রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও নিধনযজ্ঞের বিরুদ্ধে মামলার রায় পড়া চলছে। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় নেদারল্যান্ডের হেগে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) এই রায় পড়া চলছে।
আদালতের প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুলকোয়াই আহমেদ ইউসুফ এই অন্তর্বীকালীন এই রায় ঘোষণা করছেন।
১৭ বিচারক এই মামলার শুনানিতে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ১৫জন আন্তর্জাতিক বিচারিক আদলাতের নিজস্ব বিচারক। একজন করে বিচারক মনোনীত করেছে গাম্বিয়া ও মিয়ানমার। বিচারকদের প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন সোমালিয়ার নাগরিক আব্দুলকায়ি আহমেদ ইউসুফ। ভাইস-প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন চীনের শু হানচিন।
গত ১১ নভেম্বর গাম্বিয়ার বিচার বিষয়ক মন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল আবুবকর তামবাদু মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক আদালতে এ মামলা করেন। মামলায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকারের দীর্ঘ কয়েক দশকের জাতিগত বৈষম্য ও নিপীড়ন এবং ২০১৭ সালের সেনা অভিযানের পটভূমিতে গাম্বিয়া সুরক্ষা চাওয়া হয়।
প্রায় ৫০ পাতার ওই আবেদনে রোহিঙ্গারা রাখাইনে বর্বরোচিত হামলার শিকার হয়েছে এবং এর ফলে গণহত্যার মতো অপরাধ সংগঠিত হয়েছে এই বিষয়টি উল্লেখ করে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে গাম্বিয়া।
গত বছরের ডিসেম্বরের ১০-১২ তারিখ শুনানি হয়। উভয়পক্ষ শুনানিতে তাদের মতামত তুলে ধরেন। গাম্বিয়ার পক্ষে আদালতে প্রতিনিধি হলেন দেশটির আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল আবুবকর মারি তামবাদু এবং বিবাদী মিয়ানমারের পক্ষে দেশটির স্টেট কাউন্সেলর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চি।
ওই শুনানিতে রাখাইনে গণহত্যা হয়েছে বলে প্রাথমিক প্রমাণ উপস্থাপন করে গাম্বিয়া। বাদী দেশ গাম্বিয়া প্রশ্ন তুলেছে, ‘সন্ত্রাস দমনের কথা বলে রোহিঙ্গাদের ওপর চরম নির্যাতন করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গা শিশুরা কি সন্ত্রাসী ছিলো? অথচ তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। গর্ভবতী নারীদের পর্যন্ত ধর্ষণ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা নারীদের গণধর্ষণ করা হয়েছে। এগুলোকে কি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান বলে?’
সশস্ত্র সংগঠন আরসার হামলার কথা বলেছে মিয়ানমার। অথচ দেখা যাচ্ছে যে মিয়ানমার নিরাপত্তা চৌকিতে আরসার হামলার দুই সপ্তাহ আগে উত্তর রাখাইনে সেনা মোতায়েন করা হয়েছিলো বলে আদালতকে জানায় গাম্বিয়া।
গাম্বিয়ার এজেন্ট বলেন, ‘মিয়ানমার সেনারা প্রত্যেককেই নির্যাতন করেছে। তারা গর্ভবতী নারী ও ছোট শিশুদেরকেও নির্যাতন করেছে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘর ধ্বংস করা হয়েছে। সেখানে অন্য জাতি-গোষ্ঠীর লোকদের জন্যে ঘর বানানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জমি কেড়ে নিয়ে অন্যদের দেওয়া হয়েছে।’
পুনর্বাসন প্রক্রিয়া একটি প্রতারণা বলেও উল্লেখ্য করে গাম্বিয়া। দেশটির বলে, ‘স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি সে কথা ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি পর্যন্ত ব্যবহার করে না। পুনর্বাসন প্রক্রিয়া একটি প্রতারণা। মিয়ানমার কাউন্সিল স্বীকার করেছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কার্যকর নয়।’
তবে মিয়ানমারের দাবি, গণহত্যা হয়নি এ বিষয়টি তারা তাদের যুক্তিতর্কে উপস্থাপন করেনি। তাদের দাবি ছিল মামলাটি ভুল পদ্ধতিগতভাবে করা হয়েছে। এ মামলার বিচার করার অধিকার কোর্টের নেই বলেও মতামত তুলে ধরে তারা। মিয়ানমারের আইনজীবীরা শুনানিতে বলার চেষ্টা করেন গাম্বিয়ার এই মামলা করার কোনও অধিকার নাই।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন