ডেস্ক রিপোর্ট
শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নিপীড়নসহ তিন দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক জাকির হোসেন এর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নারী ও পুরুষ কর্মীরা একজোগে শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণ করে। প্রথমে ছাত্রলীগে কর্মীরা ইট-পাথর মেরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আহত করে ও সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এরপর তারা লাঠিসোটা নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। এসময় ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হন বেশ কয়েকজন আন্দোলনরত নারী শিক্ষার্থি। ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং গায়ের পোশাক ছিড়ে ফেলে। লাঠিসোটার উপর্যুপরি আঘাতে গুরুতরভাবে আহত হন ২০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী।
ভিসিকে উদ্ধারে ছাত্রলীগের তাণ্ডব
ছাত্রী নিপীড়নে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের বহিষ্কারের দাবিসহ চার দফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানকে ‘উদ্ধার’ করেছেন ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৪০ জন আহত হন।
আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারে শিক্ষার্থীরা অপরাজেয় বাংলার সামনে জড়ো হয়ে মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি টিএসসি, কলাভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ঘুরে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে আসে। তাঁদের আসার খবর পেয়ে আগে থেকে উপাচার্যের কার্যালয়ের প্রবেশপথগুলোতে তালা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক কার্যালয়ের একাধিক ফটক ভেঙে বেলা দেড়টা থেকে উপাচার্যের কার্যালয়ের দরজার সামনের করিডরে অবস্থান নেন। বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত উপাচার্য তাঁর কক্ষেই আটকা থাকেন। বেলা সাড়ে তিনটায় এক অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা থাকলে উপাচার্য পেছনের ফটক দিয়ে বের হন। কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে ঘিরে আটকে রাখেন।
এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে সংগঠনের ২০-২৫ জনের একটি দল উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে যান। তাঁরা উপাচার্যকে কক্ষে পাঠিয়ে আন্দোলনকারীদের করিডর থেকে সরিয়ে দেন। এরই মধ্যে ছাত্রলীগের কয়েক শ কর্মী এসে জড়ো হন। এরপর তাঁরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান। শিক্ষার্থীরা বের হওয়ার সময় বিভিন্ন ফটকের সামনে থাকা ছাত্রলীগের কর্মীরা দফায় দফায় রড, লাঠি, ইটপাটকেল, লাথি, কিল, ঘুষি মেরে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন।
ছাত্রলীগের এই হামলায় অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে অন্তত ১৫ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আহতদের মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা, ডাকসুর দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক মাসুদ আল মাহদী রয়েছেন।
ছাত্রলীগের মারধরে একাধিক সাংবাদিকও আহত হয়েছেন। ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্টের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মীর আরশাদুল হকের মাথা ফেটে গেছে।
আন্দোলনকারীরা যখন বের হচ্ছিল তখন দফায় দফায় তাদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের কর্মীরা। ছবি: সাজিদ হোসেন
আন্দোলনকারীরা যখন বের হচ্ছিলেন, তখন দফায় দফায় তাঁদের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগের কর্মীরা। ছবি: সাজিদ হোসেন
হামলা শেষে মধুর ক্যানটিনে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে ও মীমাংসা করতে সেখানে গিয়েছিল। উপাচার্যের সম্মান রক্ষার্থে ছাত্রলীগ তাঁদের সরিয়ে দিয়েছে।’
রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১৫ জানুয়ারি উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে ছাত্রলীগ নেতারা ছাত্রদের হুমকি-ধমকি ও ছাত্রীদের ওপর নিপীড়ন করে আন্দোলন নস্যাৎ করে দেন। এর প্রতিবাদে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা ১৭ জানুয়ারি প্রক্টর কার্যালয়ের ফটক ভেঙে প্রক্টরকে অবরুদ্ধ করেন। পরদিন অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনকে আসামি করে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর থেকে টানা আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ছাত্র প্রতিনিধিসহ ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনার তদন্ত করা, অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাদের বহিষ্কার করা ও প্রশাসনের করা মামলা তুলে নেওয়া।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন