রশাসনকে উদ্যোগ নিয়ে ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরসহ সকল ছাত্রসংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সকল ছাত্রসংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত করার সময় মৌলবাদী অপশক্তির সংগঠন ‘ছাত্র শিবির’ যেন ক্যাম্পাসে ঢুকতে না পারে প্রশাসনকে সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। কারণ আমরা বারবার বলার পরেও এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের নিবন্ধন বাতিল করেনি। আমাদের দাবি অতিদ্রুত এ মৌলবাদী অপশক্তির সংগঠন ছাত্র শিবিরের নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করা হোক।
উল্লেখ্য দীর্ঘ ২৯ বছর পর গত বুধবার (২০ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে এক মিটিংয়ে চাকসু নির্বাচন দেওয়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার দুপুরে চাকসুর নীতিমালা সময়োপযোগী করার জন্য চবি বিজ্ঞান অনুষদ ডিন প্রফেসর ড. শফিউল আলমকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন