পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে জ্বালানি লোডের জন্য কোর ব্যারেল স্থাপন করা হয়েছে। যার মধ্যে বসানো হবে পারমাণবিক জ্বালানি-ইউরেনিয়াম। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিশেষ ধরনের স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি কোর ব্যারেলটি রিয়্যাক্টরের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটির ওজন ৭৩.৭৪ টন, দৈর্ঘ্য ৩৫.৬৬ ফুট এবং ব্যাস ১১.৮৪ ফুট। রিয়্যাক্টরের অভ্যন্তরে যে সকল গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি থাকে তার মধ্যে কোর ব্যারেল অন্যতম একটি। এর ভেতরে স্থাপিত হয় জ্বালানি অ্যাসেম্বলি এবং ব্যাফেল। ফুয়েল অ্যাসেম্বলিতেই সংগঠিত হয় পারমাণবিক বিক্রিয়া। কোর ব্যারেলের নিচের অংশে অনেকগুলো ছিদ্র থাকে, যাতে কুল্যান্ট বা শীতলীকারী পদার্থ (বিশেষভাবে মিনারেলমুক্ত পানি), এর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে জ্বালানি রডের বহিরাবরণকে শীতল রাখতে পারে। কোর ব্যারেলটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে কুল্যান্টের প্রবেশ ও বহিঃগমন আলাদা থাকে। এটি রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেলকে নিউট্রন এবং গামা রেডিয়েশন থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে।
রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরমাণু শক্তি কমিশন বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের জেনারেল ডিজাইনার ও কন্ট্রাক্টর রাশিয়ার রসাটম করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা।
গত ৫ মে রাশিয়ায় এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রথম ব্যাচের পারমাণবিক জ্বালানি (ইউরেনিয়াম) উৎপাদন প্রস্তুতি সনদসংক্রান্ত চুক্তি সই হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী অক্টোবরে দেশে জ্বালানি এসে পৌঁছানোর কথা থাকলেও তার আগেই এটি আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ইউরেনিয়াম আমদানি দেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় মাইলফলক। এই জ্বালানি আমদানি ও সংরক্ষণ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নিউক্লিয়ার ক্লাবে যুক্ত হবে। এই মর্যাদা পাওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের দরবারে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবেও পরিচিতি লাভ করবে। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে উৎপাদন শুরু করতে আর কোনো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জও থাকবে না। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নির্দেশনা মেনেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি আমদানি, পরিবহন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বিশেষ বিমানে জ্বালানি আমদানি করে তা বিদ্যুৎকেন্দ্রে পাঠানো হবে। এ জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ সম্পৃক্ত থাকবে আরও অনেক মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর। নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে গোয়েন্দা সংস্থারও তৎপরতা থাকবে।
বাংলাদেশের একক প্রকল্প হিসেবে সবচেয়ে বড় অবকাঠামো এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুটি ইউনিটে থাকছে ৩+ প্রজন্মের রুশ ভিভিইআর রিয়্যাক্টর, যেগুলো সব আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চাহিদা পূরণে সক্ষম। বাণিজ্যিকভাবে এই কেন্দ্রের আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ৬০ বছর। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বর্তমানে বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট থেকে ২০২৪ সালে এবং এর পরের বছর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট করে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড যোগ হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই প্রকল্পে রাশিয়া ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে এবং বাংলাদেশ সরকার দেবে ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার টাকা।
পাবনায় পদ্মা নদীর পাড়ে ঈশ্বরদীর রূপপুরে ২০১৭ সালের নভেম্বরে দেশের প্রথম এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মূল নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন