মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধসহ ১১ দফা দাবিতে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে এ ধর্মঘট শুরু হয়ে আজ শুক্রবার দ্বিতীয় দিন অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে নাটোরে দূরপাল্লার কোনো ধরনের যানবাহন ও যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ জনগণ।
যাত্রীরা জানান, কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বের হয়ে কোনো গাড়ি পাচ্ছেন না তাঁরা। সময়মতো অফিসে পৌঁছতে না পারলে সমস্যায় পড়বেন। বাস বন্ধ থাকায় বিকল্প ব্যবস্থায় গন্তব্যে যেতে হলে খরচ অনেক বেড়ে যায়। অন্যদিকে গাড়ি বন্ধ থাকায় বাসচালক ও চালকের সহকারীরাও পড়েছেন বিপদে। তাদের রোজগার বন্ধ থাকায় আর্থিক সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কামরুল ইসলাম নামের এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী জানান, দোকানের মালপত্র কিনতে ঢাকা যেতে হবে তাঁর। কিন্তু গাড়ি চলাচল না করায় বিকল্প উপায় না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি।
মমিনুল ইসলাম নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, 'দু-এক দিনের মধ্যে ঢাকা থেকে মালপত্র না আনলে সমস্যা বেড়ে যাবে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় আবার বিএনপির সমাবেশ, গাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে। মালপত্র আনতে না পারলে ব্যবসায় লোকসান হয়ে যাবে। '
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন এনজিওকর্মী জানান, বৃহস্পতিবার অফিস করার পর দুই দিনের ছুটি রয়েছে। অথচ পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বাড়ি যেতে পারছেন না তাঁরা।
বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ
এদিকে শনিবার (৩ ডিসেম্বর) রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ হবে। বিএনপির দাবি, গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতেই এই পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
নাটোরের সিংড়া উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব দাউদার মাহমুদ বলেন, '৩ ডিসেম্বর রাজশাহীর বিভাগীয় গণসমাবেশ ঠেকাতে সরকার ও সরকারের লোকজন এই পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। এতে কোনো লাভ নেই, মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছে। কোনো বাধাই তাদের আটকাতে পারবে না। সরকারের পতন সুনিশ্চিত। বর্তমান সরকার জনবান্ধব সরকার নয়, তারা বিএনপির গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে গিয়ে কোটি কোটি জনগণকে বিপদে ফেলেছে। '
নাটোর জেলা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হাসান ইমাম বলেন, 'বিএনপির সমাবেশের সঙ্গে আমাদের ধর্মঘটের কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপির নেতাকর্মীরা তো রাতে মাইক্রো নিয়ে যাচ্ছেই। তাতে কোনো প্রকার বাধা দেওয়া হয়নি। আমাদের স্বার্থের কারণে এই ধর্মঘট ডেকেছি। আমাদের ব্যবসার স্বার্থে, টিকে থাকার স্বার্থে এটা করেছি। রাজনীতির ছত্রচ্ছয়ায় আমরা এটি করিনি। '
উল্লেখ্য, গত ২৬ নভেম্বর রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ সংশোধনসহ হাইকোর্টের নির্দেশানুযায়ী মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে থ্রিহুইলার, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ, জ্বালানি তেল ও যন্ত্রাংশের মূল্য হ্রাসসহ ১১ দফা দাবিতে পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দেয় রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন