জাতিসংঘের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপে আবারও আলোচনা হয়েছে বাংলাদেশ নিয়ে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গত ১৯ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠক শেষে দেওয়া প্রতিবেদনে এই তথ্য রয়েছে।
সদ্যঃসমাপ্ত অধিবেশনে ওয়ার্কিং গ্রুপ ২১ দেশের ৬৯৬টি গুমের অভিযোগ পর্যালোচনা করেছে।
ওয়ার্কিং গ্রুপ গত ১৩ মে থেকে জরুরি ভিত্তিতে এল সালভাদর, পাকিস্তান, রাশিয়া ও উজবেকিস্তানের পাঠানো ৩০৪টি গুমের অভিযোগের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে।
এর বাইরে বাংলাদেশ, ভুটান, চীন, কলম্বিয়া, উত্তর কোরিয়া, ডোমিনিক প্রজাতন্ত্র, মিসর, এল সালভাদর, হন্ডুরাস, লেবানন, মেক্সিকো, ওমান, ফিলিস্তিন, সৌদি আরব, স্পেন, সিরিয়া, তুরস্ক, উগান্ডা ও ভেনিজুয়েলার ৩৯৭টি গুমের অভিযোগ পর্যালোচনা করেছে। নতুন ও পুরনো দুই ধরনের অভিযোগই তালিকায় আছে।
জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ জানায়, তারা তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে পাঠানো চিঠি, সাধারণ অভিযোগ এবং জরুরি আবেদনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করে দেখেছে। ওয়ার্কিং গ্রুপ নতুন কিছু অভিযোগ গ্রহণের পাশাপাশি ভবিষ্যতে গ্রুপের কর্মপরিকল্পনা এবং বিভিন্ন দেশে সফর নিয়ে আলোচনা করেছে। পাশাপাশি এর আগে বিভিন্ন দেশ সফর নিয়ে প্রতিবেদন, নতুন প্রযুক্তি ও গুম নিয়ে আসন্ন থিমেটিক সমীক্ষা প্রতিবেদন নিয়েও আলোচনা করা হয়। ওই প্রতিবেদনের জন্য ওয়ার্কিং গ্রুপ শিগগিরই বিভিন্ন অংশীদারের কাছে তথ্য-উপাত্ত চাইবে।
ওয়ার্কিং গ্রুপ গুম ও নির্বাচন নিয়ে আগামী দিনে একটি থিমেটিক সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরির বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের বিশেষজ্ঞরা গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজন, বেসরকারি সংস্থা, রাষ্ট্রের প্রতিনিধি ও অন্য অংশীদারদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। গুমবিষয়ক কমিটির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে ওয়ার্কিং গ্রুপ একটি যৌথ বৈঠক করেছে। সেখানে চলমান ও ভবিষ্যৎ বিভিন্ন প্রকল্প, গুমের সাময়িক উপাদান এবং এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে রাষ্ট্রগুলোর বাধ্যবাধকতার বিষয়ে যৌথভাবে একটি বিশদ প্রতিবেদন তৈরির ব্যাপারে আলোচনা হয়।
এবারের অধিবেশনে ওয়ার্কিং গ্রুপের নতুন সভাপতি র্যাপোর্টিয়ার নির্বাচিত হন গিনি-বিসাউর আওয়া বালদি। সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ইতালির গ্যাব্রিয়েলা সিত্রোনি। ওয়ার্কিং গ্রুপে আরো আছেন পোল্যান্ডের গ্র্যাজিয়ানা বারানোত্স্কা, আর্জেন্টিনার লুসিয়ানো হাজান এবং থাইল্যান্ডের আংখানা নিলাপাইজিত। আগামী বছরের ৬ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি চিলির সান্তিয়াগোতে গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী বৈঠক হবে।
বাংলাদেশে ৮১ গুমের অভিযোগ
ওয়ার্কিং গ্রুপ গত বছরের ২২ মে থেকে চলতি বছরের ১৩ মে পর্যন্ত তাদের কার্যক্রমের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন গত ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে উপস্থাপন করেছে। জাতিসংঘ কমিটির তালিকায় বাংলাদেশের ৮১টি গুমের অভিযোগ ছিল। সেখানে আটটি গুমের অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশের বাস্তবসম্মত তথ্য দেওয়ার কথা উল্লেখ করে একে স্বাগত জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি গুমের অভিযোগগুলোর বিষয়ে বাড়তি তথ্য দিতে বাংলাদেশকে প্রচেষ্টা জোরদারের আহ্বান জানানো হয়। বিশেষ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ভূমিকার ব্যাপারে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানানো হয়।
ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য লুসিয়ানো হাজান বলেন, গুমের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশে আসতে চায়। গত আগস্ট মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেত বাংলাদেশ সফর শেষে যে সুপারিশগুলো করেছেন সেগুলো বাংলাদেশের অনুসরণ করা উচিত। তিনি বলেন, গুমবিষয়ক জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশ সফরের অনুমতি চেয়ে সরকারকে অনুরোধ করেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন