দেশে গতকাল সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ছয় হাজার ৬৭৬ জনের করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ২০.৮৮ শতাংশ। এক দিনের ব্যবধানে শনাক্ত বেড়েছে প্রায় ৩ শতাংশ। গত মাসের প্রথম দিকেও দেশে করোনা শনাক্তের হার ১ শতাংশের ঘরেই ছিল। ক্রমবর্ধমান হারে এই সংক্রমণ নিয়ে বড় বিপদের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। ফলে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ১৫৪। করোনায় যারা মারা গেছে, তাদের ৮০ শতাংশেরই টিকা দেওয়া ছিল না। তাদের ক্যান্সার, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বা পুরনো জটিল রোগ ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে যারা মারা গেছে, তারা কভিডের ওমিক্রন ধরনে সংক্রমিত হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে তথ্য নেই। কারণ কভিড সংক্রমিত হয়ে মারা যাওয়া সবার জিনোম সিকোয়েন্স করা হয় না। আর এটি সময়সাপেক্ষও।
জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জ (জিআইএসএআইডি) বলছে, বাংলাদেশে আরো ২২ জনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। এর ফলে দেশে ওমিক্রন ধরন শনাক্ত কভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৫।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে কভিড সংক্রমিতদের ৮০ শতাংশের মধ্যেই ডেল্টা ধরন রয়েছে। অন্যদিকে কভিডের ওমিক্রন ধরনের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে ঢাকায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ঢাকায় কভিড আক্রান্তদের ৬৯ শতাংশের মধ্যে ওমিক্রন ধরন রয়েছে। তিনি বলেন, এখন থেকে ৫০ বছর বয়সীরাও করোনার টিকার বুস্টার ডোজ পাবেন। প্রথমে বুস্টার ডোজের জন্য ন্যূনতম বয়স ছিল ৬০ বছর।
মন্ত্রী বলেন, ‘ডেল্টা এবং ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আমরা এ বিষয়ে কিছুটা হলেও চিন্তিত, আতঙ্কিত। গত ১৫ দিনে ১৮ শতাংশে চলে এসেছে শনাক্তের হার। যেভাবে বাড়ছে তাতে শনাক্তের হার ৩০ শতাংশ ছাড়াতে বেশি সময় লাগবে না।’
ঢাকায় ওমিক্রন ধরন শনাক্ত প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ঢাকায় যে নমুনা পরীক্ষা করেছি, জিনোম সিকোয়েন্স করেছি, তাতে দেখা গেছে ওমিক্রন (আক্রান্তের) এখন ৬৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যেটা আগে ১৩ শতাংশ ছিল। আমরা গত ১০ দিনের মধ্যেই এই তথ্য পেয়েছি। আমরা মনে করি, ঢাকার বাইরেও একই হার হবে।’
এদিকে হাসপাতালগুলোতে কভিড রোগীর চাপ বাড়ছে বলেও সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এখন যেভাবে বাড়ছে, তাতে আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে হাসপাতালে কোনো জায়গা থাকবে না। তখন চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এ কারণে জনগণকে আহ্বান করছি, অনুরোধ করছি, তারা যেন স্বাস্থ্যবিধি মানেন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত রবিবার সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় র্যাপিড অ্যান্টিজেন ও আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে ৩১ হাজার ৯৮০টি নমুনা পরীক্ষায় ছয় হাজার ৬৭৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৭ জনের করোনা শনাক্ত হলো।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম গতকাল বিকেলে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়া অশুভ ইঙ্গিত। আমরা যদি নিজেদের সংবরণ না করি, এটাকে প্রতিহত করার চেষ্টা শক্তিশালী না করি, তবে পরে বিপদের বড় আশঙ্কা আছে।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে ভাবছে, ওমিক্রনে ভয়ের কারণ নেই। কারণ এখানে মৃত্যুর হার কম। আমাদের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং আইইডিসিআর জিনোম সিকোয়েন্স করছে। তারা বলছে, ডেল্টা ভেরিয়েন্টের সংক্রমণের হার বেশি। ওমিক্রন বাড়ছে, তবে সেটা ডেল্টার মতো না। ঢাকায় ওমিক্রনের হার বেশি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে ডেল্টার প্রাধান্য সব জায়গায় বেশি। অন্যান্য শহরে ওমিক্রন নেই। এখানে যেটা বাড়ছে সেটা ডেল্টা ভেরিয়েন্ট। এই ভেরিয়েন্টের পরিণতি আপনারা আগেই দেখেছেন।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, ডেডিকেটেড কভিড হাসপাতালগুলো বন্ধ হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারব। কিন্তু সক্ষমতারও একটা বিষয় আছে। আমাদের সক্ষমতা কতটুকু সেটাও চিন্তা করতে পারব। সক্ষমতার বাইরে রোগীর সংখ্যা চলে গেলে সামাল দেওয়া কঠিন হবে।’
ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকরা দেশে স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়টি তুলে ধরে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভূমিকা জানতে চান। জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, এ বিষয়ে তাঁদের সীমাবদ্ধতা আছে। জনগণ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সে জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে তাঁরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে আবারও অনুরোধ করবেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন