বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। আমার জন্ম এই চির সবুজ ক্যাম্পাসে। বেড়ে উঠা, শৈশব, কৈশোর সবকিছু জড়িয়ে আছে এই ক্যাম্পাসেই। যৌবনও কাটছে এখানে। যদি সত্যি বলি তাহলে বলতেই হয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে কখনও এর সৌন্দর্য্য উপভোগ করা হয়নি।
তবে আর যাই হোক, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মুহূর্তটা সুখকর ছিলনা আমার জন্য। কেন মেডিকেলে ভর্তি না হয়ে এই গরুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি তার জন্য আত্মীয়, প্রতিবেশীদের কটূক্তি ছিল অনেক লক্ষ্যণীয়। তারপর আবার যখন সবাই শুনল আমি এনিমেল হাসবেন্ড্রিতে ভর্তি হয়েছি তখন সবাই আমার মাঝে রীতিমত আতংক ছড়িয়ে দিয়েছিল। এই ফ্যাকাল্টিতে পড়লে আমার ভবিষ্যৎ নাকি অন্ধকার যেখানে চাকরির বাজারদর খুবই খারাপ। হতাশ হয়ে তারপরও মন স্থির করলাম এখানেই পড়ব এবং সকলকে দেখিয়েই ছাড়ব আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার নয়।
সেখান থেকেই শুরু আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা। প্রথম সেমিস্টারেই আমি অনেক বড় ব্যবধানে প্রথম হলাম। এখনও সেই পজিশনই ধরে আছি, আলহামদুলিল্লাহ। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি নতুন করে সব কিছু শুরু করলাম। প্রথম বর্ষ যেতে না যেতেই আমি সাইকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচরণ করা শুরু করলাম। তখনও কোন মেয়ে এভাবে সাইকেল চালিয়ে বিচরণ করতে সাহস হয়নি। তবে ভালই লাগে ভাবতে, আমার শুরুটা অন্যদের সাহস জুগিয়েছে। এখন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের সাইকেল চালানোটা চোখে পড়ার মত।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন আমার কিছু দক্ষতাকে পাকাপোক্ত করেছে। ছবি আঁকি ছোটবেলা থেকেই কিন্তু স্কেচিংয়ের খুব জোড়ালো আধিপত্য হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিছু মনের মত স্কেচ করে অনেক মানুষের মনোরঞ্জনও করেছি। এ এক বিশাল পাওয়া আমার জীবনে। এখনও আঁকছি একটু সময় পেলেই। মাঝে মাঝেই কেউ আবদার করে বসে কোন স্কেচের জন্য। যতটুকু পারি অই আবদার টুকু পূরন করতে চেষ্টা করি।
ছোটবেলা থেকেই একটা স্বপ্ন ছিল, আমার একটা ক্যামেরা থাকবে আর আমি ইচ্ছে মত ছবি তুলবো। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সে সপ্ন পূরণ করেছি। ছোট্ট একটা সেমি এসএলআর দিয়ে অসংখ্য ছবি তুলি এখন। মন খারাপ থাকলে ছবিগুলো স্ক্রলিং করি আর অবাক হই ইচ্ছেটা তাহলে পূরন হয়েই গেল! বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটোগ্রাফিক সোসাইটির একজন সদস্য হিসেবে ছবি তোলার বেসিক ধারনাটুকু আমার ভালই জানা। তবে মজার ব্যাপার হল এই সোসাইটির প্রথম এবং একা নারী সদস্য ছিলাম আমি। এক সংবাদ সম্মেলনে সেটারও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। এখন এই সোসাইটিতে নারী সদস্য দিন দিন বাড়ছে এবং অনেক চমকপ্রদ আলোকচিত্র উপহার দিচ্ছে। ভালোই লাগে।
আমার জীবনে আরেকটি পরিচয় যুক্ত হয়েছে। নতুন বিজনেস প্রজেক্ট "টিফিন" এর একজন উদ্যোক্তা। খুব অবাক হই, জীবনে যা কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি সবই পূরণ হয়ে যাচ্ছে।
অনেক বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে মাল্টি ট্যালেন্টড, অল রাউন্ডার বলে। তবে যে যেভাবেই ডিফাইন করুন, আমি খুব সাধারণ। আমার সব প্রচেষ্টার পেছনে রয়েছে আল্লাহর ইচ্ছা, বাবা মার বন্ধুসুলভ সাপোর্ট, বন্ধুদের সহায়তা, শিক্ষকদের সহযোগিতা আর নিজের প্রচেষ্টা।
একটা উক্তি ছিল-
'তুমি তোমার স্বপ্নের সমান বড়'
সত্যিই তাই।
আমি আমার জীবনে তা উপলব্ধি করি।"
শারমিন ইসলাম ইভা
পড়াশোনা : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন