একজন ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায় তিনি কি ভাষায় কথা বলেন, কিভাবে অন্যের সমালোচনা করেন তার ওপর। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা এবং নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাম্প্রতিক সময় যে ব্যক্তিগত বিষয়ে বিতর্ক করছেন তা কুৎসিত, অরুচিকর এবং সুস্থ মানুষের কাছে অগ্রহণযোগ্য। বিদায়ের আগে তাদের এ বিতর্ক সমাজের মধ্যে এক ধরনের বিস্ময় তৈরি করেছে। এরকম সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা দুজন ব্যক্তি কিভাবে কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি করতে পারে তা নিয়ে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারি। বিদায়ের আগে তারা নানা বিতর্কে পরস্পর পরস্পরকে আক্রমণ করছেন।
সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার মেয়াদ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন। সেই খোলামেলা আলাপ-আলোচনায় তিনি তার সতীর্থ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সরকারি টাকায় কিভাবে চিকিৎসা করেছেন তার বিবরণ দিয়েছেন। ৩০-৪০ লাখ টাকা তিনি চিকিৎসার জন্য ব্যয় করেছেন বলেও নুরুল হুদা অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও নুরুল হুদা অনেক বিষয়ে যে সমস্ত বক্তব্য দিয়েছেন, সাংবিধানিক পদে থাকা একজন ব্যক্তির জন্য এ ধরনের বক্তব্য বেমানান। সাধারণত সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তিদেরকে অনেক মার্জিত, ব্যক্তিত্ববান এবং কথাবার্তায় সংযত হতে হয়। দায়িত্বপূর্ণ এ ধরনের পদে থাকা ব্যক্তিদের সব বিষয়ে সব মন্তব্য করা ঠিক নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা কেবল বিতর্কিত নির্বাচনই করেননি, নানা রকম অনভিপ্রেত বিতর্কিত বক্তব্যও দিয়েছেন যাতে এ প্রতিষ্ঠানটির মান-মর্যাদা এবং সম্মানহানি হয়েছে।
কে এম নুরুল হুদা বিদায় নিবেন কিন্তু নির্বাচন কমিশন থাকবে। নতুন নির্বাচন কমিশন যখন আসবে তখন হুদা এবং মাহবুব তালুকদারের এই বক্তব্যগুলোর প্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রথমেই একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে। তাছাড়া এরকম একটি সাংবিধানিক পদে ৫ বছর থাকা একজন ব্যক্তি এরকম মন্তব্য কিভাবে করতে পারেন তা নিয়েও সাধারণ মানুষের মধ্যে জিজ্ঞাসা রয়েছে। এখান থেকেই বোঝা যায় যে, কে এম নুরুল হুদা আসলে নির্বাচন কমিশন হিসেবে কতটুকু যোগ্য ছিলেন। কারণ, একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের যে ধরনের ব্যক্তিত্ব এবং ভাবমূর্তি থাকা উচিত সেটা তিনি কতটা রক্ষা করতে পেরেছেন সেটা আয়নায় মুখ দেখলে তিনি নিজেই ভাল বলতে পারবেন।
অন্যদিকে, মাহবুব তালুকদার সম্পর্কে যত কম কথা বলা যায় ততই ভাল। তিনি নির্বাচন কমিশনার না হয়ে বরং বিএনপির নেতা হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দিলে ভাল হতো। পুরো ৫ বছরে তিনি বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন কমিশনের প্লাটফর্মের বাইরে যেয়ে নিজস্ব বক্তব্য দিয়েছেন। একজন নির্বাচন কমিশনার এভাবে কমিশনের বাইরে যেয়ে কিভাবে ব্যক্তিগত মতামত দিতে পারেন কিনা সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাছাড়া বিভিন্ন নির্বাচন সম্পর্কে তিনি নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন কিন্তু নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নতির জন্য তিনি কিছুই করেননি। নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কমুক্ত এবং অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করার চেয়ে তিনি ব্যক্তিগত ইমেজ বৃদ্ধির দিকে মনযোগী ছিলেন এবং তার এ সমস্ত কথাবার্তা শেষ পর্যন্ত পানসে এবং জাতির কাছে এক কৌতুকে পরিণত হয়েছে। তিনিও নুরুল হুদার বক্তব্যের পর দেরি করেননি। তিনিও পালটা আক্রমণ করেছেন। আর তাদের এ পাল্টাপাল্টি আক্রমণ বিদায় লগ্নে তাদের সম্পর্কে একটি খারাপ ইমেজ দিয়েছে জাতির কাছে। আর এ থেকেই বুঝা যায় যে, ৫ বছরের এই হুদা কমিশন কেমন ছিলো।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন