চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার আশ্রমের চেয়ারম্যানকে বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।
রাতে মিন্টু রোডে গোয়েন্দা কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, মিল্টনকে সুর্নিদিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে আমাদের হেফাজতে আছেন। মানবপাচার, অবৈধভাবে মরদেহ দাফন, টর্চার সেল, আয়ের উৎসের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। তার বাড়ি বরিশালের উজিরপুরে। বাবাকে পেটানোর কারণে এলাকাবাসী তাকে এলাকাছাড়া করে। মিঠু হালদার নামে এক নার্সকে বিয়ে করেন মিল্টন। এরপর স্ত্রীকে দিয়ে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার নামের আশ্রম স্থাপন করেন। গণমাধ্যমে এসেছে তার একটি অপারেশন থিয়েটারের তথ্য, যেটার কোনো লাইসেন্স নেই।
তার বিরুদ্ধে রাতে মরদেহ দাফনের অভিযোগ রয়েছে। তিনি ইতোমধ্যে ৯০০ মরদেহ দাফন করেছেন বলে মিডিয়ায় এসেছে। এর মধ্যে ৮৩৫টি মরদেহের কোনো ডকুমেন্ট তিনি দেখাতে পারেননি।
মিল্টন সমাদ্দার রাস্তা থেকে অসুস্থ কিংবা ভবঘুরেদের কুড়িয়ে তার আশ্রমে আশ্রয় দেন। সেসব নারী, পুরুষ ও শিশুকে নিয়ে ভিডিও তৈরি করে প্রায়ই তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা যায়। মানুষের অসহায়ত্ব তুলে ধরে তাদের জন্য বিত্তবানদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন।
ডিবি প্রধান বলেন, মানবিকতার আড়ালে ভয়াবহ প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন মিল্টন। প্রকৃতপক্ষে তিনি যে কয়জনকে লালন-পালন করছেন, প্রচার করছেন তার চেয়ে কয়েক গুণ। মরদেহ দাফন করার যে হিসাব দিচ্ছেন, তাতেও আছে বিরাট গরমিল। সবচেয়ে ভয়ংকর, মিল্টনের বিরুদ্ধে রয়েছে অসহায় মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার নামে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে মানবসেবার অন্তরালে যে নির্মম ও বর্বরোচিত চিত্র ফুটে উঠেছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ। মানবসেবা পরম ধর্ম কিন্তু মানব সেবার নামে মুখোশের আড়ালে রাস্তা থেকে অসুস্থ, অসহায় ও নিরীহ মানুষকে তুলে এনে চিকিৎসার নামে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির যে অভিযোগ মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে উঠেছে তা অত্যন্ত ভীতিকর, ন্যাক্কারজনক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
গুরুতর অসুস্থদের হাসপাতালে না নিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানে আটকে রাখা, ভুয়া ডাক্তারের মাধ্যমে মৃত্যুসনদ তৈরি বা মৃতদেহের শরীরে কাটাছেঁড়ার তথ্য প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে মরদেহ নিয়ে অসঙ্গতি এবং জাল মৃত্যু সনদের অভিযোগটি গুরুতর মনে হয়েছে।
ডিবি কার্যালয়ে বেশ কয়েকজন অভিযোগকারী অবস্থান করছেন। তারা মামলা করবেন বলেও জানান ডিবিপ্রধান। তবে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে মিল্টন ফেসবুকে ভিডিও চিত্র দিয়ে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।আস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন