দেশে চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাকের তৈরি করা করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল করতে অনুমতি দেওয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে তা এখনো শুরু হয়নি।
গতকাল বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, এ ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ও কেনার ব্যাপারে আগামী সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। চীনা ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের এই বিলম্বের কারণে বাংলাদেশ করোনা ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে পিছিয়ে গেল বলে মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ডা. নজরুল ইসলাম।
একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাতকারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) চীনা ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের অনুমতি দিলেও ট্রায়াল পিছিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএমআরসি তো সব বিবেচনা করে বৈজ্ঞানিক দিকগুলো দেখে। তারপরে বাকি যে কাজটা হবে, সেটা তো পলিসি লেভেলে বা ক্ল্যারিক্যাল কাজকর্ম। যেহেতু ভ্যাকসিনটা বিদেশ থেকে আসবে, তাই ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একটা ইনভলভমেন্ট থাকে, যে ভ্যাকসিনটা এখানে ট্রায়াল দেওয়া হবে, অনুমোদনের জন্য। সেখান থেকে ফাইলটা বোধহয় সচিব মহোদয় (স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের) নিয়ে নিয়েছেন। উনি নাকি বলেছেন, যাচাই-বাছাই করবেন। এই হলো অবস্থা।’
আক্ষেপ করে এই চিকিৎসক বলেন, ‘ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে গেলাম। গত ২২ মে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য ১০টা ভ্যাকসিনকে অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের মর্ডানার ভ্যাকসিন ছিল এবং সিনোভ্যাকের এই ভ্যাকসিনটিও ছিল। তার মানে ডব্লিউএইচও এই ভ্যাকসিনটা সম্পর্কে জানে। তাহলে এটাতো ভালো ও ক্লাসিফাইড ভ্যাকসিন বলে বোঝা যায় ।’
ডা. নজরুল বলেন, ‘এখন এই ভ্যাকসিনটার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের জন্য আইসিডিডিআর’বিও প্রপোজাল তৈরি করে বিএমআরসিকে দিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এর জন্য বিএমআরসির অনুমোদন লাগে এবং বিএমআরসি সেই অনুমোদন দিয়েছে। এখন এটা শুরু করার আগে তো ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন লাগে, যেহেতু এটা বিদেশি ভ্যাকসিন। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া এটা আনা যাবে না। তো সেটার জন্যই ফাইলটা সেখানে গিয়েছিল। এখন এটা সচিব মহোদয়ের কাছে গেছে কি না, মানে এখন তিনিই এটা যাচাই-বাছাই করছেন।’
তিনি বলেন, ‘সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনটার ট্রায়াল ব্রাজিলে শুরু হয়েছে কিংবা হবে বলে শুনেছি। বাংলাদেশে ট্রায়ালের এই অবস্থা। এখন আমরা তো গরিব দেশ। দাতব্য সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমুনাইজেশন (গ্যাভি) যেটা আছে, তারা বিভিন্ন সংস্থা থেকে ডোনেশন পায়। তারা বিনা মূল্যে বা স্বল্প মূল্যে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করে অনুন্নত দেশগুলোকে সরবরাহ করে। আমাদেরকেও অনেক ভ্যাকসিন গ্যাভি দিয়ে থাকে। তাদের থেকেও আমরা ভ্যাকসিন পাব। এখানে বিষয়টা হচ্ছে, যারা কিনে নেবে, তারা তো আগে নেবে। পরে বাঁচলে তারপর গ্যাভি পাবে।’
বিএসএমএমইউ’র সাবেক এ উপাচার্য বলেন, ‘এখন আমাদের এখানে যদি আমরা প্রথম কাতারেই ভ্যাকসিন পেতাম, তাহলে প্রথমেই চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মী ও পুলিশসহ ফ্রন্টলাইনে যারা কাজ করছেন, তাদের দিতাম। তারপর আমরা শিক্ষার্থীদের দিতাম। তাহলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাটা চালু হয়ে যায়। তারপর দিতাম যারা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন তাদের। তাহলে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিও পুরোদমে চালু করা যেত। এর মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি পুনরায় চালু হত। সব মিলিয়ে আমরা অনেক সুবিধা পেতাম।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন