নানা ইস্যুতে আলোচনার জন্ম দেওয়া সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান পদ হারানোর পর থেকে অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে। মাঝে নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগে স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসানের থানায় সাধারণ ডায়েরি করা নিয়ে আরেক দফা তোপের মুখে পড়তে হয় তাকে। আত্মগোপনে থাকায় স্ত্রীর সাধারণ ডায়েরির তদন্ত করতে গিয়ে বিপাকে পড়ার কথা জানায় পুলিশ। কিন্তু এরমধ্যে হঠাৎ গত শনিবার দুপুরে দেখা মেলে মুরাদ হাসানের। জামালপুরের সরিষাবাড়িতে চাচা সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুর রহমান তালুকদারের জানাজায় অংশ নিয়ে সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যও দেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।
এতদিন পুলিশের দাবি ছিল, তদন্তে বেশ অগ্রগতি থাকলেও মুরাদ হাসান আত্মগোপনে থাকায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু তিনি ৪২দিন পর প্রকাশ্যে আসায় আত্মগোপনে থাকার বিষয়টি নিয়েও কথা বলার সুযোগ রইল না। তাই প্রশ্ন উঠেছে স্ত্রীর করা জিডি তদন্তে পুলিশ এখন কী করবে?
মুরাদের স্ত্রীর সাধারণ ডায়েরির তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজীব হাসান গত বৃহস্পতিবার ঢাকা টাইমসকে বলেছিলেন, 'বিবাদী (ডা. মুরাদ হাসান) ঘটনার দিন কী ধরনের হুমকি দিয়েছিলেন তা আমরা তদন্ত করছি। এ ব্যাপারে বাদীর স্টেটমেন্ট নেওয়া হয়েছে। তবে বিবাদী কোথায় আছেন তাকে খোঁজা হচ্ছে। তাকে (ডা. মুরাদ) না পাওয়ায় এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।'
এদিকে সোমবার মুরাদ হাসানকে প্রকাশ্য দেখার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জিডির বাদী যে ঠিকানা দিয়েছেন সেখানে গিয়ে আমরা বিবাদীকে পাইনি। ঘটনার দিন কী হয়েছিল জানতে আমরা তাকে (ডা. মুরাদ) খুঁজছিলাম। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। তার মানে এই না, তিনি (মুরাদ) কোথাও যেতে পারবেন না। আর উনি তো সংসদ সদস্য। আমরা আশা করছি, জিডির তদন্তের প্রয়োজনে তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আর যদি নিজেরা বসে সব ঠিকঠাক করে নেন, তাহলে আমাদের এখানে কিছু করার নেই। আমরা সেভাবেই আদালতে প্রতিবেদন দেব।
গত ৬ জানুয়ারি জাহানারা এহসান রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় তার স্বামী মুরাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে জিডি করেন। এর দুই দিন পর তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক রাজীব হাসান জিডি তদন্তের অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৯ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম মো. মামুনুর রশিদ জিডি তদন্তের অনুমতি দেন।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রাজীব হাসান বলেন, 'তার (মুরাদ) সঙ্গে আমরা কথা বলব, তিনি কোথায় আছেন তাও জানি না। যেহেতু ঠিকানা দেওয়া আছে ধানমন্ডি আর এখানে তো উনি নেই যে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করব। তাকে পেলে বিস্তারিত আরও বলতে পারব।'
প্রথমে '৯৯৯'-এ সহায়তা চেয়ে ফোন, এরপর...
গত ৬ জানুয়ারি জাতীয় জরুরি সহায়তা নম্বর ৯৯৯ এ মুরাদ হাসানের স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসান ফোন করে পুলিশি সহায়তা চান। এরপরই ধানমন্ডি থানা পুলিশের ১০ সদস্যের একটি দল ধানমন্ডিতে মুরাদের বাড়িতে ছুটে যান। এদিন সন্ধ্যায় স্বামীর বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় জিডি করেন জাহানারা এহসান।
জিডিতে ডা. জাহানারা জানান, ১৯ বছর আগে মুরাদের সঙ্গে তার বিয়ে হয় এবং তাদের সংসারে দুই সন্তান রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কারণে-অকারণে তাকে ও তার সন্তানদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছেন তার স্বামী। মুরাদ তাকে ও সন্তানদের গালিগালাজ এবং মারধরে উদ্যত হলে তিনি ৯৯৯ নাম্বারে কল দিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চান।
ধানমন্ডি থানা থেকে পুলিশ বাসায় পৌঁছালে ডা. মুরাদ হাসান বাসা থেকে বের হয়ে যান বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়।
জিডির একদিন পর (৮ জানুয়ারি) হুমকির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুরাদ হাসানের লাইসেন্স করা দুটি অস্ত্র এবং তার স্ত্রীর লাইসেন্স করা একটি অস্ত্র নিরাপত্তাজনিত কারণে জমা নেয় ধানমন্ডি থানা পুলিশ। যার মধ্যে একটি পিস্তল ও দুটি শর্টগান।
যত বিতর্কে ডা. মুরাদ
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে ফোনে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত ৭ ডিসেম্বর তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন মুরাদ হাসান। এরপর তাকে জামালপুর আওয়ামী লীগের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।
বিতর্কের মুখে মুরাদ গত ১০ ডিসেম্বর কানাডার উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করেন। তবে কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি তাকে দেশে প্রবেশ করতে দেয়নি। এরপর কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়ে ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় ফিরে আসেন সমালোচিত এই সংসদ সদস্য। এরপর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। হঠাৎ স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে আবারও আলোচনায় আসেন বিতর্কিত সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন