ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তি ফি বাড়িয়েছে প্রশাসন। প্রতিটি বিভাগে ভর্তি ফি প্রায় তিন গুণ বাড়ানো হয়েছে।
বর্ধিত হারে ভর্তি ফি নিতে ২৩ থেকে ৩৭টি নতুন খাতও সৃষ্টি করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে বিষয়টি এখনো সিন্ডিকেট বা একাডেমিক কাউন্সিলে পাস হয়নি বলে জানা গেছে। কোন কোন খাতে এসব ফি বাড়ানো হয়েছে, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক এখনো জানেন না।
এদিকে ভর্তি ফিসহ সব খাতে ফি বাড়ানোর কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এরই মধ্যে ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে মানববন্ধন, শোভাযাত্রা, স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন উপায়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে শাখা ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট। এ ছাড়া বর্ধিত ফি কমানোর দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এমন সিদ্ধান্তকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীর গলায় ছুরি ধরে টাকা আদায় বলে আখ্যা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ধর্মতত্ত্ব, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং আইন ও শরিয়াহ অনুষদভুক্ত ১৬টি বিভাগে ভর্তি ফি ১১ হাজার ৮১৫ টাকা। গত বছর ওই সব বিভাগে ভর্তি খরচ ছিল তিন হাজার ৮২৯ টাকা।
একই ভাবে বাড়ানো হয়েছে ফলিতবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ এবং ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোতে। বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোতে গত বছর ভর্তি ফি ছিল পাঁচ হাজার ২৩৭ টাকা। এ বছর তা করা হয়েছে ১৩ হাজার ৩১৫ টাকা। ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোতে চার হাজার ৮৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার ৪১৫ টাকা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর জন্য ভর্তি ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। মানবিক ও সমাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ধর্মতত্ত্ব অনুষদ এবং আইন ও শরিয়াহ অনুষদভুক্ত ১৬টি বিভাগে মোট আসনসংখ্যা এক হাজার ২৭৫টি। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ভর্তি ফি ১১ হাজার ৮১৫ টাকা করে আয় হবে এক কোটি ৫০ লাখ ৬৪ হাজার ১২৫ টাকা। ফলিতবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদভুক্ত ১১টি বিভাগে ৫৫০টি আসনের বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় ৭৩ লাখ ১৩ হাজার ২৫০ টাকা। এ ছাড়া ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত ছয়টি বিভাগে ৪৫০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আয় হবে ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার ৭৫০ টাকা। সে হিসেবে এ বছর ভর্তি পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আয় দুই কোটি ৭৯ লাখ ৭৪ হাজার ১২৫ টাকা।
এ ক্ষেত্রে শুধু টাকার অঙ্কই বাড়ায়নি প্রশাসন, টাকা আদায়ের খাতও বাড়ানো হয়েছে। এ বছর প্রক্টরিয়াল সার্ভিস ফি বাবদ ১০০ টাকা, ইন্টারনেট ফি ২০০ টাকা, ইন্টারনেট রক্ষণাবেক্ষণ ফি ১০০ টাকা, কাউন্সিলিং ফি ১০০ টাকা, জাতীয় দিবসগুলো পালন ফি ১০০ টাকা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদ্যাপন ফি ১০০ টাকা, ওরিয়েন্টেশন ফি ১০০ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া হল উন্নয়ন ফি, বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন ফি, শিক্ষা উন্নয়ন ফি, বৈদ্যুতিক ফির মতো আরো ১৪টি নতুন খাত তৈরি করেছে প্রশাসন। যার বেশির ভাগই অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
নতুন খাত সৃষ্টির পাশাপাশি অন্য খাতগুলোতেও টাকা বাড়ানো হয়েছে। পরিবহন ফি বছরপ্রতি ৭৭০ টাকার পরিবর্তে এক হাজার ২০০ টাকা করা হয়েছে। নতুন করে পরিবহন অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এক হাজার টাকা করেছে কর্তৃপক্ষ। বিভাগ উন্নয়নের ফি বাড়িয়ে তিন হাজার এবং হল ফি বাড়িয়ে ৯১৫ টাকা করা হয়েছে। শিক্ষাদান ফি ১৯২ টাকার পরিবর্তে এক হাজার ২০০ টাকা, পুনর্ভর্তি ফি ১০০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা করা হয়েছে।
এদিকে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক মনে করছেন শিক্ষকরা। জানা যায়, তিন মাস আগে ভর্তি ফি উন্নয়ন কমিটি করে প্রশাসন। কমিটির সুপারিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটির সভায় পাস করা হয়। পরে সিন্ডিকেট সভার অনুমোদন সাপেক্ষে তা বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অথচ সিন্ডিকেট সভার অনুমোদনের আগেই মঙ্গলবার বর্ধিত অঙ্কে টাকা নিয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেছে বিভাগগুলো।
এ বিষয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক আলতাফ হোসেন রাসেল বলেন, হঠাৎ ফি বৃদ্ধি অযৌক্তিক। এটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর জন্য সান্ধ্যকালীন কোর্স, ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন খাত আছে।
প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে ফলিতবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদভুক্ত ‘ডি’ ইউনিটে ৯২তম এবং ‘ই’ ইউনিটে ৮৪তম মেধাস্থান অধীকারী ফিরোজ মোল্লা বলেন, 'মা সুতার কাজ করে আমার লেখাপড়ার খরচ চালান। ধার করে টাকা নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। এখন ভর্তি হতে নাকি ১৪-১৫ হাজার টাকা লাগবে। এত টাকা পাব কোথায়?'
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন, 'ভর্তি ফি উন্নয়ন কমিটির সুপারিশে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভর্তি ফি বাড়ানো হয়েছে। এখনো আমাদের ভর্তি ফি সহনীয় পর্যায়ে আছে। আমরা মনে করি, এটি অত্যন্ত ন্যায়সংগত ও যৌক্তিক। '
ভর্তি ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে মানববন্ধন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভর্তি ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন থেকে বর্ধিত ভর্তি ফি কমাতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে তারা। নির্ধারিত সময়ে ফি না কমালে অবস্থান ধর্মঘটসহ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয় তারা।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন জি কে সাদিক, আরিফুজ্জামান, শামিমুল ইসলাম সুমন, আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন