জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক আফসার আহমদের বিরুদ্ধে ওঠা নৈতিক স্খলনের অভিযোগের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দীর্ঘসূত্রিতার পথ বেছে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ১৭ জানুয়ারি অধ্যাপক আফসারের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে উপাচার্য বরাবরে গর্ভপাতে বাধ্য করা, সন্তানকে অস্বীকার ও হত্যার হুমকির অভিযোগ করেছেন বিভাগটি থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করা ও বর্তমানে পিএইচডি গবেষণারত এক ছাত্রী।
উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম গত রোববার যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে অভিযোগটি হস্তান্তর করেন। আজ মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) এ নিয়ে বৈঠকে বসে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলের কমিটি সদস্যরা।
অভিযোগপত্রটি অভিযোগকারী নিজেই দিয়েছেন কিনা তা জানতে চেয়ে সেল থেকে ইমেইল করা হয় অভিযোগকারী ছাত্রীর কাছে। সময় দেওয়া হয়েছে ১০ কর্মদিবস।
এ ব্যাপারে সেলটির প্রধান অধ্যাপক রাশেদা আখতারের দাবি, তারা যে অভিযোগপত্রটি পেয়েছেন তাতে অভিযোগকারীর কোনো স্বাক্ষর ছিল না। তাই অভিযোগটি তারই কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে অভিযোগকারী ওই ছাত্রী মঙ্গলবার পরিবর্তন ডটকমকে জানান, তিনি সশরীরে গিয়ে স্বাক্ষরসহই অভিযোগপত্র দিয়েছেন। উপাচার্যের কার্যালয় সেটি গ্রহণ করে তাকে অভিযোগপত্রের একটি রিসিভ কপিও ফেরত দিয়েছে।
সেল থেকে পাঠানো মেইলে বলা হয়েছে তিনি অভিযোগ দিয়েছেন ১৮ তারিখে। কিন্তু তিনি মূল অভিযোগটি দিয়েছেন ১৭ তারিখে। ১৮ তারিখে সেটির অনুলিপি পাঠিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়ে।
প্রমাণস্বরূপ তিনি পরিবর্তন ডটকমকে অভিযোগপত্রের রিসিভ কপিটি সরবরাহ করেছেন। পরিবর্তনের হাতে থাকা অভিযোগপত্রটিতে অভিযোগকারীর স্বাক্ষর রয়েছে।
এ ব্যাপারে ফের অধ্যাপক রাশেদা আখতারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘আমাদের সেলে তো কোনো অভিযোগ দেয় নাই। ভিসি আমাদেরকে যে কপি দিয়েছেন সেখানে তো স্বাক্ষর ছাড়াই দেখলাম। উনারটাই তো আমরা নিয়েছি। ম্যাডাম আমাদেরকে যে কপি দিয়েছেন সেখানে তো স্বাক্ষর নেই।’
উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামও অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর ছিল না বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, ‘উনারা আমাকে বলেছেন, দেখিয়েছেনও যে, স্বাক্ষর ছিল না। কমিটি তো আর স্বাক্ষর মুছে ফেলবেনা।’
এ ব্যাপারে অভিযোগকারী ছাত্রী বলেন, ‘এটা তো তাহলে স্পষ্ট যে একটা কিছু সমস্যা আছে। বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘসূত্রিতা বা গড়িমসির দিকে যাচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষকের সাথে কথা বললে তারা জানান, যৌন নিপীড়ন সেলে অভিযোগটি না পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত ছিল এ ব্যাপারে স্ট্রাকচারাল কমিটি গঠন করে তদন্ত করা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, অভিযোগকারী তো যৌন হয়রানির কোনো অভিযোগই করেনি। সে তো অভিযোগ করেছে প্রতারণার, নৈতিক স্খলনের। সুতরাং এটা যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে যায় কিভাবে।
এখানে যেহেতু প্রতারণা এবং নৈতিকস্খলনের সুস্পষ্ট অভিযোগ আছে সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রথমে একটা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করতে হবে। তারপর স্ট্রাকচারাল কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সেই অধ্যাপক আরও বলেন, এখন সেল যদি সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট ধরে হাবিজাবি একটা কিছু করে তাহলে সেটা কোর্টে গিয়ে টিকবে না। যদি সঠিক কিছু করতে চায় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়কে ভিন্ন পথে আগাতে হবে।
এ ব্যাপারে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘পারিবারিক দ্বন্দ্ব, তারা তো বিয়ে করেছেন তারপর বিয়ে ভেঙে গেছে। মানুষের তো এমন হয়। সুতরাং পারিবারিক আদালতে যেতে পারে।’
এর আগে স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করলে উপাচার্য বলেন, ‘আমরা তো তখন ব্যবস্থা নিয়ে সেটা স্টাবলিশ করতে পারলাম না। কোর্ট বাতিল করে দিয়েছে। আমরা ব্যবস্থা নিয়ে ফেল করলাম, তো আমাদের শিক্ষা হল না! সেখান থেকে তো বুঝলাম এটা আমাদের এখতিয়ারের বাইরে চলে যায়। এজন্য আমাদের সাবধানে এগুতে হবে।’
নৈতিক স্খলনের দায়ে অভিযুক্ত অধ্যাপকের শাস্তি দাবি করে ওই ছাত্রী পরিবর্তন ডটকমকে আরও বলেন, ‘তার সাথে সমঝোতার আর কোনো সম্ভাবনা নাই। গত একটা বছর আমাকে যেভাবে পার করতে হয়েছে, আমার একটা বাচ্চা হয়েছে চার মাস বয়স তার, প্রেগন্যান্ট অবস্থায় যে অত্যাচার-নির্যাতন আমার উপর করা হয়েছে তা কোনো মানবিক আচরণের মধ্যে পড়ে না।’
‘আমি যে বেঁচে আছি কতটা কষ্ট করে, কতটা যুদ্ধ করে শুধুমাত্র এই লোকটার প্রতারণার কারণে। আমার জীবনটা তো এমন হওয়ার কথা ছিল না।’
‘সে যে অপরাধ করেছে তার আইনসঙ্গত শাস্তি পেতে হবে তাকে। এ ব্যাপারে আমি কোনো ফেভার চাই না। যদি সত্যটা সামনে আসে, যদি সত্যটা বিবেচনা করা হয় তাহলে সে শাস্তি পাবেই।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন