মধুখালীতে দুই মুসলমান হত্যার রহস্য উন্মোচিত হয়নি। ৭ দিন পর ঘটনাস্থলে এলেন স্থানীয় এমপি। এতে মধুখালিবাসী খুবই হতাশা প্রকাশ করছেন। নিহতদের পরিবারসহ স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, কাকে আমরা ভোট দিয়ে এমপি বানালাম। দুই মুসলমান ছেলে কোরআনের হাফেজ দুই সহোদর নির্মাণ শ্রমিক খুন হলো আজ ৭ দিন। এ ঘটনায় আমাদের এমপি আব্দুর রহমান সাহেব এখনও আমাদের খোঁজ নিলেন না। শেষ পর্যন্ত এমপি সাহেব গতকাল বুধবার নিহতদের বাড়ি এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেন। তার সঙ্গে ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান তালুকদার এবং পুলিশ সুপার মোহম্মদ মোর্শেদ আলম। এতেও এলাকাবাসী সন্তুষ্ট নয়।
মধুখালি ডুমাইন পঞ্চপল্লীতে দুই (কোরআনের হাফেজ) সহোদর আশরাফুল ও আরশাদুল হত্যার রহস্য এখনও উন্মোচিত হয়নি। দিন যতোই পেরিয়ে যাচ্ছে ততোই ঘটনার অন্তরাল থেকে বহু তথ্য উপাত্ত এবং ঘটনার পিছনে লুকিয়ে থাকা বহু কিছু বেরিয়ে পড়ছে।
দুই সন্তান হত্যা মামলার বাদী মো. শাহজাহান খান মধুখালি থানায় যে মামলাটি করছেন সেই মামলায় মোট কতজন আসামি আটক হয়েছে? এ বিষয় জানতে চাইলে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইমদাদ হুসাইন (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) ইনকিলাবকে বলেন, সোমবার পর্যন্ত ৮ জন বাদেও আরো আসামি আটক হয়েছে। এর মধ্যে ঘটনার সাথে জড়িত এমন ও এক-দুইজন আছে। তবে তদন্তের স্বার্থে আর বলা যাচ্ছে না।
অপরদিকে, গত মঙ্গলবার রাত ৯টায় ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসপি মোহম্মদ মোর্শেদ আলম গনমাধ্যমকে জানান, ডুমাইন পঞ্চপল্লীর দুই সহোদর শ্রমিক হত্যার ঘটনায় পুলিশ ৮ জন আসামি আটক করছেন। আরো আটকের চেষ্টা চলছে। এই বিষয় ইনকিলাবের সাথে কথা হয় মধুখালি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মিরাজ হোসেনের সাথে। তিনি ইনকিলাবকে জানান, এই মামলায় এ পর্যন্ত মোট ১২ জন আসামি আটক করা হয়েছে। প্রশ্ন করা হলো হত্যার ঘটনার জড়িত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে এরকম কাউকে আটক করতে পারছেন কিনা?
তিনি ইনকিলাবকে বলেন, অবশ্যই ২৩ এপ্রিল ২ জন আসামি আটক করা হয়েছে তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছে এবং তারা কোর্টে ১৬৪ ধরায় জবানবন্দি দিয়ে দায় স্বীকার করছে। আসামিরা জেলহাজতে আছে।
অপরদিকে এই মামলার বাদী মো. শাহজাহান খান ইনকিলাবকে জানান, আমি আজ ৩/৪ দিন ধরে থানায় যাই এবং মামলার কপি চাই। ওসি সাহেব আমাকে মামলার কপি দেয় না খালি ঘুরায়।
তিনি আরো বলেন, আমি জানতে চাইলাম আমার ছেলেদের খুনিরা আটক হইছে কিনা? কয়জন আটক হইছে আমারে আপনারা একটু বলেন না। এতে তিনি থানা পুলিশের ওপর খুবই নাখোশ হয়েছেন বলেন জানান।
নিহতদের আপন চাচা মো. শাহজাহান খান ইনকিলাবকে বলেন, খুনিদের বিচার চাইতে মিছিলে গেছিলো আমার বাড়ির পাশের গ্রাম চরশ্রীরামকান্দীর বহুলোক, গতকাল রাতে বাড়ি থেকে ৫ জনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তাদের গায়ে পুলিশের ছোঁড়া গুলিও লাগছে। ওরা সবাই কম বেশি আহত। আমি মন্ত্রী এবং ডিআইজিকেও বলছি। এই হলো আমাদের পুলিশ!
আমার দুই ভাতিজাকে পিটিয়ে খুঁচিয়ে, লোহার রড, বাঁশ, বাটাম এবং ইট দিয়ে থেঁতলে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীরা সবাই হিন্দুদের উগ্রবাদী সন্তান। যারা হত্যা করছে তাদের ভিডিও ফুটেজে সরাসরি দেখা যাচ্ছে তাদের পুলিশ খুঁজে পায় না।
কিন্তু সঠিক বিচার এবং খুনিদের আটকের দাবিতে যারা রাজপথে আন্দোলন করছেন তাদের পুলিশ গুলি ছুঁড়ে টিয়ারগ্যাস মেরে রক্তাক্ত জখম করছে, বহুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এই লোকগুলো হাসপাতালে বাসা বাড়িতে গোপনে চিকিৎসাও নিতে পারতেছে না। পুলিশ খুব সচেতন উল্টো পথে হাঁটছে।
অপরদিকে, ডুমাইন পঞ্চপল্লী এলাকায় দুই সহোদর শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার বিগত ৭ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান গতকাল বুধবার বিকেল ৬টায় নিহত আশরাফুল ও আরশাদুলের চোপড়ঘাটের বাড়িতে গিয়ে নিহতদের খোঁজ খবর নেন।
এসময় স্থানীয়রা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। মন্ত্রী সকলকে খুনিদের আটকপূর্বক সর্বোচ্চ বিচারের আশ্বস্ত করলে সবাই শান্ত হন। এসময় মন্ত্রীকে নিহতের স্বজনরা বলেন, পুলিশ তাদের নানানভাবে হয়রানি করছেন।
পুলিশ হয়রানি করবে না বলে মন্ত্রী তাদের কথা দেন। এসময় মন্ত্রী সকলের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সকলে মিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করুন পরিবেশ ভাল রাখুন কেউ রাজপথে হট্টগোল করবেন না। আপনারা সর্বোচ্চ বিচার পাবেন। এরপর আব্দুর রহমান নিহতের পরিবারকে নগদ ২ লাখ টাকা অনুদান দিয়ে নিহতদের পিটিয়ে ও অমানবিক নির্যাতন করে হত্যার ঘটনাস্থল পঞ্চপল্লী এলাকায় পরিদর্শনে চলে যান।
এ সময় তার সাথে ছিলেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম। তিনিও নিহতের পরিবারকে আশ্বস্ত করেন হিন্দু মুসলমান যেই হোক, খুনিদের কোনো ছাড় নেই। অপরাধীদের দ্রুত আটক করে আইনের আওতায় এনে কঠোর বিচার নিশ্চিত করা হবে বলে তিনি সকলকে কথা দেন।
উল্লেখ্য, এই ঘটনায় মধুখালি থানায় মোট তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন