সিলেটে ট্রাক চালক জাহাঙ্গীর মিয়া ও রাজু আহমদ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। চাকরি হারানোয় জাহাঙ্গীরকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে ঘাতক ইব্রাহিম (২৩) ও তার সহকারী ফজর মিয়া (২৪)।
হত্যার পর এটিকে ট্রাক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলো ঘাতকরা। এমনকি লাশ দুটির গুম করারও পরিকল্পনা ছিল। পরে পরিকল্পনা পরিবর্তন করে ট্রাকটি সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পারাইরচক এলাকায় সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগাড়ের পাশে রেখে পালিয়ে যায়। ঘটনাটি দুর্ঘটনা সাজাতে ট্রাকটি রাস্তার পাশে রেখে খুলে নেওয়া হয় ছয়টি চাকা।
এরপর হবিগঞ্জের জগদীশপুরে জয়নালের দোকানে নিয়ে চাকাগুলো বিক্রি করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাবাদে হত্যাকাণ্ডের এমন তথ্য দিয়েছে ঘাতকরা।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) ভোরে সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল থেকে ইব্রাহিমকে আটক করে মোগলাবাজার থানা পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যমতে আম্বরখানা থেকে আটক করা হয় সহযোগী ফজর আলীকে। আটক মো. ইব্রাহিম তালুকদার সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল এলাকার ফউজদার তালুকদারের ছেলে এবং ফজর মিয়া বিশ্বনাথের শ্বাসরাম এলাকার রুস্তুম আলীর ছেলে।
তাদের দেওয়া বর্ণনা মতে, পুলিশ ফজরের শ্বশুরবাড়ি থেকে নিহতদের লুন্ঠিত মোবাইল সেট ও ট্রাকের টায়ার বিক্রির পাঁচ হাজার টাকা জব্দ করে এবং গাড়ির টায়ার হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার জগদীশ পুরের জয়নাল মিয়ার দোকান থেকে জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় টায়ার ক্রেতা ওই উপজেলার বেড়জুড়া গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে জয়নাল মিয়াকে (২৩) আটক করা হয়েছে।
মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আখতার হোসেন বলেন, আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ট্রাকটির মালিক চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানার আইলদীপুরের আতাউর রহমান। ইব্রাহিম ট্রাকচালক ও ফজর হেলপার ছিলেন। গত ২১ জানুয়ারি ট্রাকটি ঢাকায় নিয়ে গেলে ইব্রাহিমকে বাদ দিয়ে নতুন চালক হিসেবে জাহাঙ্গীরকে নিযুক্ত করেন গাড়ির মালিক। জাহাঙ্গীরের বন্ধু ছিলেন রাজু। সে পেশায় কম্পিউটার অপারেটর ছিলো। পরদিন ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় গাজীপুর থেকে ট্রাকে রিকশার যন্ত্রাংশ নিয়ে সিলেটে আসার সময় সাবেক চালক ও রাজু নতুন চালকের সঙ্গী হন। পথে হবিগঞ্জের মাধবপুর আসার পর জাহাঙ্গীর ও রাজুকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়।
আটকদের বরাত দিয়ে ওসি আরও বলেন, হত্যার আগে ঘাতকরা চাকুর ভয় দেখিয়ে নিহতদের কাবু করে। এরপর শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়। এরপর গাড়ি চালায় ইব্রাহিম। গাড়িটি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার চণ্ডিপুলে এনে থামায় তারা। এরপর পরিকল্পনা করে মরদেহ দু’টি চালক ও হেলপারের সিটে বসিয়ে রাখা হয়।
গতকাল শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) গাড়ি থেকে মরদেহ দু’টি উদ্ধার করা হয়। দেহের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখে পুলিশ পরিকল্পিত হত্যার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। এ ঘটনায় নিহত রাজুর ভাই সুজন বাদী হয়ে আটক তিনজনের বিরুদ্ধে মোগলাবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জে সড়কের লালমাটিয়া এলাকায় ওই ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৪০৩০) ভেতর থেকে চালক জাহাঙ্গীর ও তার সহযোগীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতরা হলেন- চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা বাগদী গ্রামের মো. কাদেরের ছেলে জাহাঙ্গীর মিয়া (২৫) ও দীন মোহাম্মদের ছেলে রাজু আহমদ (২৫)।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন