মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে অবৈধ প্রবাসীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। ১ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশিদের জন্য নির্ধারিত ১৬-২০ এপ্রিল পর্যন্ত।
‘এই সাধারণ ক্ষমায় যেসব অবৈধ প্রবাসীরা কুয়েত ত্যাগ করবে তাদের বিমান টিকিটসহ যাবতীয় খরচ দেশটির সরকার বহন করবে। তারা নতুন ভিসা নিয়ে পুনরায় প্রবেশ করতে পারবে। বৈধপথে ভিসা নিয়ে আসা প্রবাসীরা কেন আজ অবৈধ? আর কত খেলা চলবে এই নিরীহ প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে?’
কথাগুলো বলছিলেন, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ভুলু। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবার-পরিজন ছেড়ে, লাখ লাখ টাকা খরচ করে, বিদেশে পাড়ি জমায় একটু সুখের আশায়। অথচ বৈধ ভিসায় আসার পরেও বিনা অপরাধে আকামাহীন ‘অপরাধী’ হয়ে কখনো জেল-হাজতে নির্যাতন- নিপীড়নের শিকার হতে হয়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে লাশ হয়েও দেশে ফিরতে হয়।’
‘একজন বৈধ ব্যক্তিতে অপরাধ না করা সত্ত্বেও কি করে তাকে অবৈধ বলা যায়। এটা কৃতদাস প্রথার চেয়েও জঘন্য একটা অপরাধ’। অবৈধ শ্রমিক কারা? যারা কফিল বা ব্যক্তি মালিকানাধীন অথবা কোম্পানি থেকে পলাতক? সামাজিক কিছু অপরাধের কারণে জেল জরিমানাসহ যাদের সাজা হয়েছে দুই বা তিনমাস? অথবা আকামাহীন রাস্তায় চেকে যারা ধরা পড়েছে তারা? তারা হয়তো হাতেগোনা সর্বমোট ৩০০-৫০০ জন হবে।
অবৈধ প্রবাসী হওয়ার পেছনে কারা দায়ী? একটু খেয়াল করলেই বোঝা যাবে। আমরা সকলেই পরিস্থিতির শিকার। অথচ একই কাজের জন্য আনা শ্রমিক আকামা না লাগিয়ে অবৈধ বলে ফেরত পাঠিয়ে আবার নতুন করে ভিসা বিক্রির মাধ্যমে শ্রমিক আনা হচ্ছে। এটা কোনধরনের মানবিকতার পরিচয়?
এর জন্য দায়ী মালিকপক্ষ এবং কিছু ভিসা ব্যবসায়ী। উভয় দেশের প্রশাসনের কিছু লোকজন এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও গাফিলতির কারণে এসব হচ্ছে। উভয় দেশের সরকারি প্রতিনিধিরা সকল ঘটনা জানা সত্ত্বেও আলোচনা সাপেক্ষে এর সমাধান না দিয়ে শুধু সাধারণ শ্রমিকদের বিনা অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করছে।
এ কমিউনিটি নেতা বলেন, সম্প্রতি একটি নিউজ দেখলাম। কুয়েত সরকার নাকি বাংলাদেশের সরকারকে চাপ প্রয়োগ করেছে, অবৈধ লোকজন না নিলে অন্যদের আকামা নবায়ন করা হবে না। জানি না কতটুকু সত্য। তবে বিদেশ নীতিতে এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করা যায় কিনা অথবা করাটা কতটুকু যুক্তি সঙ্গত তা আমার জানা নেই।
বাংলাদেশের বৈধ শ্রমিক আনার পরে কুয়েতের আকামা না লাগিয়ে অবৈধ বানিয়ে জেল জরিমানা করে দেশে ফেরত পাঠিয়ে আবার নতুন ভিসা বের করে শ্রমিক এনে পুনরায় সমস্যার সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এর সুষ্ঠু সমাধান চাই এবং উভয় দেশের সুনাম বজায় রেখে সম্পর্ক অটুট রাখতে চাই।
‘বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানায়, দয়া করে বিদেশিদের কাছে আমাদের ছোট করবেন না। ইরাক-কুয়েত যুদ্ধের সময় বাঙালি দেশে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। তাই বলে কি বাঙালি না খেয়ে মারা গেছে? কেউ সহযোগিতা করেনি তখন। প্রবাসীরা নিজেরাই তাদের জীবন-জীবিকার পথ বেছে নিয়েছে।
কুয়েতে মাত্র তিন লাখ প্রবাসী বসবাস করে। দেশে ফেরত গেলে না খেয়ে মারা যাবে না। সরকার বিদেশফেরত প্রবাসীদের বিনা সুদে ২৫-৫০ লাখ টাকা লোন দিয়ে প্রবাসের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশ ও জাতির জন্য সুফল বয়ে আনতে পারবে। অন্যদিকে সরকার প্রবাসীদের স্বার্থে উপজেলাভিত্তিক নানা শিল্প, কল-কারখানা গড়ে তুলতে পারে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন