প্রধান শিক্ষিকার বেত্রাঘাতে আনিকা মল্লিক (৮) নামে দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি মাদারীপুর পৌরসভার চরমুগরিয়া ২নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
পরিবারের অভিযোগ, গত সোমবার সকালে ইংরেজি পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার বেত্রাঘাতে অসুস্থ হয়ে পড়ে আনিকা। অসুস্থ অবস্থায় তিনটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও দিতে পারেনি চতুর্থ দিনের পরীক্ষা।
স্কুল কমিটির কাছে বিচার না পেয়ে আজ শুক্রবার সাংবাদিকদের পুরো বিষয়টি জানায় আনিকার পরিবার।
আনিকার পরিবার সূত্রে জানা যায়, আনিকা ও তার চাচাতো ভাই অমিত দুই জনই দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশুনা করে। তারা দুই জনই মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী। আনিকা শ্রেণিকক্ষে পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তার চাচাতো ভাই অমিত আনিকাকে ডাক দেওয়ায় হঠাৎ করে প্রধান শিক্ষিকা এসে আনিকাকে বেত্রাঘাত করে, এতে অনেক ব্যথা ও ভয় পায় আনিকা।
ওইদিন পরীক্ষা দিয়ে আসার পরেই জ্বর আসে আনিকার। অনেক অসুস্থ হওয়ায় জিজ্ঞাসা করার পর সে জানায় তাকে ম্যাডাম (ফারাহানা) অনেক মেরেছে। পরদিন আনিকার পরিবার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির কাছে অভিযোগ করলে তারা এর সঠিক বিচার করার আশ্বাস দেন।
ভুক্তভোগী আনিকা বলে, ‘পরীক্ষা শুরু হবে এমন সময় আমার চাচাতো ভাই আমাকে ডাক দিলে তার কাছে গেলে সাম্মি ম্যাডাম এসে আমাকে বেত দিয়ে অনেক আঘাত করে। এ কারণেই আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি।’
আনিকার চাচাতো ভাই অমিত বলে, ‘আমি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে আনিকাকে ডাক দিয়েছিলাম। সেই কারণে ম্যাডাম এসে আনিকাকে অনেক আঘাত করে। আনিকা অনেক কান্না করেছে।’
আনিকার দাদী নিলুফা বলেন, ‘আনিকা অসুস্থ হওয়ার পর স্কুল কমিটির কাছে বিচার দিলাম, তাদের মাধ্যমে আমি বিচার পাই নাই। এমনকি আমাকে নানা রকমের হুমকি দিয়েছে। শাসন করার মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে তাকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা উচিত। আমার নাতি অনেক মেধাবী ছাত্রী। তার রোল নম্বর এক।’
নিলুফা আরও বলেন, ‘এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার আমার নাতি ও আমাকে বিভিন্ন ভয় দেখানো হয়। এতে আনিকা চতুর্থ দিনের শারীরিক শিক্ষা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি।’
আনিকার মা জুলিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার মেয়েকে শিক্ষিকা সাম্মি যে ভাবে বেত দিয়ে আঘাত করেছে। যার ফলে আমার মেয়ের শরীরে জ্বর এসেছে। আমি এর বিচার চাই।’
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন প্রধান শিক্ষিকা ফারহানা সাম্মী। তিনি বলেন, ‘আমি চক্রান্তের শিকার। আমি কাউকে মারধর করি নাই, আমি এই বিদ্যালয় আসার পর থেকে বিদ্যালয়ের সকল অনিয়ম- অব্যবস্থপনাকে সঠিকভাবে পরিচালনা করায় আমাকে ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজন মিলে এই অভিযোগ করছে।’
প্রধান শিক্ষিকা আরও বলেন, ‘যদি ওই মেয়েটি অসুস্থ হয়ে থাকে তাহলে কীভাবে পরপর তিনটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করল।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়া সহ-সভাপতি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এই ঘটনা জানতাম না। আমি অবশ্যই খোঁজ নিয়ে দেখব। যদি এই রকম ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন