বাবাকে হারায় প্রায় ২০ বছর আগে। পরিবারে ছয় ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় সারোয়ার। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।
তিন বছর আগে তার শরীরে কিডনি (সিকেডি) রোগে আক্রান্ত ধরা পড়ে। নিরাময়ের লক্ষ্যে নিয়মিত চিকিৎসাও নিচ্ছিলেন। কিন্তু বাবা না থাকায় তাদের সংসারের খরচ বহন করার সামর্থ্য নেই পরিবারের। চিকিৎসার ভার পরিবারের দ্বারা কোনো মতেই বহন করা সম্ভব না।
অর্থাভাবে গত দুই বছরে সে নিয়মিত চিকিৎসা নেয়া থেকে বিরত থাকে। অল্প অল্প চিকিৎসা নিলেও তা পর্যাপ্ত ছিল না। ফলে বর্তমানে সারোয়ারের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ৬.৭ পরিমাণ বেড়ে গিয়ে তার কিডনি কাজ করছে না। এমতাবস্থায় তার সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপন। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন লম্বা প্রক্রিয়া এবং প্রচুর অর্থ যা তার পরিবার বহন করতে অক্ষম।
চিকিৎসকরা প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন সারোয়ারের চিকিৎসায় আপাতত ১২ লাখ টাকা লাগবে। এই টাকা বাংলাদেশে চিকিৎসার ক্ষেত্রে লাগবে কিন্তু যদি বিদেশে চিকিৎসা করা হয় তাহলে বেশি লাগতে পারে। আর যদি ডায়ালাইসিস করানো হয় তাহলে তাকে বেঁচে থাকা পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে, ফিরতে পারবে না স্বাভাবিক জীবনে। এ জন্য কিডনি প্রতিস্থাপন খুব জরুরি। কেবল কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।
সারওয়ারের সহপাঠীরা যেখানে নিয়মিত ক্লাস করছে সেখানে সারোয়ার রোগের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে এবং মৃত্যর প্রহর গুনছে। সব সময় মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে স্রষ্টা তাকে কত দিন বাঁচিয়ে রাখবেন। এর আগে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ১৭ নম্বর বেডে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। রামেক থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। শেষ ভরসা হচ্ছে উন্নত চিকিৎসা। এমতাবস্থায় সারোয়ার বাঁচতে চায়। সে আবার ফিরে আসতে চায় মতিহারের সবুজ চত্বরে। উৎফুল্লে বন্ধুদের সঙ্গে মেতে থাকতে চায় ক্লাস-ক্যাম্পাসে।
এদিকে মঙ্গলবার উন্নত চিকিৎসার জন্য সারোয়ারকে ঢাকার সিকেডি হাসপাতালে ভর্তি করবেন বলে জানিয়েছেন তার সহপাঠীরা। তার সহপাঠী সাফিউল আন্তিকাম বন্ধন জানান, আমরা একসঙ্গে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে রাবিতে ভর্তি হয়েছিলাম। এতে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হই। কেউ পড়াশোনা শেষ করে সার্টিফিকেট নিয়ে যাবে, আর সারোয়ার চিকিৎসার অভাবে জীবন শেষ হয়ে যাবে এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। তাই আমরা ১০০ জন সহপাঠী শপথ নিয়েছি সারওয়ারের সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তিন বেলা খাবারের মধ্যে এক বেলা খাবার থেকে বিরত থাকব। এর মধ্যে দিয়ে বন্ধুত্ব বাঁচিয়ে রাখব সারা জীবন।
বাংলা বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. পি এম শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, শিক্ষার্থীর চিকিৎসার জন্য সব শিক্ষক ও বিভাগের পক্ষ থেকে প্রায় ১ লাখ টাকা ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি ওই শিক্ষার্থীকে সুস্থ করে তোলার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।
জানা যায়, সারোয়ারের চিকিৎসার জন্য বিভাগের ৫০ জন শিক্ষার্থী ১৫ ইউনিটে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন বিভাগ, হল, দফতর ও নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘সারোয়ার বাঁচতে চাই’ এমন নেমপ্লেট ব্যবহার করে মানুষের দ্বারে দ্বারে সহযোগিতার প্রার্থনা করছেন শিক্ষাথীরা। সহযোগিতাও পাচ্ছেন তবে প্রয়োজন অনুযায়ী অপ্রতুল। এ পর্যন্ত তারা ২ লাখ টাকা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন। আরও ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন।
ছোটবেলা থেকেই শরীরের নানা প্রতিবন্ধকতা পাত্তা না দিয়ে সারোয়ার এগিয়ে চলেছে। সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষে (শিক্ষাবর্ষ ২০১৫-১৬) পড়াশোনা করছে। তার বাড়ি নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলায়। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তার এই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে দেশের দয়াশীল এবং বিত্তবানদের সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে তার পরিবার, শিক্ষক এবং সহপাঠীরা।
সহযোগিতা প্রেরণে
বিকাশ- ০১৯৩০৯১৯২৬৭
মোবাইল- ০১৭৩০৯৩১৫৭৮
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট: ০২০০০০৯৮০৩৮৬৩, অগ্রণী ব্যাংক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন