সম্প্রতি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকায় জেলা ট্যাংক-লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন রিপনকে কুপিয়ে হত্যার ব্যাপারে জবানবন্দি দিয়েছেন ঘটনায় জড়িত সিএনজি অটোরিকশা চালক তারেক আহমদ (২১)। তার জবানবন্দিতে খুনের লোমহর্ষক প্রেক্ষাপট জানা যায়।
বুধবার (১৫ জুলাই) সিলেট মহানগর হাকিম সাইফুর রহমানের আদালতে জবানবন্দি দেন তারেক আহমদ। বাংলানিউজকে তারেকের জবানবন্দির দেওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন দক্ষিণ সুরমা থানার সদ্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন।
গত শুক্রবার (১০ জুলাই) রাত সোয়া ১০টার দিকে পূর্ব-বিরোধের জেরে দক্ষিণ সুরমার এলাকার বাবনা পয়েন্টে ইকবাল হোসেন রিপনকে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাতে জখম করে দুর্বৃত্তরা। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি দক্ষিণ সুরমার খোজারখলা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে।
জবানবন্দিতে ওই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে গ্রেফতার তারেক আহমদ বলেন, সেদিন সিএনজি থেকে নেমেই ‘খুনীরা’ রিপনকে কোপাতে থাকে। তার মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে পুনরায় তারা সিএনজিতে ওঠে। পরে তাদের দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকায় নামিয়ে দিয়ে আমিও সরে যাই।
তারেকের জবানবন্দির বরাত দিয়ে ওসি আখতার হোসেন বলেন, আদালতে খুনের ঘটনায় জড়িত আরো কয়েক জনের নাম বলেছেন তারেক। ঘটনার রাতে বরইকান্দি থেকে এজাজুর, রিমন, রিমু, শামীম নামের কয়েকজনকে সিএনজিতে করে বাবনা পয়েন্টে নিয়ে যান বলে জানিয়েছেন তিনি। সেখানে যাওয়ার পর তারা দ্রুত সিএনজি থেকে নেমে রিপনকে কোপাতে শুরু করেন। পরে আবার ওই একই সিএনজিতে উঠলে তাদের বরইকান্দি এলাকায় নিয়ে দেন তারেক।
জবানবন্দিতে তারেক আরও অনেক তথ্য দিলেও সে সব বিষয় জানাতে পারেননি ওসি। জবানবন্দি দেওয়ার পর তাকে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বলে জানান তিনি।
বাংলানিউজকে ওসি আরও জানান, গ্রেফতার অটোরিকশা চালক তারেক দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি ইউনিয়নের সুনামপুর গ্রামের বাসিন্দা। গতকাল মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যায় বরইকান্দি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
‘এ নিয়ে রিপন খুনের ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে হত্যাকাণ্ডের এজাহারে উল্লেখের সূত্রে নোমান ও জড়িত সন্দেহে সাদ্দাম নামে দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। ইতোমধ্যেই তাদেরকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছিল। পরে শুনানি শেষে তাদের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।’
এদিকে রিপন হত্যাকাণ্ডের পর ওই ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। সে সময় তারা দক্ষিণ সুরমা থানার ওসিসহ ৩৪ পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যাহার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট আহ্বান করেন। পরদিন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারা শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় থানার ওসি খায়রুল ফজলকে প্রত্যাহারের আশ্বাস দিলে ধর্মঘট তুলে নেওয়া হয়। এরপর গত ১৩ জুলাই ওসি খায়রুল ফজলকে দক্ষিণ সুরমা থানা থেকে নগর গোয়েন্দা পুলিশে বদলি করা হয়। তার স্থলাভিষিক্ত হন এসএমপির মোগলাবাজার থানার ওসি আখতার হোসেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন