ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেছেন, জুলাইয়ে ইইউ থেকে বাংলাদেশে প্রাক-পর্যবেক্ষক মিশন আসবে। তারা সুপারিশ করলে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পূর্ণাঙ্গ দল পাঠাবে ইইউ। পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দলে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষক থাকবেন। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার জন্য দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে। তিনি মঙ্গলবার যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন।
ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউ সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করছে। কিছুদিন আগে আমাদের দুপক্ষের মধ্যে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে রাজনৈতিক, কৌশলগত, আঞ্চলিক, ইন্দো-প্যাসিফিক, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয়দের ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য বাংলাদেশ ক্রমেই আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হচ্ছে। আমরা অনেক নতুন নতুন ক্ষেত্রে কাজ করছি। অবকাঠামোসহ অনেক ক্ষেত্রে ঋণ এবং মঞ্জুরি সহায়তা দিচ্ছি। এছাড়া আগামী দিনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পরিবহণ প্রভৃতি ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করব।
চার্লস হোয়াইটলি বলেন, বাংলাদেশে চমৎকার প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। মহামারি থেকে দারুণভাবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করেছে। বিরাট মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি হয়েছে। এটা ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তবে বিদেশিদের ব্যবসায় কিছু বাধাও রয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে ইউরোপীয় চেম্বার অব কমার্স। বিশেষ করে পরিবেশ, সামাজিক কমপ্লায়েন্স, প্রভৃতিতে কাজ করতে হবে। এটা টুওয়ে জার্নি। বাংলাদেশ শুধু গার্মেন্টস রপ্তানিতে সীমিত থাকবে এমন নয়।
তিনি বলেন, আশা করি ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন দ্রুত বন্ধ হবে। সার্বভৌম দেশে আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে হামলা করেছে। দুই কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে ইউক্রেনে রুশ হামলার কারণে। আশা করি, মহামারি থেকে বাংলাদেশ যেভাবে পুনরুদ্ধার করেছে, একইভাবে এ ক্ষতি থেকেও পুনরুদ্ধার করতে পারবে।
ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, জিএসপি প্লাস সুবিধার জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশন ৩২ অনুসরণ করার প্রয়োজন রয়েছে। এই কনভেনশনে রাজনৈতিক, পরিবেশগত, সামাজিক, গণতান্ত্রিক পরিবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এসব ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে। এটা বাংলাদেশের জিএসপি প্লাস প্রাপ্তিতে সহায়ক। এ অঞ্চলে পাকিস্তান ও শ্রীলংকা জিএসপি প্লাস সুবিধা আগে থেকে পাচ্ছে। তবে কোনো গণতন্ত্রই পারফেক্ট নয়। মানবাধিকারও পারফেক্ট নয়। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক কনভেনশন ৩২ একটি কমপ্রিহেনসিভ কনভেনশন।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ যে জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে সেটা তেমন জটিল নয়। শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার শর্ত রয়েছে। এলডিসি হিসাবে এটা সহজে পায় বাংলাদেশ। জিএসপি প্লাস তার থেকে ভিন্ন।
২০২৬ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলে ২০২৯ সাল পর্যন্ত গ্রেস পিরিয়ড হিসাবে বর্তমান জিএসপি সুবিধা পাবে। ২০২৯ সালের পর থেকে জিএসপি প্লাস যুগে ঢুকবে বাংলাদেশ। জিএসপি প্লাস অনেকটা জিএসপির মতো সুবিধা হলেও যোগ্যতা অর্জন করতে শর্ত পূরণ করতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আমরা আগ্রহী। জুলাই মাসে এক্সপ্লোরারি মিশন আসবে। তারা সংখ্যায় কম। বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে গঠিত এ মিশন ঠিক করবে বাংলাদেশে পর্যেবক্ষক পাঠানো হবে কিনা।
তাদের আগমনের লক্ষ্য হলো কনফিডেন্স বির্ডিং মেজার্স। তারা সিদ্ধান্ত নেবেন বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠানো হবে কিনা। তারা নিরাপত্তা বাহিনী, নির্বাচন কমিশন, সুশীল সমাজ, মিডিয়া এসবের সঙ্গে কথা বলবেন। ইইউ উচ্চ প্রতিনিধি বাংলাদেশের নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিতে চান।
তিনি এটাও চান যে, বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলেই শুধু পর্যবেক্ষক দল পাঠাবেন। রাজনৈতিক দল দ্রুত তাদের সিদ্ধান্ত পালটাতে পারে। নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। তবে আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করব না, মধ্যস্থতাও করব না। আমরা সমৃদ্ধ, স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চাই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন