টুটুল মিয়া (২০) ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে কোনোরকম দিনযাপন করছিলেন। বাড়িতে ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসা খরচও বহন করত এই আয় থেকে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিনের ন্যায় অটোরিকশা নিয়ে শেরপুর শহরের স্বল্প দূরত্বে চলাচল করা যাত্রীদের বহনের কাজ করতে থাকে। কিন্তু বিধিবাম শহরের অদূরে শেরুয়া নামক স্থানে বগুড়ার হাইওয়ে পুলিশের হাতে গাড়িটি আটক হয়। রিকশা খুইয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন টুটুল।
অনেক চেনাজানা লোক দিয়ে গাড়িটি ছাড়ানোর চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হন। শেষমেষ গাড়িটি ছাড়াতে না পেরে একেবারে অসহায় হয়ে পড়েন তিনি।
বিছানায় পড়ে থাকা ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটানোর কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে শেষ সম্বল এক টুকরো জমি বিক্রির জন্য অসুস্থ মাকে নিয়ে সোমবার সকালে এসেছে শেরপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে। বিক্রি করে শেষ সম্বল তার বসবাসের স্মৃতিচিহ্নটুকু।
হায়রে মানবতা! এই অসহায় যুবকের আয় রোজগারের পথ আটকে গেল পুলিশের থাবায়। মহাসড়কে শত শত অটোরিকশা চললেও পোড়া কপাল শুধু টুটুলের। তার অটোরিকশাটি আটক করে নন্দীগ্রামের কুন্দারহাট হাইওয়ে ফাঁড়িতে নিয়ে যায় পুলিশ। সেদিন থেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছে ভুক্তভোগী টুটুলের পরিবার।
এ ব্যাপারে অটোরিকশাচালক টুটুল মিয়া যুগান্তরকে বলেন, রিকশাটি ছাড়ানোর জন্য কুন্দারহাট হাইওয়ে ফাঁড়ির এসআই জাহেদ স্যারের সঙ্গে কথা বললে তিনি বগুড়া হাইওয়ে এসপির কাছে যেতে বলেন। কথামতো পরদিন বগুড়া এসপি অফিসে গেলে সেখানকার কনস্টেবলরা আমাকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়নি, উল্টো গালিগালাজ করে আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ এই অফিস থেকে অনেক অটোরিকশা ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এমন অভিযোগ করে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন টুটুল। বলেন, আমি গরিব মানুষ, প্রতিদিন বগুড়া যাতায়াতের টাকা কোথায় পাব? আমার উপার্জনের একমাত্র বাহন অটোরিকশাটি কবে পাবো তাও জানি না। তাই বাধ্য হয়ে মায়ের চিকিৎসার কাজে শেষ সম্বল সামান্য জমি বিক্রি করতে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এসেছি। এই টাকা দিয়ে যে কয়দিন পারি চিকিৎসা করব।
এ ব্যাপারে কুন্দারহাট হাইওয়ে ফাঁড়ির এসআই জাহেদুল ইসলাম বলেন, টুটুল নামের ওই ছেলের চায়না রিকশা আটক করা হয়েছে। এক থেকে দেড় মাস ফাঁড়িতে থাকবে। পরবর্তীতে হাইওয়ে এসপি স্যারের নির্দেশ মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন