ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ২০১৯ সালে দুর্নীতি সূচকে বাংলাদেশের স্কোর এবং অবস্থান উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার জরুরি।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে টিআইবি কার্যালয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) করা দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) প্রকাশ অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
সিপিআই অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ নিম্নক্রম অনুযায়ী ১০০ এর মধ্যে ২৬ স্কোর নিয়ে দুর্নীতিতে ১৪তম দেশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় এবং এশিয়ায় ৩১ দেশের মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে ইফতেখারুজ্জামান এটিকে ‘বিব্রতকর’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ পর্যন্ত দুর্নীতিতে শীর্ষে থাকলেও টিআইবির প্রত্যাশা ছিল দুর্নীতি দমনে বর্তমান সরকারের জিরো টলারেন্স ঘোষণার পর বাংলাদেশের অবস্থান আরও ভালোর দিকে যাবে। তবে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শুদ্ধাচার না থাকা, জবাবদিহিতার দিকে থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে রাখা, তথ্য অধিকার আইনসহ নানা কারণে বাংলাদেশের অবস্থানের কোনো উন্নতি হয়নি বলে মনে করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গত বছরে সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের একটা প্রভাব এই র্যাংকিংয়ে রয়েছে। সরকারের সংস্থাগুলোর জবাবদিহিতা আরও বাড়াতে হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শুদ্ধাচার নিয়ে আসতে হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনার সমালোচনা করে তিনি বলেন, তথ্য অধিকার আইন পরিপন্থী কাজ তারা করেছে। এর ফলে দুর্নীতি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্বজনপ্রীতি ও ভয়ের ঊর্ধ্বে থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা, সামাজিক পরিচয় ও অবস্থান বিবেচনা না করে দুর্নীতিগ্রস্তদের বিচারের আওতায় আনায় দুর্নীতি সুচকে বাংলাদেশের স্থিতিশীল থাকার বিষয়টিকে প্রধান্য দিয়েছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে সরকারকে আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন ও গবেষণা উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, উপদেষ্টা নির্বাহী ব্যবস্থাপনা পরিষদ ড. সুমাইয়া খায়ের ও রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
দুর্নীতি সূচকে উন্নতি করতে দুদক, জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে ও ব্যাংকিং সেক্টরে স্বচ্ছতা আনতে পরামর্শ দিয়েছে টিআইবি।
দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আইনিভাবে দুদক স্বাধীন। তবে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে দৃঢ় মানসিকতার ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর নয় তারা। ফলে তাদের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি রুখতে পারলে আমাদের জিডিপি ‘ডাবল ডিজিটে’ পৌঁছাত। বাংলাদেশ থেকে অর্থনৈতিকভাবে যোজন যোজন দূরত্বে অবস্থান করা পাকিস্তানও সিপিআইতে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। এর কারণ হিসেবে পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোতে সুশাসন রয়েছে বলে মন্তব্য করেন ইফতেখারুজ্জামান। সিপিআই ১৯-এ ৩২ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান নিম্ন ক্রম অনুযায়ী ৬০তম অবস্থানে রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন