দেশে চামড়ার জগতে অন্যতম একটি মোকাম নওগাঁ। নওগাঁয় গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর কোরবানির পশুর চামড়ার দাম একেবারে নেই বললেই চলে। গ্রামাঞ্চল থেকে সরকারের বেধে দেয়া দামে চামড়া কিনে বিক্রি করকে এসে লোকশান গুনতে হচ্ছে মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের। আন্তর্জাতিক বাজার ও ভারতে চামড়ার দাম বেশি থাকলেও ট্যানারি মালিকদের দু’টি সংগঠন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া ও দীর্ঘদিন যাবত জেলা পর্যায়ের চামড়া ব্যবসায়ীদের বকেয়া টাকা পরিশোধ না করার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়।
চামড়া ব্যবসাযীরা জানান, এবারের ঈদে ৫ থেকে ৬কোটি টাকার চামড়া বেচা কেনার সম্ভাবনা থাকলেও ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে পাওনা টাকা না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা। আল্লাহর উপর ভরসা করে এবার নিজেদের টাকায় কম দামে চামড়া কিনছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে এবার গ্রাম কিংবা পাড়া মহল্লা থেকে চামড়া কেনার মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা চরমভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে বলে ধারণা করছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। তাদের ধারণা চামড়ায় ব্যবহৃত লবণের দামসহ মূলধনের পুরোটা তুলতে পারবে কি না সন্দেহ। এসব কারণে চামড়া শিল্পে প্রভাবটা খুব বেশি পড়ছে ফলে সাধারণ চামড়া ব্যবসায়ীরাও পড়েছে বিপদে।
কয়েকজন মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীর সাথে কথা হলে তারা বলেন, গ্রামাঞ্চল ও শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া কিনে এনে বিক্রির জন্য নওগাঁতে নিয়ে এসেছি। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবছর চামড়া বিক্রি করতে এসে চরম বিপাকে পড়েছি। এছাড়াও বিগত বছরের মত এবারে চামড়ার দাম সরকার ও ট্যানারি মালিকরা নির্ধারণ করে দেয়। সেই অনুযায়ী তারা বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রতি গরুর চামড়া ৩০ থেকে ৩৫০ হাজার টাকা করে কিনে এনে নওগাঁ শহরের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, ছাগল ও ভেড়ার চামড়া আমরা কিনেছি ১৫-২০টাকা দরে অথচ নওগাঁয় এসে তা কেউ নিতেই চাচ্ছে না। ফলে চামড়া বিক্রি করে তাদের লোকশানের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাদের অভিযোগ জেলার চামড়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করার কারণে তাদের এই লোকশান। এখানে দাম কম হওয়ায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বেশী দাম হওয়ায় চামড়া পাচার হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। চামড়ার এই অবস্থার কারণে সরকারের নজরদারির অভাবকেই দায়ী করছেন।
নওগাঁ জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রুপের সভাপতি মোমতাজ হোসেন বলেন, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বছরে একদিন বেশি দামে চামড়া কিনে বাজার অস্থিতিশীল করে। তারা সরকারের বেধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনে আমাদের ওপর জুলুম করে। তারা কোন প্রকার সিন্ডিকেট করে চামড়া কিনছেন না। খোলা বাজারে সরকারের বেধে দেয়া ২৮-৩২ টাকা বর্গফুট দামে চামড়া কিনছেন। এছাড়াও নওগাঁর ব্যবসায়ীরা চামড়া পাচার করে না। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা চামড়া পাচার করতে পারে বলে আশংকা করছেন এবং সরকার যেন তাদের প্রতি নজরদারী রাখে তার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
চলতি কোরবানির ঈদে নওগাঁয় ৫০হাজার গরু, ৩৫হাজার খাসি ও ১৫হাজার ভেড়ার চামড়া কেনা-বেচার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও করোনা এবং বন্যার কারণে কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা।
দেশের ঐতিহ্যবাসী এই চামড়া শিল্পকে টিকে রাখতে এবং চামড়া ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচানো এবং চামড়া পাচার বন্ধ করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান নওগাঁর সচেতন মহল।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন